
টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে শর্তসাপেক্ষে প্লেন ও গণপরিবহন চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার।৩১ মে থেকে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত চলাচল সীমিত করে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উক্ত সময়ে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।অভ্যন্তরীণ প্লেন চলাচলেও বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় প্লেন চলাচলের বিষয় বিবেচনা করবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন,৩১ মে থেকে সরকার গণপরিবহন চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে বিআরটিএ’র সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, গণপরিবহন পরিচালনায় যাত্রী,পরিবহন ও চালক-শ্রমিকদের সুরক্ষা সুনির্দিষ্টভাবে নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এছাড় যেন বিষাদে রূপ না নেয়, মালিক, শ্রমিক, যাত্রী সাধারণ সকলের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
শুক্রবার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসমূহকে নিয়ে বিআরটিএ’র সাথে মিটিং করে এসকল বিষয়ে চূড়ান্ত করতে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
লক্ষ্যণীয় যে,মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে।অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,সরকার গণপরিবহন চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এজন্য তিনি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে বিআরটিএ’র সাথে আলাপ আলোচনা মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় বলে আমাদের দেশের যাত্রী এবং গণপরিবহনকে আইন মানানো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।এদিকে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন চালু করতে বল্লেও এসবের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে।৪০ সিটের বাসে কতজন নেয়া যাবে,সে ক্ষেত্রে ভাড়া কি হবে,যাত্রীরা সিটিং ভাড়া দেবে নাকি বেশী ভাড়া গুণতে হবে এসবের কিছুই খোলসা হয়নি।সেটা জানার জন্য হয়তো বিআরটিএ’র সাথে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত কি হয় সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
একথা অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘ ৬৬দিন বন্ধের কারণে আয় বঞ্চিত থাকায় পরিবহনের শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষ বিশেষ করে শ্রমিক ভাইয়েরা এক অবর্ননীয় আর্থিক সংকটে পতিত। ফলে তাদের কাছে বেঁচে থাকাই এখন মূখ্য বিষয়।
সবচেয়ে বড় সত্য হলো রাজধানীর প্রায় সব রুটের বাস দৈনিক ইজারা ভিত্তিতে চলে।বাসের চালক বা কন্ডাকদার দিন শেষে মালিককে নির্দিষ্ট টাকা জমা দেবে এই শর্তে বাস রাস্তায় নামায়,ফলে গণপরিবহনগুলো মালিকের নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে স্ব-স্ব গণপরিবহনের শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।এতে করে মালিকের জমার টাকা উঠিয়ে তাদের পারিশ্রমিক তোলার প্রতি মনোযোগ থাকে বেশী।যেকারণে রাস্তায় অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা দেখা যায়। কার আগে কে বেশী যাত্রী উঠাবে, বেশী আয় করবে সে প্রতিযোগিতা চলে। উপরন্ত রয়েছে ঘাটে ঘাটে চাঁদা তোলার ব্যাপার। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষেও পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারনের জন্য আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মানানো এবং নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
এমতাবস্থায়, করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে কতিপয় সুপারিশ-
# মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে।
# নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যতিত যাত্রী ওঠা-নামা করানো যাবেনা।
# সকলকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
# যাত্রী ওঠা-নামার পর বাসের দরজা বন্ধ রাখতে হবে।
# যাত্রীর কাছ থেকে সরকার ঘোষিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না।
# প্রয়োজনে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন চালানো হোক।
লেখকঃ সাংবাদিক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক-নিরাপদ সড়ক চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১৭:০৭ ১০৪ বার পঠিত