লাভজনক হওয়ায় সাভারে টার্কি পালনে আগ্রহ বাড়ছে

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » লাভজনক হওয়ায় সাভারে টার্কি পালনে আগ্রহ বাড়ছে
বুধবার, ১১ এপ্রিল ২০১৮



---ল্যাটিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে টার্কি গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালন করা হলেও বাংলাদেশে এখনও খুব একটা পরিচিতি পায়নি অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির এই প্রাণিটি। দেখতে মুরগির মত হলেও বৃহদাকৃতির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে টার্কির মাংস এখন উপভোগ্য হয়ে উঠেনি। তবে ইদানিং রাজধানীসহ দেশের কিছু কিছু স্থানে পাখি জাতীয় এই টার্কি পালন শুরু হয়েছে।

সাভারে বেশকিছু স্থানে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পালন করে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই। ব্রয়লার, কক ও সোনালি প্রজাতির মুরগি পালনের চেয়ে তুলনামূলক খরচ অনেক কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় টার্কি পালনে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের মাঝে। অনেকেই আবার শখের বসে বাড়িতে পালন করছেন টার্কি।

সাভারের রাজাশন, থানাস্ট্যান্ড, গেন্ডা, দোসাইদ, কলমা ও আশুলিয়ার নবীনগর, পল্লীবিদ্যুৎ, গাজীরচটসহ প্রায় ২০-৩০টি স্থানে ছোট-বড় পরিসরে টার্কি মুরগি পালন করা হচ্ছে।

আশুলিয়ার টাকশুর এলাকার বাধন এগ্রোফার্মের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, আগে পোল্ট্রি ফিডের একটি প্রতিষ্ঠানের সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে তিনি এই এলাকায় কাজ করতেন। পরে প্রোল্ট্রি ফিড সরবরাহ করতে গিয়ে দানেশ ঢালি নামে এক ব্যবসায়ীর তার পরিচয় হয়। পরে ওই পোল্ট্রি ব্যবসায়ী লোকসানের কারণে ব্যবসা বাদ দিলে তিনি একই জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্রয়লার ও লেয়ার পালন শুরু করেন। এরই মধ্যে তার চাকরির সুবাদে এগ্রোটেক ফিডস লিমিটেডের কনসালটেন্ট ডা. মাকসুদুর রহমান ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেনারি বিভাগের প্রভাষক ডা. জামিনুর রহমানের সাথে তার পরিচয় হয়। তারাই তাকে ব্রয়লারের পাশাপাশি টার্কি পালনে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর সোহেল ও বাধন নামে আরো দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ ভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

পরে সাতক্ষীরা থেকে ১শটি এক মাস বয়সী বাচ্চা প্রতি ৬শ টাকা দরে টার্কি ক্রয় করে আনেন। টার্কি সম্বন্ধে ভালো ধারণা না থাকায় কিছুদিন পর রক্তে টকসিনের সংক্রমণে ৫০টি বাচ্চা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আতঙ্কিত হয়ে কম মূল্যে ২০টি বাচ্চা বিক্রি করে দেন। পরে ডা. মাকসুদুর রহমান ও ডা. জামিনুর রহমান তাকে টার্কি পালন প্রক্রিয়া রপ্ত করান। বর্তমানে স্টোকস, নরফোল ব্রোঞ্চ, রেড বার্বন ও রয়েল পামপ নামে চার প্রজাতির প্রায় আড়াইশ টার্কি তার ফার্মে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তার ফার্মের প্যারেন্টস স্টোকস প্রজাতির ১৭০ টার্কির মধ্যে ১২০টি টার্কিই এখন ডিম দিচ্ছে। প্রতিটি টার্কি বছরে অন্তত ১শ ডিম দেয়। আর ডিম প্রতি সর্বোচ্চ দেড়শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে এখন চাহিদা বেশি থাকায় তিনি ভাড়ায় ইনকিউবিউটরে ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করেন। যেখানে একদিন বয়সী একটি টার্কির বাচ্চার বর্তমান বাজার মূল্য ২৫০-৩০০ টাকা। ধামরাই, গাজীপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার এখানে টার্কির বাচ্চা কিনতে আসে অনেকেই। বর্তমানে তার ফার্মে প্রতি সপ্তাহে ৬০০-৭০০ বাচ্চা উৎপাদন হলেও তিনি গ্রাহকদের চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করতে পারছেন না। তাই ব্রয়লার ও অন্যান্য মুরগি পালনের চেয়ে টার্কি পালন অনেক বেশি লাভজনক হওয়ায় ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে শুধু টার্কি পালন করবেন বলেও জানান এই পোল্ট্রি ব্যবসায়ী।

আমিনুল ইসলামের ব্যবসায়িক অংশীদার মো. সোহেল জানান, ট্রার্কি পালনে অন্যান্য মুরগি যেমন ব্রয়লার, কক ও সোনালী প্রজাতির চেয়ে খরচ অনেক কম। প্রতিটি টার্কি দিনে মাত্র পাঁচ টাকা মূল্যের ১২০ গ্রাম খাবার (পোল্ট্রি ফিড) খেয়ে থাকে। পাশাপাশি কলমি শাক, ঘাস, কঁচুরিপানা ও বাঁধকপিও টার্কির পছন্দের খাবার। এছাড়া টার্কি মুরগির মাংস খুবই সুস্বাদু ও কোলেস্টরল মুক্ত হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আগে তার খামারে প্রতি মাসে ৫শ টাকা কেজি দরে প্রায় ১-২শ কেজি মাংস বিক্রি হতো। আর এখন তা বেড়ে প্রায় ২৫শ থেকে ৩ হাজার কেজি মাংস বিক্রি হয়। যেহেতু সর্বমহলে টার্কি মুরগির মাংস খাদ্য হিসেবে সেভাবে পরিচিতি পায়নি, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের মত উচ্চ শ্রেণির ব্যক্তিরাই তার রেগুলার কাস্টমার। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তার আড়াইশ টার্কির জন্য খরচ মাত্র দেড় লাখ টাকা। আর লাভ কয়েক গুণ বেশি।

আশুলিয়ার বাঁধন এগ্রোফার্ম থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে টার্কি পালনে সফলতা পেয়েছেন মানিগঞ্জের কাজী মোজাফফর হোসেন, আশুলিয়ার আনোয়ার হোসেন, রুবায়েত ও ধামরাইয়ের মো. দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকেই।

তারা বলেন, ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের মাধ্যমে তারা টার্কি পালনে উদ্বুদ্ধ হন। টার্কি পালন অত্যন্ত সহজ ও লাভজনক। যদিও রানীক্ষেত, গামব্রু ও ফাউলপক্স নামের রোগে আক্রান্ত হয় টার্কি। তবে ছয়, সাত, পনের ও ত্রিশ দিন বয়সে চারটি ভ্যাকসিন দিলে এই রোগের সংক্রমণ রোধ করা যায়। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে টার্কি পালন করে যেমন বেকারত্ব অনেকটা দূরীকরণ সম্ভব হবে। তেমনি টার্কির মাংস প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে বলে দারুণ আশাবাদী এই টার্কি ব্যবসায়ীরা।

সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফজলে রাব্বী মণ্ডল বলেন, ব্রয়লার, হাঁস, মুরগি, কোয়েলসহ পোল্ট্রির ১১টি প্রজাতির মধ্যে টার্কিও একটি। টার্কির মাংস যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। এছাড়া গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ ২.৬%, মহিষে ০.৯%, খাসিতে ৩.৬% ও ভেড়ায় ৪.৪% থাকলেও টার্কিতে চর্বির রয়েছে ০%। গরুর মাংসে প্রোটিন রয়েছে ২২.৬%, মহিষে ১৯.৪%, খাসিতে ২১.৪% ও ভেড়ার মাংসে ১৮.৫%। অপরদিকে টার্কির মাংসে প্রোটিন রয়েছে ২০-২৫%। তাই ডায়েবেটিকস ও হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত রোগে যারা ভোগেন তারা অনায়াসে টার্কির মাংস খেতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা বলতে আমরা সরকারিভাবে প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে এধরনের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের পশু-পাখি পালন ও রোগে আক্রান্ত হলে সেবা প্রদান করে থাকি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৩:৪৮   ৬৫৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ