সাংবাদিক সমাজের অধিকার আদায়ে আলাদা শ্রম আদালত গঠন করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কর্তৃক আয়োজিত ‘মহান মে দিবস-২০১৮ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমাদের চেতনাকে শানিত করার জন্য শ্রমিক ভাইরা রাজপথে শোভাযাত্রা করছেন। তারা আনন্দ উৎসব করছেন। তাদের দাবি আদায়ে সোচ্ছার হচ্ছেন। আমরা পেশাজীবী ও শ্রমজীবী। আমাদের মধ্যেও সংগঠন প্রয়োজন। সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। পেশাজীবী হিসেবে আমরা নানা দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকি, আন্দোলন সংগ্রাম করি।
তিনি বলেন, অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের তুলনায় আমাদের সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। তারা শুধু তাদের আমরা অধিকার ও রুটি রুজির প্রশ্নে আন্দোলন সংগ্রাম করে থাকে। তবে আমরা শুধু রুটি রুজির জন্য সংগ্রাম করি না। আমরা দেশের অপশক্তির বিরুদ্ধে, দেশের স্বার্থে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা বিভিন্ন সময় দেশের মানুষের অধিকার, সুশাসন ও আইনের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনশন করেছি, রাজপথে সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতার পতাকা ধারণ করে সাংবাদিক সমাজ গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও আমরা আপোষহীন ভাবে সংগ্রাম করব। পাশাপাশি সাংবাদিকতার মর্যাদা ও সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। যদিও অনেক বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়। একা নেতৃত্ব কিংবা দুর্বলতার জন্য নয়, মালিকপক্ষের অনীহা ও অবহেলার কারণে আমাদের দাবি দাওয়া আদায় অনেক সময় সম্ভব হয় না। আমরা যেসব অধিকার এখনো আদায় করতে পারিনি তা আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। তবেই সম্ভব।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সরকার নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছে। মহার্ঘ ভাতা প্রস্তাব সরকারকে দেয়া হয়েছে। যখন এই ঘোষণা দেয়া হচ্ছে তখন কিছু মালিক কর্মী ছাটাই করছেন, অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। এই সময়টায় আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হতে হবে। নেতৃত্বের কাছে অনেক প্রত্যাশা সদস্যদের। বলিষ্ঠ ভূমিকা সদস্যদেরও প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক ও মিডিয়াবান্ধব উল্লেখ্য করে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, সরকার সাংবাদিক বান্ধব অনেক কল্যাণকামী পদক্ষেপ নিয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জন্য আলাদা আইন করেছিলেন ১৯৭৪ সালে। ওই আইনের আওতায় ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়েছে। তবে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার সেই আইন বাতিল করে সাংবাদিকদের বেতনভাতা ও অধিকারের বিষয়টি শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে আসে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাংবাদিক সমাজের দাবি দাওয়া পেশ করার পর তিনি ১৯৭৪ সালের বঙ্গবন্ধুর করা সেই আইন পুনরায় চালুর জন্য যুগোপযোগী করতে সংশোধণের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
তবে তথ্য মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি। অাশা করছি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। এটা হলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কর্মীদের অধিকার আদায় সম্ভব হবে।
আমাদের সাংবাদিক সমাজের দাবি যে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই আইনকে বাস্তবায়ন করা সরকারের দায়িত্ব। বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের যেসব সুযোগ সুবিধা মালিকপক্ষ বঞ্চিত করছে তা আইন অমান্যের শামিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় আলাদা শ্রম আদালত গঠনে মত পোষণ করে বলেন, যখন তখন চাকরিচ্যুত, বেতন বন্ধ, সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত সাংবাদিকদের জন্য আলাদা শ্রম আদালত প্রয়োজন। যেখানে দ্রুত আমরা সুবিচার পেতে পারি। যেখানেই সাংবাদিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে সেখানেই আইনের মাধ্যমে শ্রম আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, মালিকপক্ষ তাদের ব্যবসায়িক দিক শুধু দেখলেই হবে না, সাংবাদিক কর্মীদের দাবি দাওয়া ও অধিকারও দেখতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকরা ওয়েজ বোর্ডে বেতন ভাতা ও সুবিধাদি পান না, মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে জানালে তারা (নেতারা) ব্যবস্থা নেবেন।
ডিইউজের সভাপতির আবু জাফর সূর্য বলেন, যেসব পত্রিকার মালিক সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের দেখিয়ে রেট কার্ডসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পান, তারা ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন ভাতা না দিলে রেট কার্ড স্থগিত বা বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ডিইউজের একাংশের সভাপতি আবু জাফর সূর্যের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএফইউজের (একাংশের) মহাসচিব ওমর ফারুক, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান, ডিইউজের (একাংশের) সাবেক সভাপতি শাবান মাহমুদ, ডিইউজের (একাংশের) সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, নির্বাহী সদস্য গোলাম মোস্তফা ধ্রুব, শাকিলা পারভীন, ডিইউজের আলোকিত বাংলাদেশের ইউনিট চিফ মতলু মল্লিক, সদস্য সচিব সিরাজুজ্জামান, নিউনেশন ইউনিট চিফ হেমায়েত হোসেন, প্রবীণ সদস্য মৃণাল কান্তি প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ডিইউজের (একাংশের) দফতর সম্পাদক এম জিহাদুর রহমান জিহাদ, জাহিদা পারভীন ছন্দাসহ সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৬:০০ ৩৬৫ বার পঠিত