এই ঝড় থামাবে কে?

প্রথম পাতা » অন্যান্য সংবাদ » এই ঝড় থামাবে কে?
বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭



------সম্প্রতি দেশবরেণ্য পরিচালক-প্রযোজক, গীতিকার, সংগীতশিল্পী, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা খান আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ ও তার অমরসৃষ্টি ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিকে নেগেটিভ মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী অভিবাসীদের এক সমাবেশে প্রশ্নোত্তরপর্বে এমন অশালীন মন্তব্য করেন। তার এমন মন্তব্যের পর পরই ফুঁসে উঠেছে চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ অনেকেই।

এফডিসিতে চলছে বাচ্চুর বিরুদ্ধে সমালোচনা। তারা এমন মন্তব্যকে দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র হিসেবেই বিবেচনা করছেন, যা কেবল দেশদ্রোহীরাই করতে পারেন। এদের মধ্যে ওই ছবির রচয়িতা খ্যাতিমান পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও সাহিত্যিক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এটা ধৃষ্টতা আর ষড়যন্ত্র ছাড়া কী হতে পারে। একজন খান আতা বছর বছর জন্ম নেয় না। কিন্তু বাচ্চুরা বছর বছর জন্ম নেয়।

আবার অকালে ঝরে যায়। কিন্তু আতারা মহীরুহের মতোই শত ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময় পার করেও টিকে থাকে। কারণ তার মতো গুণীকে শ্রেষ্ঠ হতে রাজনীতি করতে হয় না বরং রাজনীতি তাদের মতো মানুষদের ঘিরে আবর্তিত হয়। তারা ইতিহাস সৃষ্টি করে অমর হয়ে আছেন। আর এমন এক লোকের বিরুদ্ধে বাচ্চু নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা বস্তিবাসীর ভাষাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা দুঃখজনক। আতা ভাইয়ের মৃত্যুর এত বছর পর হঠাৎ এমন কথাকে ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভুলে গেলে চলবে না। ছবিটি ১৯৭৩ সালের। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে ডেকে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। তা হলে বঙ্গবন্ধু কি খান আতা সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না তিনি কী ছিলেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন আব্দুল জব্বার, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, খান আতাউর রহমান, ফতেহ লোহানী, জহির রায়হান তারা আমাদের সংস্কৃতির গুরুজন। তাদের কাছে বাংলা চলচ্চিত্র ভয়ানকভাবে ঋণী। আজও তাদের অতিক্রম করতে পারিনি আমরা অথচ তাদের বিরুদ্ধে হীন কথা বলা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র আমাদের পেয়ে বসেছে।’ তিনি সবার প্রতি এই ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনের আহ্বান জানান। ছুটির ঘণ্টাখ্যাত পরিচালক আজিজুর রহমান বিষয়টি শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘একজন আতা ভাইকে নিয়ে যে যা খুশি বলবে এটা সহ্য করা হবে না। তার সম্পর্কে ভুলভাল তথ্য উত্থাপন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার খেসারত অবশ্যই সরকার তাকে (বাচ্চু) দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তার মিষ্টিকথায় এখনকার ছেলেমেয়েরা বিভ্রান্ত হবে কিন্তু ইতিহাস পাল্টে যায় না।

মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আমি স্যালুট করি। কিন্তু একজন আতাউর রহমানের কর্মময় জীবনে তার যে গুণের বিচরণ তার ধারেকাছেও আপনি নেই। অথচ এ বয়সে এসে সেই মহীরুহু আতা ভাইকে নিয়ে এই অর্বাচীন কথাগুলো শুনতে হচ্ছে। তাই কারো কাছে নয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাচ্চুর এই ধৃষ্টতাপূর্ণ কথার বিচার চাই।’ মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য অভিনেতা ফারুক বলেন, “১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেক্ষাপটনির্ভর একটি ঐতিহাসিক সেলুলয়েডের দলিল। মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী অবস্থার আলোকে এটি নির্মিত। অথচ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যে মন্তব্য নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু করেছেন তাতে সব মুক্তিযোদ্ধার চেতনার মূলে আঘাত করেছেন।’ তিনি বলেন, “আতা ভাইয়ের ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুকে পর্যন্ত অনুপ্রাণিত করেছিল এ ছবিটি। বেঁচে থাকতে বহুবার তিনি এ কথা বলেছেন। ‘আবার তোরা মানুষ হ’ দেখার পরও আতা ভাইকে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু আর তাকেই কিনা আজ ‘রাজাকার’ বলে গালি দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি নেগেটিভ হয়েছিল যেটাতে মুক্তিযোদ্ধারা অভিনয় করেছিলাম বলা হচ্ছে। বাচ্চুর এমন কথা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে কেবল আমার নয়, সব মুক্তিযোদ্ধার।” খান আতাউর রহমানের দীর্ঘ সময়ের সহকারী সিবি জামান বলেন, “সময়টা কি এতই খারাপ হয়েছে যে, ইতিহাসের পাঠ একজন অর্বাচীনের কাছ থেকে পেতে হবে? ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের যে ইতিহাস দিয়ে স্বাধীনতা রচিত সেটার একটা দালিলিক ছবির নাম ‘আবার তোরা মানুষ হ’। যেটি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসায় ধন্য হয়েছিল। অথচ সে ছবিটিকে নেগেটিভ বলা হলো। এর মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে বেনিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার যে নীলনকশা চলছে সেটারই প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।

কারণ বাচ্চুরা কখনই স্বদেশি চেতনার অংশ ছিলেন না। আজও নেই। কিন্তু একজন খান আতা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশে যার নাম ধ্বনিত হয় তাকে অশালীনভাবে হেয় করা সেই ষড়যন্ত্রকে বেগবান করার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়।” এ ছাড়া এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন রেজা লতিফ, নায়ক আলমগীর, রায়হান মুজিব, মালেক আফসারী, রেজা হাসমত, নুর মুহাম্মদ মনি, মোহাম্মদ হোসেন জেমী, আনোয়ারা, এফআই মানিক প্রমুখ। আমজাদ হোসেনের কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে অভিনয় করেন ফারুক, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আমির হোসেন বাবু (প্রয়াত), আল মনসুর, দুলাল, মারুফ, কাজী এহসান, খান আতা, সরকার ফিরোজ, ববিতা, রওশন জামিল (প্রয়াত), ওবায়দুল হক সরকার (প্রয়াত), খলিলসহ (প্রয়াত) একঝাঁক মুক্তিযোদ্ধা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৫:৪৬   ৪৬৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অন্যান্য সংবাদ’র আরও খবর


নিউজ টু নারায়ণগঞ্জ কে নিবন্ধন সনদ তুলে দিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা
সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে: প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন
সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সাংবাদিক ইব্রাহীম খলিল
মাংস আমদানি বন্ধের দাবি: স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে হবে
বাজারে আসছে শীতের সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে
অক্সিজেনের অস্বাভাবিক দাম
করোনাকালের উপকথা
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ১২১তম জন্মজয়ন্তী
এগুলো এখনই উচ্ছেদ করা হোক: ভেজাল গুড়ের কারখানা
বছরব্যাপী মুজিববর্ষ ঘোষণা করলো ওয়াশিংটন ডি.সি.

আর্কাইভ