জমকালো দামি রেস্টুরেন্টে অসহায়দের একদিন

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » জমকালো দামি রেস্টুরেন্টে অসহায়দের একদিন
শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০



---

আটতলা ভবনের ছাদে জমকালো দামি রেস্টুরেন্ট। গরিব অসহায়দের জন্যে সেখানে যাওয়ার পথও যেন আকাশসম দূরত্বে। কিন্তু সেই দূরত্ব ঘুচে যায় শুক্রবার এলেই।

খাবার, খাবারের দামি জায়গা, ৮ তলা ভবনের জমকালো ছাদ- সপ্তাহের একটি দিন গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষদের জন্য। এইদিন পুরো রেস্টুরেন্ট দখলে থাকে তাদেরই। পেটপুরে দামি খাবার খান সামর্থ্যহীনরা।

সাভার বাজারের চৌরঙ্গী মার্কেটে সিপন হাওলাদারের মালিকানাধীন কস্তুরি রুফটপ রেস্টুরেন্টে প্রতিসপ্তাহে জুমার নামাজের পর করা হয় এ আয়োজন। এদিন সেখানে খাওয়ানো হয় প্রায় দুইশ’ স্থানীয় গরিব অসহায়কে।

শুক্রবার রেস্টুরেন্টটিতে গিয়ে দেখা যায়, সাজানো গোছানো বিত্তবানদের খেতে খেতে সময় কাটানোর রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাচ্ছেন গরিব অসহায়রা।

কথা হলো খেতে আসা আজমল শেখের সঙ্গে। সাভার বাজার এলাকায় ভিক্ষা করেন তিনি। বললেন, শুক্কুরবার আইলেই এনে খাইব্যার আহি। এরহম জাগায় তো সাইজ্যের লিগাও আহা যায় না। কিন্তু উনির্যা একদিন আমাগো ডাইকা আইনাই খাওয়ায়।

---

নামা বাজার এলাকায় ঘুরে ঘুরে পলিথিন কুড়ান মায়মুনা আক্তার। তিনি বলেন, জ্যার কুটি ট্যাহা আছে, হ্যাঁয়ও এইরহম খাওয়ায় না। হ্যারে আমরা দোয়া করি। হ্যারে আল্লাহ আরও দেউক। প্রেত্যেক শুক্কুরবার হ্যায় এইরহম ডাইক্কা ডাইক্কা খাওয়ায়।

জরিনা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, আইজ ফজরের পর থিকা না খাওয়া। খিদায় মরতাছিলাম। দুপুরে এনে খাইতে আইছি।

জরিনা বলেন, আমরা এইনে খাইতে আসি, যেন তার নিজস্ব লোক। ঘরের মানুষ। মা বইন, খালা, এমনভাবে খাওয়ায়। নিজের লোক দিয়া বাইরা খাওয়ায়। আমি তার জন্যে দোয়া করি।

জানতে চাইলে রুফটপ রেস্টুরেন্টের মালিক সিপন হাওলাদার বলেন, আমি খাবারের ব্যবসা করি। বহু মানুষ দামি খাবার খায়। কিন্তু এখান থেকে রাস্তায় বের হলেই দেখি কত মানুষ না খেয়ে আছে। আমার চিন্তা ছিল আমি ওদের জন্যে কিছু করব। পরে এদের জন্যে একদিন রাখি। রাস্তায় অনেক মানুষ না খেয়ে থাকে। আমরা খাই, খাবার নষ্ট করি, ফেলে দেই। কিন্তু আমরা একটা খাবার বানাতে পারি না আল্লাহ ছাড়া। তখন ভাবি এটাও কারো না কারো রিজিক। এটা দিয়ে কারো ক্ষুধা মিটতো। তখনই ভাবছি, বেচাকেনা করি লাভ করি। এতে অনেকেরই হক আছে। সবারই খিদার অনুভূতি আছে। আমারটা আমি মেটাতে পারি। সে পারে না। আমার ইচ্ছা হলো, সবদিন না পারি একটা দিন ওদের সঙ্গে খাই। যতদিন রেস্টুরেন্ট আছে, আমি আছি, এই নিয়ম ভঙ্গ হবে না। তারা এখানে আসবে, তারা খাবে আমি খুশি হই। আমার ভালো লাগে। আমি নামাজ পরেই আসি। খোঁজ নেই। খাওয়াই। এই একদিন একসঙ্গে দুইবেলার খাবার বানিয়ে ফেলি। যেহেতু জানি না, কতজন আসবে। ফলে নিজে থেকেই আগে বেশি করে রান্না করি।

তিনি বলেন, আমি দেড় বছর খাইয়েছি। শুক্রবার ধরে হিসাব করলে আমি প্রায় দুই হাজারের ওপর মানুষ খাইয়েছি। কিন্তু একটু একটু করে খাওয়ানোয় অর্থনৈতিকভাবে আমি তা টেরই পাইনি। আমার একটু সংকট হলেও ওদের খাবারের আগে আমার পকেটে টাকা চলে আসে। ওরা খেয়ে যে হাসি দেয় আমি খুশি হই, এটা টাকায় পরিমাপযোগ্য না। এরা আমাকে রাস্তায় দেখলে আমাকে ডাকে। দোয়া করে। এটা টাকা দিয়ে সম্ভব না।

---

সিপন হাওলাদার বলেন, আমি এটা স্বার্থের জন্যেই করি। সেটা নিজের ভালো থাকার, শান্তিতে থাকার স্বার্থে। বাকিজীবন আমি এই শান্তি পেতে চাই। এছাড়া সামনে রাতের খাবার নিয়ে বের হবো। ছিন্নমূলদের খাবারের জন্যে চেষ্টা করবো।

এসময় অন্যান্যদেরকেও এসব কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫১:৩৬   ১০২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ