
রাজধানীর দক্ষিণখানে চাঞ্চল্যকর হেলাল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ’র (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ২১ জুন, ২০২০ রবিবার সন্ধ্যায় গাবতলী বাসষ্টান্ড এলাকা থেকে এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত চার্লস রুপম সরকারকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।
এ সময় রুপমের হেফাজত হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো বটি, ছুরি, ডিস এন্টেনা তার ও ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
আজ (২২ জুন, ২০২০) ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিবি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আব্দুল বাতেন বিপিএম (সেবা), পিপিএম।
তিনি বলেন, গত ১৫ জুন ২০২০ তারিখে উত্তরার দক্ষিন খান এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় এক অজ্ঞাত যুবকের খন্ডিত ধড় এবং কোমর থেকে পায়ের অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। ফিঙ্গার ইম্প্রেশনের মাধ্যমে যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তিনি আরো জানান, তদন্তের একপর্যায়ে সিসিটিভির ফুটেজ, তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট দুইজন নারীকে শনাক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৭ জুন দক্ষিণখান থানা এলাকা হতে শনাক্তকৃত নারী রাশেদা আক্তার এবং মনি সরকারকে গ্রেফতার করে বিমান বন্দর জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে দক্ষিণখানের জামগড়া এলাকার একটি ডোবা সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে ভিকটিমের খন্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়। এই মহিলাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি মূল আসামি চার্লস রুপম সরকার কখন, কোথায়, কিভাবে ভিকটিমকে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় গুম করে রেখেছিল তা বিস্তারিতভাবে জানা যায় ।
ডিবি’র এই মুখপাত্র জানান, হত্যাকান্ডের পরে লুট করা টাকার অংশবিশেষ নিয়ে আত্মগোপনের যাওয়ার চেষ্টা করছিল রুপম।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত রুপমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পূর্ব পরিচিত ভিকটিম হেলালের কাছে অনেক টাকা পয়সা আছে ভেবে টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই সে এই হত্যাকান্ডটি করে। হত্যাকান্ডের দিন দুপুরবেলা ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে ভিকটিমকে ফটোস্ট্যাট মেশিন কিনতে যাওয়ার কথা বলে রুপম সরকারের বাসায় আসতে বলে। বাসায় আসার পর চার্লস রুপম সরকার এবং তার স্ত্রী মনি সরকার ভিকটিম বেলালকে চা পান করতে দেয়। চা তৈরি করার সময় রুপম সরকার চায়ের মধ্যে ঘুমের দুইটি বড়ি গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেয়। চা পানের এক পর্যায়ে ভিকটিম হেলাল ঘুমিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ডিস এন্টেনা তার ভিকটিমের গলায় পেচিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুই দিক থেকে টেনে ভিকটিম হেলালের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তিনি জানান, ভিকটিমকে হত্যার পর তার বিকাশ এবং নগদ একাউন্টে রক্ষিত টাকা থেকে ৪৩,০০০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। তার স্ত্রী মনি সরকারকে ৩০,০০০ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেয় শাশুড়ি রাশেদার কাছে। আর রুপম মৃত হেলালের লাশটিকে বাথরুমে নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করে রাতেই শপিং ব্যাগে করে খন্ডিত মাথাটি রেখে দেয় ভূঁইয়া কবরস্থান সংলগ্ন ডোবার ডাস্টবিনের মধ্যে। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টায় রুপম সরকার অটোরিকশায় করে লাশের অবশিষ্ট অংশ বস্তায় ভরে উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে আসে।
নিহত ভিকটিম হেলাল একজন কোরআনে হাফেজ এবং নারায়ণগঞ্জের একটা মাদ্রাসাতে ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে সে দক্ষিনখান এলাকায় ফ্লেক্সিলোড, মোবাইল কার্ড ক্রয়-বিক্রয় করতো। সম্প্রতি মোবাইল সিম, ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা কলম, স্টেশনারী এবং খেলনা সামগ্রী বিক্রয়ের ব্যবসা করে আসছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৬:১৫ ৯২ বার পঠিত