
আত্মঘাতী হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী। করোনা প্রতিরোধে ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই যত্রতত্র ফেলায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। শুরুতে রাজধানীর ২ সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসম্মত কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু এখন এদিকে নজর নেই। সচেতন নন নগরবাসীও। ফলে করোনার সংক্রমণ যে কোনো সময় ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা প্রতিরোধে রাস্তায় নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু ব্যবহৃত মাস্ক বা অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী ফেলার নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ব্যবহৃত মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, চশমা, সু কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড বা গাউনসহ সুরক্ষাসামগ্রী ফুটপাতসহ নগরীর অলিতে-গলিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোতেও করোনা বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। ফলে হাসপাতালের সামনে বা গেটের পাশে বেশি চোখে পড়ছে এসব সামগ্রী। যা থেকে বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি। নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
তিনটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন ২০৬ দশমিক ২১ টন করোনা বর্জ্য হচ্ছে। ৪৯ শতাংশের বেশি নগরবাসী অন্যান্য বর্জ্যরে সঙ্গে করোনা বর্জ্য রাখে এবং সিটি করপোরেশনের কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি দ্রুত সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাগুলোকে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে হবে। ধরনভেদে প্রতিটি বর্জ্য তার উৎসেই আলাদা করার ব্যবস্থা নেয়া, আলাদাভাবে সংগ্রহ, পরিবহন, ডাম্পিং ও ধ্বংস করার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাও।
সূত্রমতে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজধানীতে ৫০০ হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ছাড়া অন্য কোথাও আধুনিক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সলিউশন নেই। তবে এখানে করোনা চিকিৎসা হয় না। এর আগে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি হাসপাতালে ইনসিনারেটর মেশিনের মাধ্যমে এসব বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও প্রায় অকেজো। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে এ ধরনের বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে হাসপাতালগুলো থেকে ময়লা নিয়ে কোথাও মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। কোথাও ফেলে দেয়া হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। কোথাও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বাতাস বিষাক্ত করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সংক্রমণের শঙ্কা।
মাস্ক কিংবা গ্লাভসের দেখা মিলবে না নগরের এমন কোনো সড়ক পাওয়া দায়। পিপিইর মতো সংবেদনশীল সুরক্ষাসামগ্রীও ফেলে রাখা হয়েছে। এখান থেকে পেশাদার পরিচ্ছন্ন কর্মীর বাইরে থাকা প্রায় ৪০ হাজার টোকাই এসব বর্জ্য থেকে বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন লোকাল মাকের্টে। ফলে মনিটরিংয়ের আওতার বাইরে থাকা এসব টোকাইরাও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এছাড়া ব্যবহৃত সামগ্রী থেকে বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৮:০০ ৮৬ বার পঠিত