নারায়ণগঞ্জে পরিবহন চাঁদাবাজীর গডফাদার মোক্তার হোসেন !”

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » নারায়ণগঞ্জে পরিবহন চাঁদাবাজীর গডফাদার মোক্তার হোসেন !”
মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০



---

নারায়ণগঞ্জ পরিবহণের চাঁদাবাজি নিয়ে এবার সদর আসনের সংসদ সদস্য মুখ খোলার পর সোচ্চার হয়ে উঠেছে পরিবহণের বিশাল শ্রমিকদের সকলেই । গেলো ১০ মে রোববার সকাল ১০ টা থেকে টানা সন্দ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় প্রায় ৯০০ শ্রমিকের মাঝে ২০ কেজি করে চাউল প্রদানকালে ক্ষোভে ফেটে পরে হাজারো শ্রমিকদের সকলেই ।

এমন হাজারো শ্রমিকের ক্ষোভ প্রকাশের পর একজন শ্রমিক সকলের উদ্দেশে বলেন, নারায়ণগঞ্জের চাঁন্দাবাজদের মেইন লিডার ই তো মোক্তর হোসেন ! এই মোক্তার এখন কোথায় ? পরিবহণ খাতের চাঁদাবাজদের গডফাদার এই মোক্তার দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শামীম ওসমানের নাম ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা চান্দাবাজি করে যাচ্ছে । এই টাকা এখন কোথায় ?

এই পরিবহণ শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, আমি ২৫/৩০ বছর যাবৎ এই স্ট্যান্ডে ড্রাইভারী করি । প্রতিদিন আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা হারে চান্দা নেয় ! নিম্নে ১ হাজার শ্রমিক হলে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকা চান্দা শুধু শ্রমিকদের কছে থেকে । এরপর জিপি ফান্ডের নামে চান্দাবাজি, লং রোডের প্রতিটি কাউন্টারে মোক্তারের চাঁন্দাবাজি, বিভিন্নি রুটের গাড়ীর উপর চান্দাবাজি করে যাচ্ছে এই মোক্তার । তাকে কেউ কিছু কইতে পারতো না শুধু শামীম ওসমানের নাম ব্যবহার করতো বইল্লা ।

এ সময় শ্রমিকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের অনুদান পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ।

আমরা যে কথা এই কথা কইতাছি আপনাকে বিশ্বাস কইরা, যদি আমার নাম চান্দাবাজ মোক্তার জানতে পারে তয় আমার লাশও খুইজ্জা পাইবো না আমার পরিবার, এতোটাই ভয়ংকর মোক্তার চক্র। চান্দাবাজ মোক্তারের অন্যতম হোতা এক সময়ের পাত্তি মিস্ত্রি দিদার, লোকমান ও সোহেল বর্তমানে কোটি টাকার মালিক । পত্রিকায় এ নিয়ে বিশল নিউজ করছে বলেও স্ট্যান্ডে চাউর রয়েছে ।

যা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো :

নিউজ নারায়ণগঞ্জ :

নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকেরা যখন চরম কষ্টে তখনই তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এমপি সেলিম ওসমান। কিন্তু বিগত দিনে এ সেক্টর হতে দুইহাত ভরে কামানো নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে এ পরিবহন সেক্টরের মাফিয়া খ্যাত মোক্তার হোসেনকে পাশে পাচ্ছেন না শ্রমিকদের কেউ।

৯ মে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কলেজের মাঠ প্রাঙ্গনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের মাধ্যমে ২৭০০ পরিবারের মাঝে ৫৪ হাজার কেজি চাল বিতরণ করেন সেলিম ওসমান ।

ওই সময়ে শ্রমিকদের চাল বিতরণের সময়ে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান । তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা পরিবহনের সাথে জড়িত তারা একদিক থেকে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আজকে পরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষ আপনাদের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন । কিন্তু আমি হতবাক হয়েছি আপনারা গাড়িতে উঠার আগেই আপনাদের সমিতির নেতারা একটা চাঁদা আদায় করতেন শ্রমিকদের কল্যানের নামে। আজকে সেই বিশাল অংকের টাকা কোথায়? কেন আপনাদের পাশে তাঁরা দাড়ালেন না। যদি ঈদের আগে শ্রমিকদের সন্তষ্ট না করা হয় তাহলে এই বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর পরিবহন শ্রমিকদরে মাধ্যমেই পরিবহন গুলো পরিচালিত হবে। আর আপনারাও শহরের যেখানে সেখানে বাস গুলো রেখে সাধারণ মানুষের কষ্ট দিবেন না। প্রয়োজনে লিংক রুটে মাঠ ভাড়া নিয়ে সেখানে বাসগুলো রেখে পরিবহন পরিচালনা করবেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পরিবহন শ্রমিক, অটোরিকশা চালক, নৌকার মাঝি ও অসহায় নারী সহ মোট ২৭০০ পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে ৫৪ হাজার কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট তিন দফায় মোট ১৮ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে ২ লাখ ৩৪ হাজার কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।

বিতরণ করা ২৭০০ প্যাকেট মধ্যে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিকদের জন্য ৮০০ প্যাকেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি ও জেলা যুবসংহতির আহবায়ক রাজা হোসেন রাজু, নারায়ণগঞ্জ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ৪০০ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম রাফেল ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, খানপুর মেট্রোহল স্ট্যান্ডের জন্য ৩০০ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন ও শ্রমিক পার্টির আবু তাহের, বন্দর ঘাটের জন্য ২৭৫ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইমন ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, নবীগঞ্জ ঘাটের জন্য ৭৫ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পদাক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, অসহায় নারীদের জন্য ৭০০ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলা পার্টির নেত্রী পলি বেগমকে।

প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজী নতুন কিছু না। যদিও স্থানীয় পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীরা এটাকে অস্বীকার করে আসছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ী নেতা এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্যের পর সেই চাঁদাবাজীর বক্তব্য এবার সত্যে পরিণত হতে চলেছে। ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে সেলিম ওসমানের ওই বক্তব্য।

৯ মে শ্রমিকদের চাল বিতরণের সময়ে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা পরিবহনের সাথে জড়িত তারা একদিক থেকে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আজকে পরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষ আপনাদের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। কিন্তু আমি হতবাক হয়েছি আপনারা গাড়িতে উঠার আগেই আপনাদের সমিতির নেতারা একটা চাঁদা আদায় করতেন শ্রমিকদের কল্যানের নামে। আজকে সেই বিশাল অংকের টাকা কোথায়? কেন আপনাদের পাশে তাঁরা দাঁড়ালেন না। যদি ঈদের আগে শ্রমিকদের সন্তষ্ট না করা হয় তাহলে এই বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর পরিবহন শ্রমিকদরে মাধ্যমেই পরিবহনগুলো পরিচালিত হবে। আর আপনারাও শহরের যেখানে সেখানে বাস গুলো রেখে সাধারণ মানুষের কষ্ট দিবেন না। প্রয়োজনে লিংক রুটে মাঠ ভাড়া নিয়ে সেখানে বাসগুলো রেখে পরিবহন পরিচালনা করবেন।

জানা গেছে, দীর্ঘ এক যুগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে লাফিয়ে লাফিয়ে বাস ভাড়া দফায় বেড়েছে। প্রায় এক যুগ আগে ৮ টাকা থেকে শুরু করে দফায় দফায় বাস ভাড়া বাড়তে বাড়তে ৩৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ৪ গুণ বেশি ভাড়া বাড়লেও যাত্রী সেবার মান তলানিতে রয়েছে। বাড়তি বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে বছর দশেক আগে বাম দল নেতাদের সাথে মেয়র আইভী আন্দোলন করে বেশ আলোচনায় আসলেও আন্দোলন ফলপ্রসু হয়নি। এর ধীরে ধীরে বাস ভাড়া বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা ধীরে ধীরে চুপশে গেছে।

স্থানীয় পরিবহন নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘ বছর ধরেই ব্যাপক চাঁদাবাজী হয়ে আসছে। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের মদদে পরিবহন মালিক ও কতিপয় শ্রমিক নেতাদের ওই চাঁদাবাজী হয়ে আসছে। বার বার এসব চাঁদাবাজীর বিষয় প্রকাশ পেলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। আর যাতায়াতকারীরাও দেদারছে দিয়ে চলেছে অতিরিক্ত ভাড়া।

সেলিম ওসমান অনেককে ত্রাণ দিলেও গত কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও সবশেষ ১০ মে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে পরিবহন শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছে।

জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন পরিবহনের এখন নিয়ন্ত্রক হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের সভাপতি জুয়েল হোসেন। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোন অভিযোগ উঠেনি। কয়েক মাস হলো তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে ৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে এ পরিবহনে ছিলেন আইউব আলী। তিনি মূলত কাশীরপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সাইফউল্লাহ বাদলের অনুগামী। বাদল নিজেই তাকে বিনা ভোটে মেম্বার বানিয়ে পরে প্যানেল মেয়র বানিয়েছেন। উৎসব পরিবহনের নিয়ন্ত্রনে আছেন শহীদুল্লাহ। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে সাইনবোর্ড হয়ে শিমরাইল পর্যন্ত বন্ধু পরিবহনের নিয়ন্ত্রনে আছেন আশরাফ ও সুলতান। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে সোনারগাঁও পর্যন্ত বাধন পরিবহনে রয়েছেন মোক্তার হোসেন।

খোঁজ নিয়ে গেছে জানা গেছে উৎসব পরিবহন ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও স্থানীয় রুটে চলাচল করা সকল পরিবহনের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হলেন মোক্তার হোসেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি। তাঁর ইশারা ছাড়া কিছুই হয় না।

স্থানীয় পরিবহন সম্পৃক্ত শ্রমিক নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক কল্যাণ নামে চালক ও হেলপারদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে দৈনিক আদায় করা হতো। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় রাব্বানী, জিলানী সহ তাদের সহযোগিরা ওই চাঁদা আদায় করে থাকে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন ব্যবসায় অরাজকতা চলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে সময়ে সময়ে অভিযোগ করে বাস মালিকেরা। তবে সেই অভিযোগকারীকে পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বলতে গেলে অদৃশ্য কারণে সেই ব্যবসায়ী চুপসে যান। এমন হাজারো অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরর বিরুদ্ধে। এক ব্যবসায়ী সিটি বন্ধন পরিবহনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে থানায় অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পায়নি। হরিলুটের অভিযোগ করায় উল্টো ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়েছে।

আইউব আলী বন্ধনের চেয়ারম্যান থাকা সময়ে প্রতিদিন এই বন্ধন পরিবহনের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় অদৃশ্য কারো হাতে। এই অদৃশ্যকে খাতায় কলমে দেখানো হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য ব্যায় হিসেবে। প্রতিদিন এই খাতে পরিবহন সংস্থাটি দিয়ে থাকে ৭১ হাজার টাকা। যা অনেক সময় আয়ের তারতম্যে বেড়ে যায়।

জানা যায়, প্রতিদিন কাউন্টার থেকে আয় হয় ৪৬ হাজার টাকা। অফিস বাবদ খরচ হয় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। ম্যানেজমেন্ট ব্যয় হয় ৪১ হাজার টাকা, এনাদার ব্যায় দেখানো হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সব কিছু শেষে গাড়ির মালিক পায় ট্রিপ প্রতি ৭৭০ টাকা। দিনে ১০ ট্রিপ দিতে পারলে সেই গাড়ির মালিক পায় ৭ হাজার ৭ শত টাকা। এই হিসেবে বাস মালিকদের থেকে কয়েক গুণ বেশি আয় করে অদৃশ্যরা।

এই বন্ধন পরিবহনে রয়েছে ৫০টি বাস যার মালিক ৪২জন। ২০০৫ সালে শুরু হয় বন্ধন নাম দিয়ে ২০১৩ সালে অক্টোবর পর্যন্ত এর নিয়ন্ত্রণ কর্তা ছিলেন কয়েকজন। অবৈধ নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজী এবং লুটপাটের অভিযোগ তুলে বিলুপ্ত করা হয় বন্ধন। নতুন নামে আসে নিউ বন্ধন রূপে। তার আগে ৯৬ সালে বিএনপির ক্ষমতার সময় এই বন্ধন ছিল ডেভিডের ভাই তপনের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে এর নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছেন আইউব আলী। এমন অভিযোগ করেন আকরাম প্রধান নামের একজন বাস মালিক।

থানা অভিযোগে তিনি বলেন, আইউব আলী সংসদ সদস্যের এবং কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে থাকেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা বন্ধন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজী বন্ধ হলে ভাড়া আরো ৩টাকা কমিয়ে আনা যাবে। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বন্ধন বাস সার্ভিস লিমিটেডের বাস ২০০১ সাল থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল শুরু করে। শুরুতেই এ পরিবহনের বাস নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পরের দিন আইউব আলীর নেতৃত্বে অস্ত্রের মুখে বন্ধন পরিবহন জোর করে দখল করে। নেতৃত্বে ছিলেন শাহীন রেজা সানি, মোহম্মদ আইউব আলী, নাসির শেখ। তারা বিভিন্ন বাস মালিককে টেলিফোনে ডেকে এনে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং মালিকদের বন্ধন অফিস থেকে বের করে দেয়। ওই সময়ে বাস মালিকেরা কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। পরে ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে সে সময়ের জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে আলোচনার সাপেক্ষে তিনি বন্ধন বাস মালিকদের তার অফিসে যেতে বলেন। তখন খোকা বাস মালিকদের আশ্বস্ত করেছিলেন তাদের কোন ক্ষতি হবে না। ওই মাসের ১২ তারিখে বন্ধন পরিবহনের বাস মালিকেরা নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস শ্রমিক কমিটির সভাপতি শাহ জামাল এর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে বন্ধন পরিবহনের কয়েকজন পরিচালক আহত হয়। শুরু হয় দেদারছে চাঁদাবাজী। আইউব আলী গং প্রতিদিন ৩৫ হাজার টাকা করে নিতে থাকে।

ওই সময়ে মালিকদের একটি অংশ ব্যাপক আন্দোলন করলে বন্ধন পরিবহন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। আইউব আলীর নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় নিউ সিটি বন্ধন পরিবহন।

বন্ধন পরিবহনে প্রকৃত অর্থে কতটাকা আয় হয়েছে বাস মালিকেরা জানে না। এ সরকার আসার পর বাস মালিকেরা কোনদিন হিসেবের খাতা পত্র দেখতে পায়নি।

এর আগে উৎসব পরিবহন নিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজীর অভিযোগ তুলেছিলেন পরিবহনের প্রতিষ্ঠাতা কামাল মৃধা। তিনি বলেন, ‘২০০২ সালে জুলাইতে উৎসব কোম্পানীটি চালু হয়। তখনি ভাড়া দুই টাকা কমিয়ে ১০ টাকায় পরিচালনা করেছি। এর পর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন মামলা। যখন মামলা একের পর এক হতে থাকে তখনি আমি আর সামলিয়ে উঠতে পারি নাই। বাধ্য হয়ে বিদেশ চলে যাই। বিভিন্ন মামলায় ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ২০০৫ সালে আমার ভাগিনা কাজল মৃধাকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নিউইয়র্ক চলে যাই। বিদেশে থাকা অবস্থায় সকল মামলা শেষে দেশে ফিরে এসে কাজল মৃধাকে ব্যবসার হিসাব চাইলে সে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দিয়ে ভয় দেখায় এবং আমার ব্যবসার আয় থেকে দোকান, গাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি আমার নামে ক্রয় না করে নিজের নামে ক্রয় করে। পরবর্তীতে দেশে এসে দেখি আমার কোম্পানি দখল হয়ে গেছে। কামাল মৃধার দাবী করেন, এই ১৪ বছরে ৬০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে উৎসব থেকে। ওই সময়টাতে শহীদুল্লাহ ও কাজল সহ অন্যরা মিলে এ টাকাগুলো লোপাট করেছে।

এর আগে গত বছর এক অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজী কমে গেলে বাস ভাড়া কমে যাবে। ৩০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বাস ভাড়া করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের মতো কারও জন্যই বাস ভাড়া কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।

এর আগে ২০১৩ সালে পরিববহন সেক্টর নিয়ে ঘটে তুলকালাম কান্ড। তখন নারায়ণগঞ্জে একাধিক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয় চাঁদাবাজীর আদ্যোপান্ত।

ওই সময়ে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ হতে সোনারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করা বাঁধন পরিবহন থেকে গত ৫ বছরে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এ পরিবহনের বাস মালিকেরা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা বন্ধন, আনন্দ ও নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল রুটে চলাচল করা নসিব পরিবহনের বাস মালিকেরাও চাঁদাবাজীর অভিযোগ তুলেন।

তখন জানানো হয়েছিল, ৫ বছরে ৭ কোটি ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রভাবশালীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোর পূর্বক হাতিয়ে নিয়েছে। মোক্তার বাহিনী ৩০টি বাস হতে প্রতিদিন একশ টাকা করে নিয়ে মাসে ৯০ হাজার টাকা নিত। বাধন মালিক তহবিল থেকে বর্তমান সরকার আমলে মালিক পরিচালনার নাম করে তথাকথিত ভাতার নামে জাকির, ইসসান, টেগু পলাশ, দিদার, রওশন আলী, বেলায়েত, মোস্তফা কামাল, ড্রাইভার সুলতান প্রমুখ মোক্তার হোসেন বাহিনী প্রতিদিন ১৫ শ টাকা করে মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।

স্ট্যান্ডের শ্রমিক নেতা খাজা ইরফান, সামছুজ্জামানের নেতৃত্বে শ্রমিক কমিটির নাম ব্যবহার পূর্বক প্রতিদিন ৫শত টাকা হারে মাসে ১৫ হাজার টাকা নিত। শুধু তাই নয় খাজা ইরফানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক খাত দেখিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৭ শত টাকা হারে মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিত। ঐ সব চাঁদাবাজরা বর্তমানে সরকারের প্রায় পাঁচ বৎসরে মাসিক ১২ লাখ ৫২ হাজার ৫ শত টাকা করে মোট ৭ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়।

নসিব পরিবহনে বিগত ৪ বছর ৭ মাসে সাড়ে ৬ কোটি টাকা চাঁদাবাজীর অভিযোগ তোলেন পরিবহনটির পরিচালনা পর্ষদ। ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা বন্ধন পরিবহন থেকে গত সাড়ে ৪ বছরে ৭ কোটি ৯লাখ ৫২ হাজার ৫শ টাকা চাঁদাবাজী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

(মোক্তার হোসেন সহ পুরো চক্রের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ।)

বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৫:২০   ২৬৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ