
ফতুল্লায় মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ তুলেছেন হাসনাত জাহান রুনু নামে এক বিধবা নারী। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলে এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ওই বিধবা নারী রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অন্যদিকে এ ডাইংয়ের সাবেক ভাড়াটিয়া পক্ষ পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবী করেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক অবৈধভাবে অন্য এক ব্যাক্তিকে ডাইংটি ভাড়া দিয়েছেন। তবে তার বক্তব্যের সাপেক্ষে সাংবাদিকরা যথাযথ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক অর্ধ-সমাপ্ত রেখে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত জাহান রুনু জানান, সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কুতুবআইল এলাকায় এ আর নীট কম্পোজিট নামে একটি ডাইং কারখানা রয়েছে তার স্বামী মৃত মজিবুর রহমান সোহেলের নামে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার কারখানাটি শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেয়ার জন্য প্রথমে মৌখিক চুক্তি করেন।
পরে লিখিত চুক্তি করতে চাইলে বাচ্চু তাকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন এবং মাসিক ভাড়া দেয়া বন্ধ করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ভাড়া চাইতে গেলে ভাড়াটিয়া বাচ্চু তাকে মারধরও করে। এ ঘটনার কয়েকদিন পর হুমকির ভয়ে ও মানসিক যন্ত্রনায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মজিবুর রহমান সোহেল মারা যান।
স্বামীর মৃত্যুর পর আর্থিক সংকটের কারণে হাসনাত জাহান রুনু ভাড়াটে বাচ্চুকে বাদ দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জনির কাছে কারখানাটি নতুন করে ভাড়া দেন। অভিযুক্ত বাচ্চু অন্যজনের ১০টি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
তবে এ ঘটনা জানতে পেরে অভিযুক্ত বাচ্চু স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নতুন ভাড়াটে জনিকে ওই কারখানা পরিচালনায় বাধা দেয়াসহ বিধবা নারীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এ অবস্থায় নাবালক চারটি সন্তান নিয়ে ওই বিধবা নারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি ও সন্তানরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। একপ্রকার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হবার পথে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ওই বিধবা নারী ফতুল্লা থানা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কারো কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়েই তিনি চার সন্তানকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আরো জানান, শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আজকেও আসার সময় আমাকে এক আত্মীয়র মাধ্যমে হুমকি দয়ে। তিনি তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন,শ্যালক সুলতান স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় আমার ফ্যাক্টরিটি পুনরায় দখলের পায়তারা করছে।
তারা ষড়যন্ত্র হিসেবে আমার ও আমার বর্তমান বাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলাম জনিকে নিয়ে নানা অপপ্রচার করছে। এই অপপ্রচারে আমি, আমার পরিবার এবং বর্তমানে ভাড়াটিয়া জনি সামাজিকভাবে হেয় ও অপমানিত হচ্ছি। আমাদের পরিবার ও সন্তানেরা পথে তাদেও স্বাভাবিক চলাচল অনিরাপদ ও হুমকি মনে হচ্ছে।
এদিকে এর আগে পাল্টা অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযুক্ত শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন, শ্যালক সুলতান মাহমুদ ও মনিকা নামের আরেক আত্মীয়। তারা দাবী করেন, তারা এখনো কারখানার ভাড়াটিয়া।
তারা ভাড়া নেয়ার পর ডাইং ফ্যাক্টরির বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সমস্ত পাওনা শোধ করেছেন। কিন্তু তারা তাদের দাবীর সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।কারখানার ভাড়ার কোন বৈধ চুক্তিপত্র দেখাতে না পারায় সাংবাদিকেদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে কোন সদুত্তর দিতে না পেরে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই চলে যান তারা।
তাদের আত্মীয় জাকিয়া দাবী করেন ডাইং এর নতুন ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলাম জনি ভূমিদস্যু। জাকিয়াদের মোট ৭১ শতাংশ জমি জনি দখল করেছেন।
কিন্তু পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি স্বীকার করেন উল্লেখিত জমির মধ্যে ৪১ শতাংশ তারা আম মোক্তারনামার বলে মালিক হয়েছিলেন যেটি বর্তমানে বাতিল হয়ে গেছে আর বাকি ৩০ শতাংশ তারা মৌখিক বায়না করেছিলেন।
এও স্বীকার করেন যে, ঐ ৭১ শতাংশ জমির কোনটির-ই তারা মালিক না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের এক পর্যায়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। শেষে তারা সাংবাদিক সম্মেলন অসমাপ্ত রেখে চলে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৯:৪৪ ২৩১ বার পঠিত