ভুয়া এমএলএম কোম্পানির নামে প্রতারণার ঘটনায় ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১১। প্রতারকদের অবৈধ মালামালসহ উদ্ধার করা হয়েছে ৩১ ভিটকিমকেও।
রবিবার বিকালে র্যাব-১১ এর সহকারী পরিচালক এএসপি নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, ২৮ এপ্রিল শনিবার পৌনে ৭টায় র্যাব-১১ এর একটি টিম রাজধানীর উত্তরা ১০নং সেক্টরের আবাসিক এলাকায় ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানিতে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় ৩১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করে। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ মালামালও জব্দ করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, অতীতে বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানি নানা পন্থায় এখনো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বেকার যুব সমাজকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারিত ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরা ১০ নং সেক্টরের আবাসিক এলাকায় ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারকচক্রের ২৩ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কোম্পানির পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিবিউটর মো. গোলাম কিবরিয়া, ইনচার্জ মো. রাশেদুর রহমান সুমন, মো. সুমন , মো. রবিন, আমিনুল ইসলাম সোহেল, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. রুহুল আমিন, মোহাইমিনুল ইসলাম, সজীব হোসেন, মো. ইমন মিয়া, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. নাঈম, আবুল কালাম, মো. সাকিব, আমজাদ হোসেন, মো. হরমুজ আলী, মো. শাহিন ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, নয়ন চন্দ্র রায়, মো. বিটু মিয়া।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও জব্দকৃত নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, এই ভুয়া এমএলএম কোম্পানি মাসিক ১৬ হাজার ও এর বেশি টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনটি ভিন্ন প্যাকেজে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে যথাক্রমে ২৭ হাজার ১০০, ৩৭ হাজার ১০০ ও ৪৭ হাজার ১০০ টাকা গ্রহণ করে।
পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণের নামে সপ্তাহখানেক কালক্ষেপণ করে প্রত্যেককে নতুন দুইজন সদস্য সংগ্রহের শর্ত দেয়। নতুন সদস্য সংগ্রহ করে দিলে সংগৃহীত টাকার সামান্য কমিশন প্রদান করে। নতুন সদস্য দিতে না পারলে কূট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খালি স্ট্যাম্প ও আপসনামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে ভাড়াটিয়া লোকজন দ্বারা আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনও করে থাকে।
অভিযানকালে ভুয়া এমএলএম কোম্পানির সুসজ্জিত অফিস থেকে প্রতারণার শিকার ৩১ জন ভূক্তভোগীদের উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এই কোম্পানির অফিস থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩৭টি মোবাইল, পাঁচটি কম্পিউটারের মনিটর, দুটি সিপিইউ, দুটি টেলিভিশন, একটি প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ, একটি ওয়াটার ফিল্টার, দুটি স্পুন সেট, একটি ফিরনি সেট, ১০টি স্যুপ পিচ, দুটি ডিনার সেট, ছয়টি ফুড পট পিচ, দুটি হটপট সেট, চারটি ব্ল্যাংক সাইন স্ট্যাম্প পেপার, একটি ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, নগদ-৩, ৪৫,৭২৫/- টাকা ও বিপুল পরিমাণ ভুয়া ডকুমেন্ট উদ্ধার করা হয়।
র্যাব দাবি করে, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেপ্তারসহ আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রায়ই র্যাবের নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫২:৪৮ ৩৮৬ বার পঠিত