সাবিনা খাতুন এখনো দিব্বি ফুটবল খেলছেন। দেশের নারী ফুটবলের অন্যতম বিজ্ঞাপন সাতক্ষীরার এ গোলমেশিন। রাঙ্গামাটির সুইনু প্রু মারমা জাতীয় দলে সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৫ সালে। একই বছরে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন নারায়ণগঞ্জের আসিয়া খাতুন বিথী। রাঙ্গামাটির জয়া চাকমা ও নারায়ণগঞ্জের মাহমুদা আক্তার অনন্যা বুট তুলে রেখেছেন তারও আগে ২০১০ সালে। বাগেরহাটের মিরোনা তো গত বছরও ফুটবল খেলেছেন। দেশের নারী ফুটবলে অতি পরিচিত এই ৬ মুখ।
খেলা ছেড়ে দিলেও তারা ফুটবল ছাড়েননি। নিজেদের ফুটবলে জড়িয়ে রাখার নেশায় বেছে নিতে চাইছেন কোচিং পেশা। কেউ বিয়ে করে সংসার পেতেছেন, কেউ চাকুরি করছেন। কিন্তু সবার স্বপ্নটা গাঁথা একই সূতোয়। স্বপ্না দেশের নারী ফুটবলকে আরো এগিয়ে নিতে ভালো কোচ হওয়া। ২০১৩ সালে এক সঙ্গে ‘সি’ লাইসেন্স করেছেন। এক সঙ্গে করলেন ‘বি’ লাইসেন্স কোর্স। সাবিনা, জয়া, সুইনু, অনন্যা, বিথী আর মিরোনাই প্রথম বাংলাদেশি নারী যারা করলেন কোচিংয়ের ‘বি’ লাইসেন্স কোর্স। সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার অন্যন্য উদাহরণ এই ৬ ফুটবলার।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রাই তাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে কোচিংয়ে। কয়েকদিন আগে ১০ দিনব্যাপী যে ‘বি’ লাইসেন্স কোর্স হয়েছে বাফুফে ভবনে ছেলেদের সঙ্গে কোর্স করেছেন এই ৬ নারী। যাদের বয়স ২৩ থেকে ২৮ বছর। সবার ছোট সাবিনা খাতুন তো এখনো জাতীয় দলের প্রধান খেলোয়াড়। সর্বশেষ অধিনায়কও তিনি। দেশের পাশাপশি দেশের বাইরেও বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়েছেন তিনি। মালদ্বীপের ঘরোয়া ফুটবল খেলে সাড়া জাগিয়েছেন। এবার খেলতে যাচ্ছেন ভারতের ঘরোয়া ফুটবলে।
জয়া চাকমা একজন ভালো রেফারিও। বিকেএসপিতে চাকরি করা রাঙ্গামাটির ২৭ বছর বয়সী জয়া বাঁশি বাজিয়েছেন আন্তর্জাতিক ম্যাচেও। এখন তিনি কোচ হিসেবেও ক্যারিয়ার গড়তে চান। এ ৬ ফুটবলারের সবার বড় সুইনু প্রু মারমা। চাকরি করেন বাংলাদেশ আনসারে। বিথী, অনন্যা ও সাবিনা বিজেএমসির। মিরোনা বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীতে।
কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের নারীরা ফুটবল খেলবে তাও ছিল ভাবনার বাইরে। এখন নারী ফুটবলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। মেয়েদের ফুটবলের এই অগ্রযাত্রার কারণেই জয়া-সাবিনারা বেশি আগ্রহী কোচিংয়ে। তবে এটা ঠিক এখনো বাংলাদেশের নারী ফুটবল বেশির ভাগ জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ক্লাবগুলো এখনো নারী ফুটবলে আগ্রহী হয়ে উঠেনি। তাহলে এই কোচিং ক্যারিয়ারে ভবিষ্যত কী?
আসিয়া খাতুন বিথী মনে করছেন, ‘এখন দল কম থাকলেও আগামীতে বাড়বে। মেয়েদের বয়স ভিত্তিক দল বাড়ছে। ক্লাব টুর্নামেন্টও হবে। মেয়েদের ফুটবল ডেভেলপমেন্টের জন্য কোচিংয়েও ডেভেলপ করতে হবে। ভালো কোচ ছাড়া ভালো ফুটবলার তেরি সম্ভব নয়। তাই আমার চাই ভালো কোচ হতে।’
তবে কেবল কোর্স করলেই নয়, কাজের ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন বিথী ‘শেখার পর আমাদের কাজের মধ্যে থাকতে হবে। এটা মেয়েদের জন্য অন্য রকম চ্যালেঞ্জ। স্বাচ্ছন্দে কাজ করার পরিবেশও দরকার আছে। আমাদের বেশিরভাগ সময়ই কাজ করতে হয় ছেলেদের সঙ্গে।’ বিথী দেশের বাইরেও গিয়েও মেয়েদের ফুটবল শিখিয়েছেন। কোলকাতার সাহেব বাগান তরুণ সংঘে গিয়ে একাধিকবার সেখানকার মেয়েদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
দেশের মেয়েদের ফুটবল আলোকিত করার প্রধান কারিগর কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মেয়েদের কোচিং করে কী কাজের সুযোগ পাবেন সেভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ছোটন বলেন,‘আমরা যখন কোচিং শুরু করি তখনো কী তেমন সুযোগ ছিল? আসলে নারী আর পুরুষ বলতে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই কোচ। ছেলেরা মেয়েদের কোচিং করাতে পারলে মেয়েরাও পারবে ছেলেদের কোচিং করাতে। কাজ শিখলে কাজের সুযোগ আসবেই। আসলে কী পুরুষ, কী নারী সব ক্ষেত্রেই কোচিং ডেভেলপমেন্ট দরকার। ওরা যে কোচিংয়ে আসছে সে জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৬:৩২ ৩২১ বার পঠিত