
দেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্টতই ঊর্ধ্বমুখী। পরীক্ষার সংখ্যা কম হলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও অপেক্ষাকৃত কম হচ্ছে—এটা লক্ষ করে সংক্রমণের ক্রম–ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, চলতি মে মাসের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ রোগীর মোট সংখ্যা আরও বেড়ে প্রায় ৫০ হাজারে উঠতে পারে।
তা যদি হয়, তাহলে আমাদের সামনে একসঙ্গে প্রচুরসংখ্যক কোভিড-১৯ রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জটি বড় হচ্ছে। যদিও প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবু হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, এমন রোগীর সংখ্যা চলতি মাসের শেষ নাগাদ ১৬ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অনুমান করছেন। কিন্তু একসঙ্গে এত রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আমাদের এখন পর্যন্ত নেই।
এই সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বড় অসুবিধা হলো এর রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয় অন্য সব ধরনের রোগীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে। তাদের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত হাসপাতালের প্রয়োজন হয়। সরকার এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৪টি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করেছে। এগুলোর মধ্যে ১০টিই রাজধানী ঢাকায়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশেও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চলছে। আর রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে বলে দুদিন আগে আরও তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকে এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে। এটা করার প্রয়োজন ছিল, কারণ কোভিড-১৯ রোগীর মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ঢাকার এবং তাদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কোভিড মোকাবিলায় যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ঢাকার বাইরেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায়।
তবে মোট রোগীর তুলনায় করোনা হাসপাতালগুলোর শয্যাসংখ্যা কম। শুধু তাই নয়, গুরুতর রোগীদের প্রাণ রক্ষার জন্য অপরিহার্য আইসিইউ ব্যবস্থা ও ভেন্টিলেটরের সংখ্যা আরও কম। কোনো কোনো করোনা হাসপাতালে এখন পর্যন্ত আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশের আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়—এই হিসাবে এ মাসের শেষ নাগাদ একসঙ্গে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ রোগীর জন্য এই দুটি জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত আমরা এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে সর্বশেষ খবরে জানা গেল, হাসপাতালগুলোর শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর কাজ চলছে। যেসব হাসপাতালে আইসিইউ ছিল না, সেগুলোতে তা স্থাপন করা হচ্ছে।
এসব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা থেকে বলা যায়, সামনের দিনগুলোতে আরও বেশিসংখ্যক হাসপাতালকে এ কাজে যুক্ত করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের দুটি ধারার বলে সরকার যেকোনো বেসরকারি হাসপাতালকে এ কাজে যুক্ত করতে পারে। তবে আইন প্রয়োগের চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই জাতীয় সংকট নিরসনে আরও বড় পরিসরে অংশ নেবে, সেটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৩:০৯ ১১৪ বার পঠিত