নওগাঁর রাণীনগরে চলতি রবিশস্য মৌসুমে বিটি, কাজলা, আলতা বুলবুলি, বারি-১ ও সাদা লড়ি জাতের বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। রোগ-বালাই কম, আবহাওয়ায় অনুকূলে থাকায় মাঠ পর্যায়ের চাষিরা বেগুন চাষে ভাল ফলন পেলেও বাজার মূল্য আশানুরুপ না পাওয়ায় দরপতনের কারণে বেগুন চাষিদের লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে। এমনতেই এই এলাকায় ধান চাষের দাপট থাকলেও বিশেষ শ্রেণীর জমিতে বিকল্প হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা ধান চাষের পাশাপাশি নানান সবজি সহ বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করে বিগত মৌসুম গুলোতে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক থাকলেও চলতি মৌসুমে বেগুন চাষ করে লাভ তো দূরের কথা গোলা কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে রাণীনগরে চাষি পর্যায়ে প্রতি কেজি বেগুন ৫ থেকে ৭ টাকা পাইকারী দরে বিক্রি হেেলও ভোক্তা পর্যায়ে মান ভেদে বাজারে ১০ থেকে ১২ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত মাসে কয়েক দফা ঝড় ও শীলা বৃষ্টির কারণে বেগুনের ক্ষেতে শেষ মহূর্তে পোকা-মাকড়ের আনাগুনায় বেগুন চাষিরা দিনদিন আরোও বেকায়দায় পড়ার আশংকায় ভুগছে। ইতিমধ্যেই কিছু বেগুন চাষিরা জমিতে বালাই নাশক ঔষুধ প্রয়োগ করা শুরু করেছে। আবার এমন বেগুন চাষির খোঁজ পাওয়া গেছে, জমি থেকে দুই বার বেগুন তুলে সম্পূর্ণ কীটনাশক মুক্ত বেগুন বাজারে বিক্রি করেছে। হঠাৎ করে চলতি সপ্তাহ জুরে সকাল বেলা হালকা কুয়াশা থাকার কারণে বেগুন চাষিদের দুঃচিন্তায় ফেলেছে। জৈষ্ঠ্য মাসের আগে এই এলাকার চাষিদের ঘরে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে তেমন কোন বিক্রয় যোগ্য ফসল না থাকায় প্রান্তিক কৃষক সহ সাধারণ মানুষ কিছুটা অভাব-অনাটনেই এই সময়টা পাড় করে। কিন্তু অসময়ের বন্ধু হিসেবে খ্যাত অধিকাংশ কৃষকদের ঘরে এখন জমি থেকে বেগুন তোলার মৌসুম চলছে। বাজার মূল্য মন্দার কারণে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বেগুন চাষিদের লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে। স্বল্প পরিমাণ বালাই নাশক প্রয়োগে, সার্বিক উৎপাদন ব্যয় কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় ধান চাষের পাশাপাশি এই এলাকার কৃষকরা বেগুন চাষ করছে।
এক সময় এই এলাকায় বেগুন চাষ তেমন না হলেও বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য ফসলের সাথে বেগুন চাষ করেছে এই উপজেলার কৃষকরা। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে বেগুন ভাল হওয়ায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে তুলে অনেকটা বাধ্য হয়েই পাইকারদের কাছে পানির দরে বিক্রয় করছে। সরকার পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য কৃষি উপকরণ, বীজ, রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হলেও বেগুন চাষিদের জন্য স্বল্প পরিমাণ বীজ সহ অন্যান্য উপকরণ প্রান্তিক পর্যায়ের বেশ কিছু কৃষকদের সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানান। চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় বেগুন চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বেগুনের ভাল ফলন হচ্ছে বলে চাষিরা জানান। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা নিজ নিজ জমিতে দ্বিতীয় বার বেগুন তোলার কাজ করছে। বেগুন গাছ ভাল থাকলে একই জমিতে প্রায় তিন বার তোলা যায়।
গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা বেগুন গুলো অগ্রহায়ণ মাস থেকে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাস শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত জমি থেকে বেগুন তোলার কাজ চলে। তবে এই সময়টা চলছে বেগুনের ভরা মৌসুম। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বেগুন চাষিরা কিছুট বেকাদায় রয়েছে। রমজান মাস শুরুর আগেই এর চাহিদা ও দাম দুইটিই তুলনা মূলক বৃদ্ধি পায়। রমজান এর শুরুতেই এখানে মান ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়। কিন্তু বাজারের এই সুফল হতভাগা কৃষকের ভাগ্যে জোটে না। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে। শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং বেগুনের ক্ষেতে রোগ-বালাই না থাকায় ও মাঠ পর্যায়ে বেগুন চাষিদের উপ-সহকারি কৃষি অফিসাররা যথা সময়ে উপযুক্ত পরামর্শ নজরদারি ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে বেগুনের ফলন ভাল হয়েছে। তবে একডালা, রাণীনগর সদর, কাশিমপুর, গোনা, কালীগ্রাম ও পারইল ইউনিয়নে বেগুন চাষ হয়েছে।
পুরো মৌসুমে আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতি হেক্টরে প্রায় ২০ থেকে ২২ মেট্টিক টন বেগুন উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলার একডালা ইউনিয়নের পাকুরিয়া গ্রামের বেগুন চাষি মো: গোলাম হোসেন জানান, আমি প্রায় দুই ধরে ধান চাষের পাশাপাশি বেগুন চাষ করি। চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে বিটি ও সাদা লড়ি জাতের বেগুন চাষ করেছি। বেগুনের বাম্পার ফলন হলেও বাজার মূল্য ধ্বসের কারণে এবছর লোসের ঘানি টানতে হচ্ছে।
তবে আশা করছি সামনে রমজান মাসে বেচা-কেনা ভাল হলে লসের অংক কিছুটা কমবে। তবে উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষনের ভাল ব্যবস্থা থাকলে আমার মত সকল চাষিরা উপকৃত হতো। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, উপজেলার ৪/৫ টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় বেশি পরিমান বেগুন চাষ হয়েছে। রোগ-বালাই না থাকায় এই বছর বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বর্তমানে বাজার মূল্য কম থাকলেও সামনে রমজান মাসে বেগুনের ব্যাপক চাহিদাসহ চরা মূল্যেই বেগুন বিক্রি করতে পারবে চাষিরা। এতে তারা লাভবান হবে বলে মনে করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৮:১৬ ৬৯৫ বার পঠিত