নারায়ণগঞ্জে এবার সপ্তাহের পাতা উল্টাতে লাশের পাহাড় ভেসে উঠে। সড়ক দুর্ঘটনায় একে একে ৩১টি লাশ ঝরেছে। এছাড়া লাশ উদ্ধার সহ বন্দুকযুদ্ধে আরো একজন নিহত হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া লাশের মিছিলের সচিত্র তুলে ধরা হল। এ সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ জন, একটি লাশ উদ্ধার ও বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়। ৫ মার্চ রূপগঞ্জে সুরভী নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাতে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার মনির হোসেনের ভাড়া বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। গৃহবধূর স্বামী জসিম উদ্দিন রানা পলাতক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাস রোধে হত্যা করা হয়েছে। ৬ মার্চ ভোরে ও ৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে দেশের চারটি জেলায় পৃথক প্রাণহানির ঘটনায় ১৮ জন মৃত্যুবরণ করেছে। সুনামগঞ্জে পাত্রী দেখতে যাওয়ার পথে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়। নিহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা মুসলিমপাড়া এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে আইএফসিআই ব্যাংকের কর্মচারী আব্বাস উদ্দিন (৫৫), তার ছেলে ইমন (২৫), ছোট ছেলে রাব্বি (২০), একই এলাকার আবুল গণি তালুকদারের ছেলে মো. খলিলুর রহমান (২৫), মুসলিমপাড়া কুসুমবাগ এলাকার মৃত গিয়াসউদ্দিনের মেয়ে সুমনা আক্তার (৩৫), একই এলাকার তোতা খানের ছেলে ইমরান (১৬), আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব (২৫), ঢাকা মতিঝিলের মজিবুর রহমানের স্ত্রী আসমা আক্তার (২৫), একই এলাকার হাজী মহসীন (৭০), বেলায়েত হোসেনের মেয়ে খাদিজা (৪)। আহতরা হলেন- আবুল হোসেন (৫৫), রফিক (৪০), নাদিম (৩৫)। এ দিন ভোরে নিহতরা মাইক্রোবাসযোগে পাত্রী দেখতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের দিরাই যাচ্ছিল। পথে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এসে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই ৮জন মারা যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৩টায় মারা যায় বেলায়েত হোসেনের মেয়ে খাদিজা। একই দিন ৫ মার্চ দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রামপুরা কালিসীমা এলাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী একটি মাইক্রোবাস ও সুনামগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসে থাকা ১০ যাত্রীর মধ্যে ৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত হন অপর ৪ যাত্রী। নিহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার মসলার ব্যবসায়ী নুরুল হকের ছেলে রিফাত (১৮), একই এলাকার রাজমিস্ত্রী তাওলাদ হোসেনের ছেলে ইমন (১৭), খোরশেদ আলমের ছেলে গাড়ি চালক সোহান (২২), নবীগঞ্জের দিলারবাড়ি এলাকার চায়ের দোকানি আবুল হোসেনের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী সাগর (২০), আবুল হোসেনের কর্মচারী শাহিন (১৬) ও আরেক কর্মচারী হারুন (৪২)। আহতরা হলেন- নবীগঞ্জের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার স্যানেটারি মিস্ত্রী আফজাল হোসেনের ছেলে বিজয় (১৯), একই এলাকার আবিদ (১৯), নবীগঞ্জের কদমতলী এলাকার শাহীন আহমেদ শান্ত (৩০) ও জিসান (২৪)। আহতদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
৬ মার্চ ভোর পাঁচটার দিকে ময়নসিংহের ভালুকা উপজেলার মেহরাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি বড় পিকআপের সঙ্গে মাছভর্তি আরেকটি ছোট পিকআপের সংঘর্ষে চালক রাজনসহ নিহত হন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী মো. আজিম। তিনি উপজেলার তালাশ কোর্ট এলাকার আবদুস সালামের ছেলে। ৫ মার্চ দিবাগত রাত একটার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ট্রাক চাপায় নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকাশ আহমেদ (২২) মারা যান। আশুলিয়ার শ্রীপুরের নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জে কর্মস্থলে আসছিলেন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আব্দুল মজিদের ছেলে আকাশ। ৫ মার্চ শহরে কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে রিকশার সংঘর্ষে শহিদুল ইসলাম (৪০) নামে চালক নিহত হয়েছে। সন্ধ্যায় নগর খানপুর এলাকায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। নিহত শহিদুল ইসলাম রংপুর পীরগঞ্জ থানার উল্লাগাড়ি এলাকার রহিজুদ্দিনের ছেলে। ৫ মার্চ রূপগঞ্জে বেপরোয়া লেগুনার ধাক্কায় প্রাণ গেল শফিকুল ইসলাম (২৫) নামে এক পোষাক শ্রমিকের। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ উপজেলার মৈকুলি বাসস্টান্ড এলাকায়। ঘটনার পর উপস্থিত উত্তেজিত জনতা লেগুনাটি আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়। নিহত পোষাক শ্রমিক শফিকুল ঐ এলাকার বি ব্রাদার্স গার্মেন্টের্স-এর চাকরিজীবি। ৩ মার্চ আড়াইহাজার উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল ছাত্রীসহ দুজন নিহত হয়েছে। উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখী ও বাগবাড়ী শিমুলতলি এলাকায় এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। রাতে সাড়ে ১০টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখীতে সিলেট গামী অনন্যা পরিবহনের একটি বাস নির্মাণ শ্রমিক জামাতুল্লাহকে (৫৫) বাগবাড়ী শিমুলতলি এলাকায় রাস্তায় কাজ করার সময় চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার বাড়ী নীলফামারী জেলার জলঢাকা থানার পিনাই গ্রামে। অপরদিকে একই দিনে বিকেল ৩টার দিকে একই সড়কের পাঁচরুখী এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় নাদিয়া (১১) নামে পাঁচরুখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে যাতায়াত পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয়। তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যার কলেজহ হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়। আড়াইহাজার থানা পুলিশ বাসটি থানায় আটক করেছে। নিহত নাদিয়া পাঁচরুখী গ্রামের মোঃ শাহ আলমের কন্যা। নিহত নাদিয়ার ঘাতক বাসটি আটক করতে পারেনি পুলিশ। কুয়াকাটা থেকে মেয়ের জন্য পুতির মালা আর এক জোড়া কানের দুল কিনেছিলেন শাহীন আলম। এসব নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন লাশ হয়ে। ১ মার্চ রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তার। কাশীপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন শাহীন আলম। আট ভাইবোনের মধ্যে শাহীন পাঁচ নম্বর। তার ছোট বোন পপি আক্তার জানান, শাহীনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে আবু হুরাইরা (১৫) ক্বওমী মাদরাসার ছাত্র এবং ছোট ছেলে আদরিব (৬) প্রথম শ্রেণির ছাত্র। ১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের যুবলীগ নেতা সহ ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গাছে ধাক্কা লেগে প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ওই পাঁচজন নিহত হন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ফরিদ শেখ (৩৫), কাশীপুরের দেওয়ানবাড়ি এলাকার ফতুল্লা থানার কাশিপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহিন আলম (৩৮), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মাসুদ শেখ, খোকন ও মান্নান। তবে খোকন ও মান্নানের ঠিকানা পাওয়া যায়নি। রূপগঞ্জে ট্রাক খাদে পড়ে চালক ও হেলপার নিহত হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারী রাতে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের স্বর্নখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটলেও পরের দিন ১ মার্চ তা প্রকাশ্যে আসে। নিহত ইমন (১৭) চারিতাল্লুক এলাকার মোস্তফা মিয়ার ছেলে ও একই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে ট্রাক চালক রাব্বী মিয়া (১৬)। নিহত ইমন সলিমউদ্দীন চৌধুরী বিশ^বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হানিফ মিয়া ওরফে শাহিন বিশ্বাস (৪৮) নামের একজন নিহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। সে মৃত বুদ্দিয়া উদ্দিনের ছেলে। ২৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে শেরে বাংলা নগরে এ বন্দুকযুদ্ধ হলেও পরেরদিন ১ মার্চ তা প্রকাশ্যে আসে। র্যাবের দাবি, হানিফ মিয়া ডাকাত দলের সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও ছয়টি গুলি পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৯:২০   ১৭৪ বার পঠিত