
করোনার ভয়াবহ সংক্রমিত এলাকা নারায়ণগঞ্জ একমাত্র জেলা যেখানে আইএসপিআর লকডডাউন ঘোষনা করেছিলেন। ৮ এপ্রিল ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় গত ২৫ দিনে তেমন কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারেনি।
আর গত ২৬ এপ্রিল থেকে রপ্তানীমুখি কারখানাগুলো খুলে দেওয়া শুরু হলে তা আরোও অকার্যকর হয়ে আসে। আর এখনকার অবস্থা স্ব-চক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে আদৌ নারায়ণগঞ্জে অবরুদ্ধ অবস্থা আর কার্যকর নেই।
গত ২ মে বিকেলে আদমজী ইপিজেড অভ্যন্তরের কারখানাগুলো থেকে কাজ শেষে শ্রমিকেরা বের হয়ে আসার দৃশ্য দেখে এ প্রতিবেদকেরও ধারনা বদলে যায়। শ্রমিকেরা আতংকিত হয়ে বেড় হওয়ার সময় বলছে “আমরা মরলে তো অসুবিধা নাই”!
শিল্প পুলিশের হিসেব মতে আদমজী ইপিজেডে পোশাক ও অন্যান্য কারখানা মিলিয়ে চালু হয়েছে ২৫ টি কারখানা। এসব কারখানায় শ্রমিক আছে ৫০ হাজারের মত।
জেলা সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২৩৮ টি পোশাক কারখানাসহ ৩৭১টি কারখানা পুরোপুরি চালু হয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য সড়কে নেমেছে কয়েক হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারী চালিত রিক্সা। কারখানায় আসা-যাওয়ার পথে শ্রমিকের ছুটে চলা জনসমুদ্রের মতই দেখায়। স্বাস্থ্য বিধি মানার যে নির্দেশনা তারও কোন সুযোগ আর থাকছে না।
গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর বন্দর থানার রসুলবাগ এলাকায় এক নারী প্রথম জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। ২ এপ্রিল ওই এলাকার প্রায় একশত বাড়ী ঘিরে লকডডাউন করে উপজেলা প্রশাসন। এরপরই জেলায় করোনার প্রকোপ ব্যাপকভাবে প্রকাশ হতে শুরু করে।
এরপর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ আইইডিসিআর এর তালিকায় উঠে আসে। দেশের প্রথম একক জেলা হিসেবে আইএসপিআর নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডডাউন ঘোষনা করে। সরকারী কিছু অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর যাত্রীবাহি বাস বন্ধ রাখা ছাড়া সবই এখন প্রায় স্বাভাবিক ভাবেই চলছে !
এর আগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষনা করে মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে এ ছুটি অব্যাহত রাখা হয়েছে।
২২ মাচের্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষনা করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারী, আধা সরকারীসহ সারাদেশের সকল দপ্তরে (স্বাস্থ্যসেবা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ কিছু জরুরী সেবা ছাড়া) সাধারন ছুটি ঘোষনা করে। জনগণকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দেয়।
জরুরী প্রয়োজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেড় হতে নিষেদ করে। বাস, রেল, লঞ্চসহ সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারী দপ্তরগুলোর সাথে মিল রেখে পোশক কারখানাগুলোও ছুটি ঘোষনা করে। পরর্বতীতে আরো দুই দফা ছুটি বাড়িয়ে তা আগামী ১৬ মে পর্যন্ত করা হচ্ছে।
কিন্ত গত ৫ এপ্রিল গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে সারাদেশ থেকে চরম ভোগান্তি সয়ে নারায়ণগঞ্জে আসে হাজার হাজার শ্রমিক। সকালে কারখানার কাছাকাছি গিয়ে জানতে পারে ছুটি আবারো বাড়ানো হয়েছে। আবারো তারা ফিরে যায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মাঝেই।
নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে গিয়ে পথে পথে আইনশৃঙ্খলাবাহিণীর বাধা ও হেনস্থার মধ্যে পড়ে শ্রমিকেরা। এভাবে আসা-যাওয়ার মাঝে করোনার সংক্রমণ ছড়ায় পুরো দেশে। এদিকে সারাদেশে যখন করোনার সংক্রমণ উর্ধমুখি, এরই মধ্যে আবার গত ২৬ এপ্রিল থেকে রপ্তানীমুখি সব কারখানা খুলে দেওয়া হয় কিছু শর্তসাপেক্ষে।
নারায়ণগঞ্জে চালু হওয়া প্রায় সকল কারখানা আজ ৩ মে শ্রমিকে পরিপূর্ণ হওয়ার খবর পাওয়াগেছে। এতে শর্তগুলো প্রতিপালন হচ্ছে কি-না তা দেখার আর সুযোগ কারো থাকছে না বলে শ্রমিকেরা বলছেন। এরফলশ্রুতিতে কি ধরনের ভয়াবহ সংক্রমণ ছড়াতে পারে তা ভেবে নারায়ণগঞ্জের মানুষ আতংকিত।
উল্লেখ্য, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যকে ভিত্তি ধরে হিসাব করে দেখা গেছে, জেলায় ১০২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারাগেছেন ৪৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ ভাগের বেশী এবং মারা যাওয়াদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের বেশী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও সদর থানা এলাকার বাসিন্দা। শিল্প কারখানার সিংহভাগই এই এলাকায় অবস্থিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩০:৩৫ ২৩৮ বার পঠিত