স্টাফ রিপোর্টার : আবারো নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর সেই ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতন, ভয়ভীতি, মামলা হামলা দিয়ে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ আরো ৯৫ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত সেই ৩ কর্মকর্তা হলেন- ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান, ওসি (তদন্ত) মাজহার ও উপ- পরিদর্শক (এসআই) মফিজ।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলের সাবেক কর্মচারী নাসির এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নাসির উদ্দিন বলেন- ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান, ওসি (তদন্ত) মাজহার ও উপ- পরিদর্শক (এসআই) মফিজ তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন করে আরও ৯৫ লক্ষ টাকা আদায়ের জন্য মুচলেকা ও চেকে স্বাক্ষর নিয়েছে। পরবর্তীতে জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলের ৬ কোটি টাকার চুরির মামলায় তাকে আসামী করে।
নাসির উদ্দিন আরো জানান, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তিনি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যান। গত ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরলে বিমানবন্দরের সামনে রাস্তা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন তাকে জোর করে গাড়িতে তুলেই চোখ বেঁধে ফেলে।
গভীর রাতে তার চোখের বাঁধন খুললে তিনি বুঝতে পারেন তাকে ফতুল্লা থানায় আটকে রাখা হয়েছে। টানা দুই দিন থানায় আটক রাখার পর ৭ জানুয়ারি বিএনপি নেতা শাহ আলমের মালিকানাধীন জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ৬ কোটি টাকা চুরির মামলায় তাকে আদালতে পাঠায়।
প্রথমে ৩ দিনের রিমান্ডে এনে অনেক নির্যাতন করে পুলিশ। এভাবে দফায় দফায় মোট ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি দাবি করেন, তিনি শাহ আলমের কোম্পানিতে চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর চুরির মামলা দেয়া হয়। ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম তাঁর মোবাইল ফোন, চেক বই ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
তার ভাগ্নে তার খোঁজ নিতে ডিবি কার্যালয়ে গেলে তাকে আটকে রেখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে নগদ ৬ লাখ টাকা তুলে নেন মাজহার। এরপর ২৪ জানুয়ারি তাকে ডিবির হাজতখানা থেকে বের করে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে আরো ১০ লাখ টাকা তুলে নেন ডিবির ওই কর্মকর্তা।
এখন পর্যন্ত ডিবি অফিসার মাজহার, মাহবুব ও মফিজ তাঁর বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া একটি হলফনামায় দুই দিনের মধ্যে ২০ লাখ, ১৫ দিনের মধ্যে ২৫ লাখ ও পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য থাকিব লিখে, তার স্বাক্ষর ও ৮টি ব্যাংক চেকে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
তিনি জামিনে থাকলেও ডিবি পুলিশের ওই সদস্যরা তাকে অব্যাহত হুমকি দিয়ে বলছে, এ ব্যাপারে মুখ খুললে পরিণতি আরো খারাপ হবে।
এদিকে এ বিষয়ে ডিবির পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে, পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক জানান, নাসির উদ্দিনের নামে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোম্পানির মালিক অর্থ আত্মসাতের মামলা করায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। তবে এর বাইরে তার ওপর কোনো অন্যায় আচরণ হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:২৫ ৫৩৩ বার পঠিত