সংকটে ‘পাশে নেই’ নারায়ণগঞ্জের পাঁচ এমপি !

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সংকটে ‘পাশে নেই’ নারায়ণগঞ্জের পাঁচ এমপি !
রবিবার, ২৯ মার্চ ২০২০



---

প্রানঘাতী করোনা ভাইরাসে স্তব্ধ পুরো বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর মিছিলে বাংলাদেশ থেকেও যোগ হয়েছে ৫টি প্রাণ। দেশে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে অসংখ্য মানুষ। দেশের এমন পরিস্থিতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকুরীজিবি এবং খেটে খাওয়া দিন মজুররা। করোনার প্রাদূর্ভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বাসা থেকেই বের হচ্ছেন না অনেকেই। বিশেষ করে হতদরিদ্র দিন মজুরদের সকল ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ থেকে দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। এরপর ১৯ মার্চ থেকে দেশে সকল ধরনের অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করে সরকার। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটায় ২৪ মার্চ থেকে রাষ্ট্রিয় ভাবে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। মাসের শেষের দিকে হঠাৎ কর্মপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পারিশ্রমিকও পায়নি চাকুরীজীবিরা। বিশেষ করে ভাটা পরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনায়। কেবল ফার্মেসী ও নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি-বাজার ছাড়া বন্ধ হয়ে পরে সকল শ্রেণির দোকান-পাট। একই সাথে কর্মহীন হয়ে পরেন অসংখ্য দিন মজুররা।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার কিছুটা এগিয়ে আসলেও চরম সংকটে থাকা অসহায়দের পাশে তেমন ভাবে দেখা যায়নি নারায়ণগঞ্জের এমপিদের। মুখে সচেতনতার বুলি ফুঁটিয়ে যেন মানবতা ও সাহায্যের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন তারা।

অন্যদিকে নিজ-নিজ আসনের সাংসদদের দিকেই যেন চেয়ে আছেন হতদরিদ্র বাসীন্দারা।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের (রূপগঞ্জ) সংসদ সদস্য ও পাট-বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), ২ আসনের (আড়াইহাজার) সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, ৩ আসনের (সোনারগাঁ) সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, ৪ আসনে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা সাংসদ শামীম এবং ৫ আসনে (সদর-বন্দর) রয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা সাংসদ সেলিম ওসমান।

এদের মধ্যে ৩ আসনে সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা ও ৪ আসনে সাংসদ শামীম ওসমান ব্যতিত অন্যদেরকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কোন অনুদান কিংবা ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে দেখা যায়নি।

তবে, সাংসদ খোঁকা ও শামীম ওসমানের প্রদত্ত ত্রান নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে চলছে সমালোচনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই দুই সাংসদ নিজ নিজ আসনে কিছু সংখ্যক দরিদ্রদের মাঝে মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। তবে দুটি আসনের বিপুল সংখ্যক দরিদ্র পরিবারের তুলনায় সেই অনুদান ছিলো খুবই সামান্য। যা হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার পেলেও অসংখ্য পরিবারই বঞ্চিত হয়েছেন। তাই অনেকেই ওই ত্রাণ সহযোগিতাকে ‘আইওয়াশ’ বা লোক দেখানো বলেও ইঙ্গিত করেছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের অধিনস্থ ফতুল্লা থানাধীন দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার জহির মিয়ার সাথে বলেন । ‘আমিই আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দিন মজুরে রাজমিস্ত্রীর সহযোগির কাজ করি। দিন এনে দিন খাই। কিন্তু গত ২৪ মার্চ থেকে কাজের সাইট বন্ধ আছে। কাজ নাই, তাই পকেটে টাকাও নাই। বাকি দিন গুলো হয়তো অনাহারেই কাটাতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই আসনের এমপি হচ্ছেন শামীম ওসমান। ভোটের সময় আমাদের দ্বারে দ্বারে এসে ভোট চেয়েছেন। ভালোবেসে তাকে ভোটও দিয়েছি। কিন্তু আজকে আমাদের এই করুণ সময়ে তার দেখা নেই। সুনেছি তিনি তার পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। কিন্তু তা আমার ভাগ্যে জুটেনি। জানতে পেরেছি, ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর বা আশপাশের এলাকাতেও সেই অনুদান পৌছায়নি।’

এদিকে, ৩ ও ৪ আসনে যৎ সামান্ন কিছু অনুদান দেয়া হলেও ১ আসনে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি, ২ আসনে নজরুল ইসলাম বাবু ও ৫ আসনে সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কোন অনুদানের খবর পাওয়া যায়নি। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বাসীন্দারা।

বিশেষ করে ১ আসনে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর এমপি’র দেখা মিলছে না দীর্ঘদিন ধরেই। একটি সূত্র জানিয়েছে, গোলাম দস্তগীর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু তার পক্ষ থেকে সহধর্মীনি পৌর মেয়র হাসিনা গাজী বা অন্যকেউ এখনও পর্যন্ত অসহায়দের পাশে দাঁড়ায়নি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় হতদরিদ্র বাসিন্দারা।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনেও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর পক্ষ থেকে কোন অনুদানের খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ থেকে আড়াইহাজার উপজেলাতেও দিন মজুরসহ চাকুরিজীবি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা চেয়ে আছেন এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সহায়তার দিকে।

আর নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের পক্ষ থেকেও তার নির্বাচনী এলাকায় কোন সহায়তা প্রদানের খবর পাওয়া যায়নি। এনিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আসনটির স্থানীয় বাসিন্দারা।

নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া এলাকার আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, ‘আমি খানপুর এলাকায় ফুটপাতে চা-পানের ব্যবসা করে আসছিলাম। সরকারের ঘোষনার ফলে গত ২৪ মার্চ থেকে আমার ব্যবসা বন্ধ রেখেছি। ঘরে চাউল নেই। শুনেছি সরকারের পক্ষ থেকে চাউল বিতরণ করা হবে। কিন্তু আমাদের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান সাহেবের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এখনও পর্যন্ত কোন সহযোগিতা প্রদান করা হয়নি। অথচ, অন্যান্য সময়ে তিনি দানের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তবে এই দুঃসময়ে তার নিরবতা কল্পনা করিনি।’

এবিষয়ে জানতে শনিবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় সাংসদ সেলিম ওসমানের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৪:৫০   ১৬৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ