রাণীনগরে বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে স্বচ্ছল দেড়শ পরিবার

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » রাণীনগরে বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে স্বচ্ছল দেড়শ পরিবার
রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৭



---নওগাঁর রাণীনগরে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা ডালি, টোপা, খলই সহ নানান ধরণের কৃষি ও গৃহস্থালী জিনিসপত্র তৈরি করে খুচরা ও পাইকারি বিক্রয়ের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করে স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছে উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ঋৃষিপাড়ার প্রায় দেড় শত পরিবার। এই পাড়ার মানুষের মূল পেশাই বাঁশ দিয়ে তৈরি রকমারি জাতের বাঁশের সামগ্রী। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে চলে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। ধরতে গেলে প্রায় সারা বছরই থাকে কাজের ব্যস্ততা। পরিবারের ছোট বড় সবাই মিলে বাঁশ দিয়ে তৈরিকৃত জিনিসপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। পৈতিক জমি-জমা তেমন না থাকলেও প্রতিদিন কাজ করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সাচ্ছন্দে সংসার চলছে বেশ ভালই।

প্রায় দেড় শত পরিবারের মধ্যে পৈতিক সূত্রে পাওয়া এই পেশায় বেছে নিয়েছে ওই পাড়ার প্রায় শত ভাগ মানুষ। পারিবারিক কাজের পাশাপাশি বাড়ির বউ-ঝি থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও লেখা-পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে বড়দের কাজে সহযোগীতা করতে করতে তারা এসমস্ত কাজে পারদর্শী হয়ে উঠে। ফলে তারা বাস্তব জীবনে গিয়ে চাকুরী বা ব্যবসা করতে না পারলেও বেকার হয়ে কাউকে বসে থাকতে হয় না। বরং পৈতিক পেশা ধরে রেখে বাঁচতে পারে।

সরেজমিন ওই পাড়াই গিয়ে দেখা যায়, সব পরিবারের ঘরের আনাসে-কানাসে বাঁশ ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ছড়াছড়ি। বাড়ির বারন্দাই ও উম্মুক্ত স্থানে যেখানে একটু ছায়া থাকে সেখানেই এক সাথে বসে বাঁশ হাতে ধারালো দা-বটি দিয়ে নিপুন হাতে তুলছে কেউ বাঁশের বেতি আবার কেউ তৈরি করছে ডালি, টোপা, কুলা, ধান রাখার ডোল, খলই সহ কৃষি এবং মৎস্য কাজে ব্যবহার করা হয় এমন নানান সামগ্রী। এই কাজে নিয়োজিত বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশেষ করে মহিলারা খোলা জায়গায় বেশ ভাগ সময় তারা দল বেধে বাঁশের সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।

এক সঙ্গে বসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরণের খোশ গল্প সহ মোবাইলে গান শোনা এমনকি কারো কারো বাড়ির বারন্দায় ডেশের সংযোগ নিয়ে টিভি দেখতে দেখতেও তারা বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে যাচ্ছে। কারিগররা জানান, এই পেশার সাথে জরিতদের বেশি ভাগ মানুষেরই মাঠে ধান ফলানোর মত চাষযোগ্য কোন জমি নেই। পৈতিক সূত্রে পাওয়া বসত ভিটার দুই এক কাঠা জমিই তাদের একমাত্র ভরসা। সংসার জীবনে এটাই তাদের পূর্বপুরুষদের হাতে ধারাবাহিক ভাবে এই পেশাই ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া চলানোর পাশাপাশি বেশ সাচ্ছন্দে চলছে তাদের সংসার।

ওই পাড়ার গৃহবধু লক্ষীরানী কাজের ফাঁকে তিনি বলেন, বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের কাজ কিছুই জানতাম না। স্বামীর বাড়িতে এসে সবার দেখা-দেখিতে ধীরে ধীরে এই কাজ শিখেছি। শুরুতে হাত-পা কেটে গিলেও এখন আর কোন অসুবিধা হয় না। দেড় শত টাকার একটি বাঁশে ছোট বড় মাঝারি ডালি তৈরি করে প্রায় ৬ শ’ টাকায় বিক্রয় হয়। মাছের এই মৌসুমে চাহিদা একটু বেশি থাকায় হাটে-বাজারে না গেলেও পাইকাররাই বাড়িতে এসে নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে যায়। তার আক্ষেপ সরকার যদি এই গরীব লোকদের ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিলে আরো বড় পরিসরে এই ব্যবসাটা করতে পারবো।

উপজেলা কাশিমপুর ঋৃষিপাড়া গ্রামের কারিগর শ্রী যুগি চন্দ্র প্রামানিক জানান, তাদের বাপ-দাদারা বাঁশ-বেতের কাজ করতো। এখন আমার পরিবারে স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৫ জনের সংসারে এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। আধুনিকতার উৎকর্সের ছোঁয়ায় বর্তমানে প্লাস্টিক ও এ্যালোমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারিত সামগ্রীর দাপটে বাঁশের তৈরি ডালি কুলা’র চাহিদার কিছুটা ভাটা পড়েছে। তার পরও এই এলাকায় ধান, সবজি ও মাছ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এগুলো বাজার জাত করতে ডালি, ঝুড়ি, কুলা, ডোল, খলই এর চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঁশের দাম পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের সামগ্রীর দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমাদের কোন লস হয় না।

২নং কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু জানান, কাশিমপুর ঋৃষিপাড়ার সব পরিবারই বাপ-দাদার আমল থেকে তারা বাঁশ-বেতের কাজ করেই সংসার চালায়। বেকার কেউ বসে না থেকে ছোট বড় সবাই মিলে বাঁশ দিয়ে নানা ধরণের সামগ্রী তৈরি করে বাজারে বিক্রয় করে যে রোজগার হয় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। তবে তাদের পুঁজির সংকট রয়েছে। সরকার যদি তাদেরকে স্থানীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অল্প সুদে ঋনের ব্যবস্থা করলে তারা আরোও স্বচ্ছল হয়ে উঠবে। প্রতিদিনের লাভে ইতিমধ্যেই অনেকেই স্বাবলম্ভী হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৩:০৫   ৫৪৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ