
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছদ্মবেশে প্রকাশ্যে উঠিয়ে নিয়ে টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়ার কৌশল নিয়েছে অপরাধীরা। রাজধানীর বুকেই ঘটছে এমন ঘটনা। অবস্থা বেগতিক দেখলে ভুক্তভোগীদের হত্যা করে নির্জন স্থানে ফেলে দেয় তারা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া ব্যক্তিরাই তাদের প্রধান টার্গেট। এরই মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ সংঘবদ্ধ চক্রের বেশ কয়েক সদস্যকে আটক করেছে।
রাজধানীর ব্যস্ততম বাড্ডা এলাকার একটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখা যায়, দিনে দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা বেশ কয়েকজন একটি বাস থামিয়ে তল্লাশি করছে। কিছুক্ষণ পর বাস থেকে এক ব্যক্তিকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনা হয়। পাশে থাকা মাইক্রোবাসে তাকে নিয়ে সটকে পড়ে মুহূর্তেই। দেখে বোঝার উপায় নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পড়ে একদল অপরাধী ঐ ব্যাকটিকে অপহরণ করেছে।
আরেক ঘটনায় মতিঝিল ব্যাংক-পাড়া থেকে অপহরণ করা হয় বাইঙ হাউজ কর্মকর্তা সুলতান হোসেনকে। ব্যাগে টাকা আছে এমন সন্দেহে তাকে উঠিয়ে নিলেও তার কাছে মূল্যবান কিছু ছিল না। পরে মানিকগঞ্জে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা জালে এমনই এক অপরাধী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অ্যাম্বুলেন্স চালক পরিচয়ের সুমন নাম লেখায় অন্ধকার জগতে। রাজধানীতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপহরণ-ডাকাতি করে আসছিল সে।
ডাকাত দলের সদস্য সুমন জানান, হঠাৎ ব্যাংক থেকে একজন লোক বের হয় তারা সোর্সের মাধ্যমে একটা খবর পেয়েছে বলে ওই লোকটাকে তুলে নিয়ে যায় এবং ২ লাখ টাকা পায়। সুলতান আমাকে নিয়ে আসে, তার সাথে ডিউটি শুরু করি। একটা লোককে তুলে নিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাই সুলতান আমাকে ১২ হাজার টাকা বিদায় করে দেয়।
চক্রের মূল হোতা আকবর জানায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া ব্যক্তিরাই তাদের প্রধান টার্গেট।
প্রতারক একজন জানান, একটা লোক ডলার এবং টাকা নিয়ে নামলে তাকে র্যাবের পরিচয়ে গাড়িতে তুলে নিয়েছি। ওই লোক চিল্লাচিল্লি করায় তাকে আমি এবং ফরহাদ গলায় গামছা দিয়ে টান দিই লোকটা সেখানেই মারা যায়।
আকবর নামের এক প্রতারক জানান, এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টা কাজ সে করেছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছে চারবার।
পুলিশ জানায়, এই চক্রের সদস্যরা পেশাদার অপরাধী। নানা অপরাধে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও অপকর্মে জড়ায় তারা।
ডিবির ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, ঢাকা শহরে বা বিভিন্ন জায়গায় একাধিক চক্রে কাজ করে তারা। প্রকাশ্যে রাজপথে গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে নিয়ে চলে আসে। সবাই মনে করে এরা র্যাবের, ডিবি পুলিশের সদস্য। কারণ তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা, তাদের কাছে অস্ত্র, ওয়্যারলেস আছে। একদিক দিয়ে মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমিয়ে দিয়েছে। এটা শুধু ঢাকাতেই না তারা এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকেগুলোকে এক ধরনের ব্লাকমেইল করেন। তাদের পরিচয়টাকে ব্যবহার করে মানুষের সবকিছু ছিনিয়ে নেন।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তোলার সময় আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেয়ার অনুরোধ জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:১৫ ৮৫ বার পঠিত