
আগৈলঝাড়ায় দেড়শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিদের ডেকে ইউএনও নিজের লেখা বই কিনতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা করার জন্য ডাকা হয় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের। অভিযোগে জানা যায়, বাধ্যতামূলকভাবে প্রায় দেড় লাখ টাকার বই কিনতে বলা হয় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) বিকেলে উপজেলার শহীদ সুকান্ত আবদুল্লাহ হল রুমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলামের সভাপতিত্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে মুজিব বর্ষ পালনের নামে ওই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, সরকারি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সরদার আকবর আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন, থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আফজাল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায়, রফিকুল ইসলাম তালুকদার, শিক্ষা অফিসার সিরাজুল হক তালুকদার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলামসহ সরকারি কর্মকর্তা ও উপজেলার ১৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিগণ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলার ৩৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ, ৬টি স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ৬টি মাদরাসা, একটি ভোকেশনাল স্কুল, ৯৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। এসময় ইউএনও তার লেখা ‘প্রতিবিম্ব’ ও ‘দৈনন্দিন গল্প’ নামের ৫টি করে মোট ১০টি বই কিনতে শিক্ষকদের বাধ্য করেন। একটি বইয়ের দাম ধরা হয়েছে ১৫০ টাকা, অন্যটি ১৩০ টাকা। সে হিসেবে ১০টি বইর মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৪০০ টাকা। তবে শিক্ষকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে এক হাজার টাকায়।
নাম না প্রকাশের শর্তে বই কিনতে বাধ্য হওয়া একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, মুজিব বর্ষ পালনের সভা করতে এসেছি, হাজার টাকায় বই কিনতে নয়। ইউএনও’র নির্দেশনায় মানসম্মান আর চাকরির ভয়ে সহকর্মী, পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে অনেকেই বই কিনতে বাধ্য হয়েছেন। ওই দিন যারা নিতে পারেন নি তাদের পরে নিতে হবে। তারা অভিযোগে আরও বলেন, সরকারি সকল অফিস ও অডিটরিয়ামে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানানো বাধ্যতামূলক হলেও ওই অডিটরিয়ামে বছর পার হলেও কোনো ছবি দেখা যায়নি। নেই যার নামে করা অডিটরিয়াম শহীদ সুকান্ত আবদুল্লাহর কোনো ছবি! মূলত: বই কিনতে বাধ্য করতেই ইউএনও সভা ডেকেছিলেন।
না প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই সভায় আগৈলঝাড়ায় বইমেলা সম্পর্কে ইউএনও কোনো প্রস্তাব দেননি। তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্থানীয় এমপির বাসায় সরকারি উন্নয়ন কাজের জন্য দেখা করতে গিয়ে আকস্মিকভাবে এমপির কাছ থেকে বইমেলা করার অনুমতি নিয়ে নেন। নিজের লেখা বই বিক্রির জন্য ঘটা করে সরকারি খরচে আয়োজন করেন বইমেলার।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম শিক্ষকদের কাছে বাধ্যতামূলক বই বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষকদের আগ্রহ থাকলে সংগ্রহ করতে বলেছি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকরা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য ৬/৭শ বই নিয়েছেন। তাদের বই পৌঁছে দিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসে সরবরাহ করা হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষককে বই কিনতে বাধ্য করা হয় সেটা করেছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ছবি না টানানোর কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়নি। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতির ওপর ইউএনর’র বই বিক্রির দায় চাপানোর বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক সমিতির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ বলেন, ইউএনও তার লেখা বই যাদের পছন্দ হয় তাদের সংগ্রহ করতে বলেছিলেন। তার কথা অনুযায়ী শিক্ষকদের বই সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। মাধ্যমিক স্তরের কোনো শিক্ষককে বই কিনতে বাধ্য করা হয়নি। প্রাথমিক স্তরে কি হয়েছে তা জানিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৫:০৭ ১৯৯ বার পঠিত