
কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার গৌরিপুর বাজার এলাকা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় ম্যাগাজিনসহ বিদেশি পিস্তল, চাপাতি, চাকু, প্রিন্টার ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ২৪টি সিল ও জালিয়াতির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
আদমজীতে র্যাব-১১ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, গোয়েন্দা তথ্যে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দাউদকান্দির মো. ইদ্রিস মিয়া (৪৪), মুরাদনগর এলাকার ইউপি সদস্য মো. মমিনুল ইসলাম (৪৬), একই এলাকার আবু বক্কর সালাফী (৪৩) ও রুবেল (২৪)।
র্যাব জানায়, অভিযানে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে অস্ত্রসহ জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত অগ্রণী, ডাচ বাংলা, সোনালী, পূবালী, ইসলামী ব্যাংকের ২৪টি ভুয়া সিল, ১৬টি সোনালী ব্যাংকের ভুয়া ট্রানজেকশন ভাউচার, ২৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া এক্সপ্রেস মানি রিসিট ভাউচার, ২ পাতা এনসিসি ব্যাংকের ভুয়া পেমেন্ট সিলিপ, ১১ জনের ভুয়া এনআইডি এবং ১৬টি ভুয়া এনআইডি তৈরির ছবি উদ্ধার করা হয়।
তারা দীর্ঘদিন যাবত অভিনব কৌশলে ব্যাংকের ভাউচার জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। মো. ইদ্রিস এই জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা। তিনি এক ভারতীয় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে এ কৌশল শেখেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, নির্বাচিত ব্যাংকে প্রথমে বৈধভাবে তার পরিচিত লোক বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের নামে অল্প পরিমাণ টাকা পাঠায়। সেই টাকা উত্তোলনের জন্য তাকে একটি গোপন পিন নাম্বার দেওয়া হয়। ওই গোপন পিন নাম্বার নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক টাকা তোলার জন্য একটি ভাউচার তৈরি করে দেয়। পরে ওই ভাউচার দিয়ে টাকা উঠানোর আগে ইদ্রিস তার মোবাইলে ভাউচারের একটি ছবি তুলে রাখে। মোবাইলে ভাউচারের ছবি দিয়ে তার প্রিন্টারে নতুন নতুন ভাউচার তৈরি করে তাতে নতুন রেমিটেন্স নাম্বার বসিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর এবং বিভিন্ন এনআইডির স্বাক্ষর নকল করে গলাকাটা এনআইডি (এনআইডি’র ছবি পরিবর্তন) ব্যাংক এ জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে। সে এইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের চাঁদপুরের সাচার শাখা ও সোনালী ব্যাংকের রহিমা নগর শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের কুমিল্লার মুরাদনগর শাখা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাধবপুর শাখাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে।
ইদ্রিস মিয়া ২০১৮ সালে ১১ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বুড়িচং শাখায় বিদেশ থেকে পাঠানো গোপন নম্বরের টাকা জালিয়াতি করে তুলতে গিয়ে হাতেনাতে আটক হন। তাকে পুলিশে সোপর্দ করলে কিছু দিন কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে সক্রিয় থাকে। গ্রেফতারকৃত মমিনুল ইসলাম একজন ইউপি সদস্য। তিনি এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে গত ১ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছেন। গত ৪ মাস আগে চাঁদপুর অগ্রণী ব্যাংকের বাবুর হাট শাখায় ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে আটকের পর তার জেল হয়। ১৭ দিন জেল খেটে জামিনে আসার পর পুনরায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সক্রিয় হন। আবু বক্কর সালাফী ও রুবেল এই চক্রের অন্যতম সহযোগী সদস্য। এই চক্রটি ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির পাশাপাশি পেশাদার ছিনতাইকারী, ভাড়াটে ক্যাডার ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০২:২২ ২২০ বার পঠিত