প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও পাঠক ও দর্শকদের কাছে সঠিক খবরটি পৌঁছাতে আপসহীনভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিন মাঠে থেকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন।
বুধবার অনলাইনে এক ভিডিওবার্তায় দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম এমন মন্তব্য করেন।
কোভিড-১৯ রোগ বৈশ্বিক মহামারীর আকার নেয়ার পর নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হচ্ছে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের। অথচ এই বিরূপ পরিস্থিতিতেও তাদের সম্মুখসারিতে থেকেই লড়তে হচ্ছে।
এসব বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অদৃশ্য করোনার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ, এতে ঝুঁকি নিয়ে পেশাদারিত্ব বহাল রেখেই কাজ করে চলছেন সাংবাদিকরা। যদিও তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
ভিডিওবার্তায় সাইফুল আলম বলেন, করোনা বিশ্বব্যাপী যেভাবে আমাদের সভ্যতাকে আক্রান্ত করেছে, মানবজাতির স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস ও অর্থনীতি পর্যুদস্তু করে দিয়েছে, সেই জায়গায় বিশ্ব গণমাধ্যম থমকে যায়নি; বরং সাহসের সঙ্গে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে।
সংবাদকর্মীদের প্রতিকূলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, হয়তো প্রিন্ট মিডিয়া কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের কর্মীরা মাঠে আছেন। তারা সংবাদ সংগ্রহ করে দর্শক ও পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এদিক থেকে তারা আপসহীন।
‘আমরা জানি যে, এ কাজের মধ্যে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশেও একজন সাংবাদিক মারা গেছেন। ইতিমধ্যে বহু সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত। অনেককে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তাদের কেউ কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন, কেউ কেউ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।’
যুগান্তর সম্পাদক বলেন, এই যখন পরিস্থিতি, তখন গণমাধ্যমের মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া সংক্ষিপ্ত সংস্করণে প্রকাশ পাচ্ছে। দু-একটি পত্রিকা বন্ধও হয়ে গেছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
‘কিন্তু যারা দায়িত্ব পালন করছি, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই অগ্রসর হচ্ছি।’
সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় থাকা দরকার বলে জানিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি।
‘কারণ সংবাদকর্মীদের একেবারে খবরের উৎসমূলে যেতে হয়। মাঠে-ময়দানে ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা খবর সংগ্রহ করেন। মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকদের কাজ এড়ানোর সুযোগ নেই। কাজেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সেটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেমনই হতে হবে, তেমনই সরকারের পক্ষ থেকেও করা দরকার’।
করোনা প্রতিরোধে সামনে থেকে লড়াই করা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বহু সদস্য এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে সাইফুল আলম বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাঠে কাজ করতে, পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে, সংবাদ সংগ্রহ করতে এবং পাঠক ও দর্শকদের কাছে সংবাদ পৌঁছাতে নিরাপত্তাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এই জায়গাটা অর্থাৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে পেশাদারিত্বে কোনো কমতি কিংবা ঘাটতি হবে না বলে তিনি আশ্বাস দেন।
এর পরে করোনাপরবর্তী সময়ে নতুন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কেমন হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাইফুল আলম। তিনি বলেন, এটিই এখন বড় প্রশ্ন– হয়তো অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। অনেক অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।
‘এ মুহূর্তে আমরা জানি যে, পত্রিকায় অধিকাংশ কর্মীকে ছুটি দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ বাড়ি থেকে অফিস করছেন। অনলাইনের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী বাসায় বসে কাজ করছেন। কাজেই গণমাধ্যমের জন্য একটি অন্যরকম প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, একসময় নিউজরুম বলতে– যেরকম ‘হইচই হই-হুল্লোড়, উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রাণচাঞ্চল্য’ ফুটে উঠত, সেই অবস্থাটি এখন আর নেই। এখন মনে হচ্ছে, আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। কিন্তু এই ক্রান্তিকাল কেটে গেলে তখন কী হবে? সেই অবস্থাটিও আমরা চিন্তা করছি।
সাইফুল আলম বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এই মুহূর্তে ভালো নেই। কাজেই গণমাধ্যমকর্মীরাও ভালো নেই। সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩২:২৭ ১০৭ বার পঠিত