
রাশিয়া থেকে ১০০ কোটি টাকার অনুদান আসছে। মানবসেবায় ওই টাকা ব্যয় করা হবে। নিজেদের ফাউন্ডেশনের নামে আসা ওই টাকা প্রত্যেক সদস্য ১ কোটি করে ব্যয় করতে পারবেন। তবে, টাকা ব্যয় করতে হলে কিছু প্রসেসিংয়ের বিষয় আছে। এর জন্য খরচ করতে হবে।’ এমন প্রলোভনে ফেলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উঠে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লার জামতলাস্থ ধোপাপট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাইদুজ্জামান নুর রাকিব (৪১) নামের ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১।
র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্দরের নূর ইসলামের ছেলে রাকিবের (৪১) বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় রাকিবের হেফাজতে থাকা ভারতীয়, পাকিস্তানি, থাইল্যান্ডের কিছু মুদ্রা, ২২টি পাসপোর্ট, শতাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারণার নথিপত্র, ভুয়া চেক, একটি অত্যাধুনিক খেলনা পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলিসহ ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, সাধারণ মানুষদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র প্রদর্শন করে ফাঁদে ফেলে তাদের নিকট হতে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎও করে সে। অনুদানের টাকা না পেয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে রাকিব।
অভিযুক্ত রাকিব কথিত ‘নুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘নুর পোভার্টি এলিভিয়েশন এন্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ‘দৈনিক মানবতার আলো’ ও ‘নিউজ ডাইজেস্ট ওয়ার্ল্ড’ নামক দুটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার স্বঘোষিত সম্পাদক তিনি। তবে, কোনো কিছুরই বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি বলে জানিয়েছে র্যাব।
অভিযান পরিচালনাকালে রাকিবের কাছ থেকে ১টি পিস্তল (আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ), ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি সিলভার রংয়ের ম্যাগাজিন, ১টি কালো রংয়ের পিস্তল কাভার, ১টি ডিজিটাল লকার বক্স, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১ পাতা মূল সদস্যগণের অর্থ প্রদানের তথ্যাবলী, ৫টি মানি রিসিপ্ট বই, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিল ৮টি, ভুয়া পদক ৫টি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিলগালা যুক্ত খাম ২৭টি, নুর দরিদ্র বিমোচন ও মানবাধিকার সংগঠনের ১০টি অঙ্গীকারনামা জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি সাইদুজ্জামান নুর রাকিব জামতলা ধোপাপট্টি এলাকায় জনৈক হাজী শামছুল হুদার ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। ভাড়াকৃত ভবনের ছাদে তিনি ‘নুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও নুর পোভার্টি এলিভিয়েশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামক সরকারি অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র এসএসসি হলেও নিজেকে সবসময় তিনি উচ্চ শিক্ষিত প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
সুসজ্জিত অফিস কক্ষে তিনি তার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্জিত বঙ্গবন্ধু পদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পদক, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাদার তেরেসা পদক ও মহাত্মা গান্ধী শান্তি পদকসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পুরষ্কার পাওয়ার ভুয়া স্মারক ও জাল সার্টিফিকেট সাজিয়ে রেখে লোকজনকে আকৃষ্ট করতেন। নিজেকে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বোঝাতে তিনি সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ পিস্তল ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন।
এদিকে রাকিবের স্ত্রী বলেন, আমরা একসাথে পড়ালেখা করেছি অনেক ভালো একটা লোক। ফুল ফ্যামিলির দায়িত্ব ওর ওপর। আমার চাহিদার জন্যই আজকে এ অবস্থা, আর কিছুই না।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৪:১৫ ৯৮ বার পঠিত