![]()
পটুয়াখালী শহরে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো। ওইসব কিশোর গ্যাং শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাদের শক্তির মহড়াও প্রদর্শন করে চলছে এবং ইতোমধ্যে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পানামা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে মো. এনামুল হক মুন্না ও নিবির দাস গুপ্তা নামে দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করা হয়েছে। এর মধ্যে মুন্না পটুয়াখালীর আবদুল করিম মৃধা (একেএম) কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং নিবির দাস গুপ্তা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরর শিক্ষার্থী। এই দুই শিক্ষার্থীকে কোপানোর সেই দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। এতে শহরবাসী আতঙ্কগ্রস্ত এবং অভিভাবক মহল তাদের কিশোর সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছে। শহরে কিশোর গ্যাংয়ের এই মহড়া এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানিয়েছে শহরের সচেতন মহল।
এদিকে অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রোববার (২৬ জুলাই) মধ্যরাতে বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে পলাতক অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং এদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে র্যাব-৮ পটুয়াখালী র্যাবের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার ইফতেখারুজ্জামান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে মো. রিফাত, আরমান, বিজন ও সাইদুর রহমান। এরা গত ২২ জুলাই পটুয়াখালীতে প্রকাশ্যে এনামুল হক মুন্না ও নিবির দাস গুপ্তা নামে দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করার মামলার আসামি এবং সদর রোড (শিশু পার্ক এলাকা), সবুজবাগ, শিমুলবাগ এলাকার কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান সদস্য। এনিয়ে ওই মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের মোট পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে শহরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে এবং মাদক, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, ছিনতাই বন্ধসহ কিশোর গ্যাংদের নানাবিধ অপরাধ দমনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
‘পটুয়াখালী তরুণ প্রজন্ম’ নামে ব্যানারে আজ সোমবার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পটুয়াখালী শহরকে মাদকমুক্ত, ইভটিজিংমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজিমুক্ত এবং কিশোর গ্যাং গ্রুপমুক্ত শহর গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের এ আন্দোলন শুরু এবং সফল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। এ কর্মসূচিতে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
জানা গেছে, পটুয়াখালী শহরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবে, ২০২০ সাল শুরুর পর থেকে কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোর তৎপরতা আর আগের মতো দেখা যায়নি। কিন্তু জুলাই মাসের শুরু থেকে কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো ফের সক্রিয় ওয়ে ওঠে। এরই অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই দুপুরে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় পানামা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ও ভেতরে মুন্না ও নিবির দাসকে কোপানোর দৃশ্য সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে শহরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।
এদিকে আহত এনামুল হক মুন্নার মা সাহিদা বেগম বাদী হয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ১১ জনকে এজাহারভুক্তসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামী করা হয়। এসব আসামীদের মধ্যে রয়েছে, মো. সবুর (২৭), মো. রিফাত (২৭) মো. সিফাত (২২), মো. আরমান (২৪), বিজন (২২), মো. হৃদয় (২২), মো. পুলক (২৩), মো. রতন (২৪), সাদাত (২৩), মো. জুয়েল (২১) ও সাজিন (২১)। এদের মধ্যে একমাত্র সাজিনকে (২১) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
আহত এনামুল হক মুন্নার মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘২২ জুলাই সকালের নিবির দাস গুপ্তার হাতের ব্যথার এক্সরে করতে তার সঙ্গে আমার ছেলে এনামুল হক মুন্না ও মো. নাসিব পানামা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যায়। এ সময় থানাপাড়া, সদর রোড, শিশুপার্ক, শিমুলবাগ, সবুজবাগ এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপ দেশিয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পানামা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে যায় এবং নাসিবের ওপর হামলা চালায়। এসময় নাসিব দৌঁড়ে পানামা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দোতলায় উঠে গেলেও ওইসব সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাংরা আমার ছেলে মুন্না ও নিবির দাসকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে। যেভাবে আমার ছেলেকে কুপিয়েছে তাতে আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে কুপিয়ে জখম করেছে ওরা। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। এখনও আমার ছেলের অবস্থা খুব ভালো না। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। এখানের চিকিৎসকরা ওকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলছে। ঈদের পর ওকে ঢাকায় নিয়ে যাবো’।
এব্যাপারে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ জানান, এ ঘটনায় শাহিদা বেগম বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনের নামে মামলা করেছে। ইতোমধ্যে সাজিন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যান্য আসামীসহ কিশোর গ্যাংদের গ্রেপ্তারের জন্য পটুয়াখালী, বরিশাল ও বরগুনার সম্ভাব্য স্থানসমুহে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি আজ-কালের মধ্যে ভাল একটা রেজাল্ট দিতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:৩৮ ১২৪ বার পঠিত