
রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
একই সঙ্গে খাল ও ড্রেনেজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের বিদ্যমান জনবল, ভৌত অবকাঠামো, আনুষঙ্গিক সব উপকরণসহ খাল হস্তান্তর করতে হবে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে এ প্রস্তাব দেন। কাউলায় সিভিল এভিয়েশন কবরস্থানের পাশে আশকোনা হজক্যাম্প থেকে সিভিল এভিয়েশন অফিসার্স কোয়ার্টার হয়ে বনরূপা হাউজিং পর্যন্ত খালের খননকাজ উদ্বোধন করা হয়।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল আরও বলেন, খালগুলো জেলা প্রশাসনের অধীনে এবং পানি নির্গমণসহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা শুনতে হয় সিটি কর্পোরেশনকে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়র ও কাউন্সিলরদের জবাবদিহি করতে হয়। ওয়াসাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। এ অবস্থায় নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে তিনি ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের বিদ্যমান জনবল, যানবাহন-যন্ত্রপাতি, আনুষঙ্গিক সব উপকরণসহ খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, ২১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আমরা আশকোনা হজক্যাম্প সংলগ্ন জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। উত্তরা ৪নং সেক্টরের একাংশ, কসাইবাড়ি, আশকোনা, কাউলা এলাকার তীব্র জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আশকোনা হজক্যাম্প থেকে বনরূপা আবাসিক এলাকা পর্যন্ত খালটির বিভিন্ন জায়গায় খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় উভয় সংস্থা অপারগতা প্রকাশ করে।
কাউলা এলাকায় ডিএনসিসির খাল খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের সব খাল সংস্কার করে পর্যায়ক্রমে হাতিরঝিলের আদলে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। এছাড়া ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন নদ-নদী দখলমুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের খালগুলোকে একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ করিয়ে এগুলোকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারলে ঢাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
তাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশের উন্নয়নে যৌক্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য যে কোনো নতুন প্রকল্প নিয়ে এলে তার মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।
উল্লেখ্য, কাউলা সিভিল এভিয়েশন থেকে খিলক্ষেত বনরূপা হাউজিং এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রায় ১ দশমিক ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খননের জন্য ডিএনসিসি এবং সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। খালের খনন কাজ ২০২০ সালের ৩০ মে শুরু হয়। ২০২০ সালের ২৭ জুন খনন শেষ হয়। ডিএনসিসি সীমিত জনবল এবং যানবাহন-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং সেনাবাহিনী ১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারসহ মোট ১ দশমিক ৯০ কিলোমিটার খাল খনন করে।
খালটি খননের ফলে উত্তরা ৪নং সেক্টরের একাংশ, কসাইবাড়ী, আশকোনা, কাউলাসহ আশপাশ এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে দূর হবে। খাল খননের জন্য সেনাবাহিনীকে ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে ৫০ ভাগ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি। তার প্রমাণ এ খাল উদ্বোধন। ৩০ মে কাজ শুরুর সময় আমরা বলেছিলাম ২১ দিন সময় প্রয়োজন, কিন্তু বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত সাত দিন সময় বেশি লেগেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৩:০৫ ৮৪ বার পঠিত