সংসদে রাষ্ট্রপতির পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সংসদে রাষ্ট্রপতির পূর্ণাঙ্গ ভাষণ
সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১



---

নতুন বছরে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সোমবার বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের শুরুর দিনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। দীর্ঘ ভাষণে তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম।

জনাব স্পিকার,

আসসালামু আলাইকুম।

একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২১ সালের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ প্রদানের এ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ায় আমি পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নিকট শোকরিয়া আদায় করছি। এ উপলক্ষ্যে আমি আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে মাননীয় সংসদ-সদস্যবৃন্দ ও প্রিয় দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি।

২। সময় সাশ্রয়ের জন্য ভাষণ সংক্ষিপ্ত আকারে আমি এই মহান সংসদে পাঠ করছি। সম্পূর্ণ ভাষণ টেবিলে উপস্থাপন করা আছে। জনাব স্পিকার, সম্পূর্ণ ভাষণটিকে পঠিত হিসাবে গণ্য করে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

৩। আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমর শহিদকে, যাঁদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি একটি সার্বভৌম দেশ ও স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান ও লাল-সবুজ পতাকা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

৪। আমি আরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের তিন মহান পুরুষ - শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে- যাঁদের অবদান আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

৫। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ড। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেদিন শাহাদত বরণ করেছিলেন তাঁর সহধর্মিণী মহীয়সী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও পারভীন জামাল রোজী, ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি এবং সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন আহমেদ। আমি তাঁদের সবাইকে অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র কাছে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

৬। আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত গ্রেনেড হামলায় শাহাদত বরণকারী নারীনেত্রী আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের। আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁদের সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

৭। গত বছর জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমরা হারিয়েছি তাঁদেরকেও আমি এখানে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও বেগম সাহারা খাতুন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও বেশ কয়েকজন

সংসদ-সদস্যসহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এছাড়া হারিয়েছি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের অনেক ব্যক্তিত্বকে। আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।

জনাব স্পিকার,

৮। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ গ্রহণ করে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সফলতার সাথে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ইতোমধ্যে সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন শেষে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর কৌশলগত দলিল হিসাবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করেছে। প্রণয়ন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর প্রধান অভীষ্ট হলো ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান, উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদায় উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার এ লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হবে।

জনাব স্পিকার,

৯। দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর অন্যান্য মামলার রায় দ্রুত প্রদান করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।

জনাব স্পিকার,

১০। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে গোটা বিশ্বের ন্যায় আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পসহ অর্থনীতির সকল সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনাসহ ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে নানামুখী দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সংবলিত ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদান অব্যাহত রাখায় প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরি সুরক্ষা হয়েছে। স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান করায় বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহ দ্রুত উৎপাদনে ফিরতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি সরকারি কর্মসূচির কারণে দেশে একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি। সময়োপযোগী ও আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রথিতযশা

সাময়িকী ‘ফোর্বস’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘8 (More) Leaders Facing The Coronavirus Crisis’ শীর্ষক নিবন্ধে উল্লিখিত সফল নারী নেত্রীদের তালিকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ জনিত প্যানডেমিকের সফল মোকাবিলা, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ও জীবনমান সচল রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ প্রণীত ‘কোভিড-১৯ সহনশীল র‌্যাংকিং’-এ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং বিশ্বে ২০তম স্থান অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়, প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

জনাব স্পিকার,

১১। সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও উৎকর্ষসাধন এবং প্রাজ্ঞ রাজস্ব নীতি ও সহায়ক মুদ্রা নীতি অনুসরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত এক দশকে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও পর পর তিনবছর ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক দুই-চার শতাংশে।

তবে একইসময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮ দশমিক এক-দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা শীর্ষদেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

১২। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাতের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোসহ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন খাতসমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৩ দশমিক দুই-চার শতাংশ বৃদ্ধি করে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে গত এক দশকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় চারগুণ হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

১৩। ২০২০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক-এর চেয়ারপার্সনের সভাপতিত্বে ২৮টি একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে প্রায় ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৮০টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী কর্তৃক ৪২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে যার মোট ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ ২ লক্ষ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

১৪। অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৩৪ দশমিক তিন-ছয় শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করেছে যা গত অর্থবছরের তুলনায় চার শতাংশ বেশি। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এক হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট এবং প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকল্প সহায়তা পাওয়া গেছে।

জনাব স্পিকার,

১৫। দেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা রক্ষা, জনগণের আমানতকৃত অর্থের সুরক্ষা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি এবং আর্থিক লেনদেন সহজীকরণের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বেকার যুবদের আত্মকর্মসংস্থান এবং বিদেশ থেকে প্রত্যাবর্তনকারীদের ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য সরকার কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনকে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল প্রদান করেছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্তৃক দুই লক্ষ প্রশিক্ষিত বেকার যুবদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

১৬। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান, অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা উৎপাদন এবং রপ্তানির মাধ্যমে ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ইপিজেডে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ দশমিক চার-আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে যা জাতীয় রপ্তানির প্রায় ১৯ দশমিক দুই-সাত শতাংশ। এ পর্যন্ত ইপিজেড থেকে ক্রমপুঞ্জিত রপ্তানির পরিমাণ ৮৩ দশমিক ছয়-আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের কৌশল হিসাবে পিপিপি কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত মোট ৭৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

জনাব স্পিকার,

১৭। সরকার বাংলাদেশকে শিল্প সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে জিডিপিতে SME’র অবদান উন্নীতকরণ, জাতীয় শিল্পনীতিসহ বিভিন্ন আইন ও নীতি প্রণয়ন, সার সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য ৪৭টি বাফার গোডাউন নির্মাণ, প্রণোদনা প্যাকেজের ৪ হাজার ৮২২ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সিলেট জেলায় ‘শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড’ স্থাপন করা হয়েছে। নরসিংদী জেলায় ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ শীর্ষক প্রকল্প এবং ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেটে ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট স্থাপন’ প্রকল্প চলমান আছে। কোভিড-১৯ পরিস্হিতিতেও বিসিকের রপ্তানি আয়, মোট জাতীয় রপ্তানি আয়ের ১৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

১৮। বস্ত্র ও পাটখাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ২৭ দশমিক নয়-পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৭ দশমিক নয়-শূন্য লক্ষ মেট্রিক টন পাটপণ্য রপ্তানি করে ৭৫২ দশমিক চার-ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।

১৯। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য বিরোধ, জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাস, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিগত অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি আয় প্রবৃদ্ধির মূলধারায় ফিরে এসেছে। রপ্তানি খাতে বিভিন্ন প্রকার নগদ প্রণোদনাসহ ১ শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা চলতি অর্থবছরে অব্যাহত রাখা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ফাণ্ডের আকার ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করে এর সুদের হার ১ দশমিক সাত-পাঁচ শতাংশে স্থির রাখা হয়েছে এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক, হালাল খাদ্য, আইসিটি, পাট ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় ও সরবরাহ স্বাভাবিক করাসহ ‘Ease of Doing Business’-এর আওতায় কোম্পানির নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রয়্যাল ভুটান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং-এর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে ভুটানের সাথে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

জনাব স্পিকার,

২০। বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা এবং রেমিট্যান্স প্রেরণ পদ্ধতি সহজিকরণের সুফল হিসাবে প্রবাস আয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাস আয় পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক আট-সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক দুই-এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে প্রবাস আয় হ্রাসের সম্ভাবনা থাকলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ৩৮ শতাংশ, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন, নিরাপদ অভিবাসনসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

২১। করোনার প্রভাব হ্রাস করার জন্য সরকার ১৪ দশমিক দুই-আট বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে শ্রমিকদের জন্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১ হাজার ৬৬২ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কলকারখানায় ৪ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

২২। কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের যথাযথ ফসলচাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও দুর্যোগে প্রণোদনা এবং সারসহ কৃষি উপকরণে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি, প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনয়ন ইত্যাদি নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ কোটি ৫৩ লক্ষ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও ফসল উৎপাদন ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য ও প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২৩। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী দিকনির্দেশনায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে খাদ্যশস্য পরিবহণ, গ্রহণ ও বিতরণ নির্বিঘ্ন রাখা হয়। পল্লী অঞ্চলে অতি দরিদ্র পরিবারের জন্য অতিরিক্ত এক মাসসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রাখা এবং শহরাঞ্চলে নিম্ন আয়ের কর্মহীন মানুষের জন্য বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি চালু করে পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় যথাক্রমে প্রায় ১৯ ও ২৪ শতাংশ বেশি খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়। এছাড়া খাদ্যের নিরাপদতা রক্ষায় নানাবিধ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।

২৪। পানিসম্পদ উন্নয়নে দেশের প্রায় ১১০ লক্ষ হেক্টর বন্যামুক্ত ও নিষ্কাশনযোগ্য এলাকার মধ্যে প্রায় ৬৫ লক্ষ হেক্টর জমিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১১১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে যা দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-তে বিনিয়োগ অগ্রাধিকার হিসাবে ৮০টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি কার্যক্রমই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন এডিপিভুক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

২৫। পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন আইন, বিধিমালা, পলিসি ও গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত এনফোর্সমেন্ট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে গাজীপুর জেলায় শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্যা কন্যা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য মিজ্‌ সায়মা হোসেন ওয়াজেদ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের ‘থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর’ হিসাবে মনোনীত হন। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভাবমূর্তি আরও গৌরবময়, সুসংহত ও উজ্জ্বল হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

২৬। ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মোট ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৬০০টি পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ মানবিক বিবেচনায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা নাগরিকের বাসস্থানের জন্য ‘আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প’ বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক নোয়াখালী জেলার ভাসানচরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ৩ হাজার ৪৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্হানান্তর করা হয়েছে।

২৭। ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ঢাকায় ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় বিচারপতি এবং সচিব পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ৯ হাজার ৭৩৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

জনাব স্পিকার,

২৮। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক খাতেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ দশমিক ছয় বছর এবং শিক্ষার হার উন্নীত হয়েছে ৭৪ দশমিক সাত শতাংশে। পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২০১৩ সালে যথাক্রমে ৪১ এবং ১ দশমিক নয়-সাত থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৯ সালে ২৮ এবং ১ দশমিক ছয়-পাঁচ-এ দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে দারিদ্র্য হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ও হত দারিদ্র্য হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্য হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং হত দারিদ্র্য হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

২৯। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৯ লক্ষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লক্ষ ৫০ হাজার, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৮ লক্ষ এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা এক লক্ষ জন করা হয়েছে। প্রতি বছর দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ৩০ হাজার দরিদ্র ও অসচ্ছল রোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

৩০। দুস্থ, অনগ্রসর ও দরিদ্র মহিলাদের জন্য প্রায় ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দশটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে ২০ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৪৩ জন নারী উপকৃত হয়েছে। ‘নির্যাতিত দুস্থ মহিলা ও শিশু কল্যাণ তহবিল’ থেকে কোভিডকালীন ১ হাজার ৩৬১ জনকে ৫৫ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন কঠোরভাবে দমনের লক্ষ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ সংশোধন করা হয়েছে।

৩১। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। কোভিড মহামারি, পর পর ৫ দফা বন্যা এবং আম্ফান মোকাবিলায় ত্বরিৎ সাড়া প্রদান ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যকরভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। মালদ্বীপে অবস্থানরত অভিবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত মানবেতর পরিস্থিতি লাঘবে ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ করা হয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল টিম, ১২০ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণসহ আটকে পড়া মালদ্বীপের নাগরিকদের সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সেনাবাহিনীর ১৩৫ সদস্যবিশিষ্ট মেডিক্যাল টিম কুয়েতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৩২। স্থানীয় সরকার বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এলজিইডি

১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪ হাজার ১৭২ কিলোমিটার সড়ক; ৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮০৭ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট; ১ হাজার ৬৯৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ৯৫৪টি সাইক্লোন সেল্টার এবং ২৫৪টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেছে। প্রায় ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩০০ নিরাপদ পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮-এর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পল্লী অঞ্চলে আধুনিক নগর সুবিধাদি সম্প্রসারণের জন্য ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ এ ধারণাটিকে ভিত্তি করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

৩৩। সরকার পল্লী উন্নয়নে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃজন, বাজার-সংযোগ সৃষ্টি, বহুমুখী সমবায় কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে নূতন নূতন মডেল উদ্ভাবন এবং দারিদ্র্য বিমোচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র স্বপ্ন-প্রসূত ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৬ লক্ষ ৮১ হাজার ২২৩টি দরিদ্র পরিবারকে সুসংগঠিত করে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে।

জনাব স্পিকার,

৩৪। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘শান্তি চুক্তির’ ফলে অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত হয়েছে। ফলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিরাজ করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়নে ২১৭ কোটি টাকার সোলার প্রকল্প ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ, বেতবুনিয়াস্থ স্যাটেলাইট স্টেশনে জাতির পিতার ম্যুরাল ও ৬টি ‘স্মার্ট ভিলেজ’ স্থাপন করা হয়েছে।

৩৫। ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং ধর্মীয় চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করে জনগণের নৈতিক মান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জনমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবসমূহ নির্বিঘ্নে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপিত হচ্ছে।

জনাব স্পিকার,

৩৬। সরকার যুবদের জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সারা দেশের যুবদের স্বাবলম্বীকরণ, ঋণ প্রদান, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি কর্মসূচি চালু করেছে। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় দেশের ৩৭টি জেলার মোট ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৩৭ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৪০২ জনের অস্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ কর্মসূচি দেশের সকল জেলায় সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

৩৭। ক্রীড়া উন্নয়নে সরকার দেশব্যাপী ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া ক্লাব এবং যুব ক্লাবের মাধ্যমে বিনামূল্যে ক্রীড়া সরঞ্জাম ও অর্থ বিতরণ করছে। ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত চার দলীয় মহিলা টি-২০ ক্রিকেট সিরিজে ভারত মহিলা ক্রিকেট দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

৩৮। সংস্কৃতি মনস্ক মেধাবী জাতি গঠনই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ’ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে ৮ জন বরেণ্য ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২১জন সুধীকে একুশে পদক-২০২০ প্রদান করা হয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ৩ হাজার ৭৯৩ জন অস্বচ্ছল সংস্কৃতিসেবী এবং ১ হাজার ৪৫২টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

৩৯। প্রথমবারের মতো ইউনেস্কো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান এবং বৃহত্তর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের আওতায় সৃজনশীল অর্থনীতি বিনির্মাণে যুব সমাজের নেয়া অসামান্য উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘UNESCO-Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize for the Creative Economy’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য সাধারণ অর্জন ও তাঁর অবদানের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন। এ পুরস্কার বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও ইমেজ বিল্ডিং-এ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

জনাব স্পিকার,

৪০। তথ্য প্রবাহ ও সৃজনশীলতার ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের অন্যান্য সকল সেক্টরের প্রচার কার্যক্রমের সাথে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সারাদেশে করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৩৫০ জন সাংবাদিককে সহায়তা হিসাবে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান দেশব্যাপী প্রচার করছে।

জনাব স্পিকার,

৪১। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব আহমেদ ওয়াজেদ-এঁর সুদক্ষ দিক-নির্দেশনায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবরূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দেশে টেলিডেনসিটি ৯৯ দশমিক ছয়-আট শতাংশ ও ইন্টারনেট ডেনসিটি ৬৪ দশমিক নয়-শুন্য শতাংশ। ডাক ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে দেশের ৮ হাজার ৫০০টি ডাকঘরকে ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তর করা হয়েছে।

৪২। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে বিগত ১২ বছরে দেশের ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়ন এবং ১৮ হাজার ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়েছে। প্রায় ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রায় ১৫ লক্ষ জনকে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তরুণদের উদ্ভাবন বিকাশে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৩৯টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন ৫টি হাই-টেক ও আইটি পার্কে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এতে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এবং ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ৯৬৪টি সরকারি সেবাকে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে। ব্লক চেইন, আইওটি, এআই, রোবোটিকস, বিগ ডেটার মতো ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে ২৭টি বিশেষায়িত ল্যাবরেটরি স্হাপন করা হয়েছে। ২০৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২৫ সালের মধ্যে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

৪৩। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সারাদেশের মোট ৪৯ হাজার ৪৮১টি মৌজার আরএস স্বত্বলিপি চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং তা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবপোর্টালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। দেশের মোট ৫১০টি উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হয়েছে। ই-নামজারি চালু করায় সরকার গৌরবজনক ‘United Nations Public Service Award-2020’ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২০’ অর্জন করেছে।

জনাব স্পিকার,

৪৪। শিক্ষা জাতির সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার বুনিয়াদ। সরকার প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিগত এক দশকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটি ব্যবহারের প্রসার, প্রাক-প্রাথমিক স্তর ও একীভূত শিক্ষা চালুকরণ, উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষক নিয়োগ ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং ঝরে পড়া রোধ ইত্যাদি।

৪৫। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের ৪ কোটি ১৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ৬২ হাজার ৪১২ কপি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। করোনা সংকটকালীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার লক্ষ্যে ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে প্রতিদিন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হচ্ছে। ১৫ হাজার ৬৭৬টি স্কুল এবং ৭০০টি কলেজে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। ৪২টি সরকারি এবং ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ৭২ কোটি টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা তহবিল হতে ৮ হাজার ৪৯২টি নন-এমপিও স্কুল-কলেজের ১ লক্ষ ৫ হাজার ৭৮৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

৪৬। উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে ২০২০ সালে দেশের ৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন ও ২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ৩ হাজার ৭০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৩৪টি র‍্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে।

৪৭। দেশে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় সদরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। ফরিদপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে। ১ হাজার ৮০০টি মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণকাজ চলমান আছে। ২০২০ সালে নতুনভাবে ৫০৩টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৪৮। সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সাফল্যের সাথে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগদান করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ এবং ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর,

১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সাইনসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় CMSD’র মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ভ্যাক্সিন ক্রয় বাবদ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদান করা হয়। আমি আশা করছি সরকার খুব শীঘ্রই দেশের জনগণকে কোভিড-১৯-এর টিকা প্রদান করতে পারবে।

৪৯। চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণ ও গুণগত মানোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ৪টি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, ২০২০’ প্রণীত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ২৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ১৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ১০ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৬ জন ব্যক্তির কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মাঠপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্রসমূহে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৫০। মুজিববর্ষে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিশ্রুত ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২০২১ সালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে।

৫১। জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ৪টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। আমদানিকৃত এলএনজিসহ প্রায় ১৩শত MMCFD গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি ও ১ হাজার ১৫৯ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের সরবরাহ ৪০ লক্ষ থেকে ৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন, মজুদ ক্ষমতা ৮ দশমিক নয়-চার লক্ষ থেকে ১৩ দশমিক দুই শূন্য লক্ষ মেট্রিক টন এবং এলপিজির ব্যবহার ৪৫ হাজার থেকে ১১ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৫২। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ২৪টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ২০২০ সালে উন্নয়ন খাতে প্রায় ১ হাজার ৫৩২ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুতিকরণসহ প্রায় ১ হাজার ৪১৬ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, ৮৫টি সেতু ও ৭৫২টি কালভার্ট নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। পরিচালন খাতের আওতায় প্রায় ২ হাজার ৩৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক মেরামত, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং ২৭টি সেতু ও ১১৯টি কালভার্ট নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। সরকার ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪-লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছে। বর্তমানে প্রায় ৪৪১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক উভয়পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতকরণ ও প্রায় ১৭৬ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক সার্ভিস লেন ব্যতীত ৪-লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে।

৫৩। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর আওতায় সরকার ৬টি এমআরটি লাইন নির্মাণের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা-২০৩০ গ্রহণ করেছে। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক এক-শূন্য কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ এর এ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। ইতোমধ্যে ডিপোর অভ্যন্তরে ও ভায়াডাক্টের উপর প্রায় ১৪ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে। পাতাল ও উড়াল মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ৩১ দশমিক চার-এক কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের লক্ষ্যে ডিটেইলড্ ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে।

২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুটের বেসিক ডিজাইন ও সার্ভে এবং ১৭ দশমিক চার-শূন্য কিলোমিটার দীর্ঘ সাউদার্ন রুটের কাজ চলমান রয়েছে। গণপরিবহনে যাতায়াত সুবিধার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম এবং র‌্যাপিড পাস-এর পরিধি বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৫৪। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’র দুই প্রান্তের মাওয়া ও জাজিরা সংযোগকারী সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপন করার মাধ্যমে সেতুর ছয় দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ জুলাই ২০২২ সাল নাগাদ সমাপ্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের সমম্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক তিন-দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের নির্মাণকাজ ডিসেম্বর ২০২২ সাল নাগাদ সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে টানেলের ১ম টিউবের নির্মাণ শেষে গত ১২ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ২য় টিউবের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত র‌্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক সাত-তিন কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ জুন ২০২৩ সাল নাগাদ সম্পন্ন হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ১১টি রুটের ২৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ২০২১ সালের জুন নাগাদ সমাপ্ত হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বালিয়াপুর হতে নিমতলী-কেরানীগঞ্জ-ফতুল্লা-বন্দর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত ৩৯ দশমিক দুই-চার কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

৫৫। বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি পরিকল্পিত গণপরিবহন হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার জুলাই ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪৪ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, ৩৬৮টি সেতু এবং ৭৪টি স্টেশনভবন নতুন নির্মাণ করেছে। প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার রেলপথ, ৩৫৩টি সেতু এবং ৭৪টি স্টেশন ভবন সংস্কার করা হয়েছে। ২০০টি যাত্রীবাহী কোচ সংস্কার, নতুন ৪৭৮টি যাত্রীবাহী কোচ সরবরাহ এবং বিভিন্ন রুটে মোট ৪৮টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’-এর ভিত্তি প্রস্তর ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে শুভ উদ্বোধন করেছেন। চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ীর মধ্যে পুনঃরেল সংযোগ ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুভ উদ্বোধন করেন।

৫৬। নৌ-পথ উন্নয়নে ২০১৪-২০ মেয়াদে প্রায় ১ হাজার ১০৬ লক্ষ ঘনমিটার উন্নয়ন ড্রেজিং ও ৬৬৬ লক্ষ ঘনমিটার সংরক্ষণ ড্রেজিং করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘Lloyd’s List’ জরীপে বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ সমুদ্র বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর বিগত ১১ বছরে ৯৮তম স্থান থেকে বর্তমানে ৫৮তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। বিগত পাঁচ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক পাঁচ-নয় শতাংশ এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক এক-তিন শতাংশ হয়েছে। গত ১০ বছরে মোংলা বন্দরের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ শতাংশের অধিক। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে ১১টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং আরও ১০টি স্থলবন্দর চালু করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কর্তৃক ৩টি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহ করা হয়েছে। চীন থেকে আরও ৬টি নতুন জাহাজ সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান আছে।

৫৭। আকাশপথে ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এতে বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রীধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটে ১২ হাজার ১০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। সিলেটে ওসমানী এবং চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে এর রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন প্রজন্মের ১৩টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানবহরে সংযোজন করা হয়েছে। আগারগাঁওস্থ শেরেবাংলা নগরে ১৩তলা বিশিষ্ট ‘পর্যটন ভবন’ নির্মাণ করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৫৮। দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এ লক্ষ্যে ১৮টি সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন ও সময়োপয়োগী করা হয়েছে। পুলিশ, এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পাওয়ার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ সেবাসহ অনলাইন জিডি, মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সকল থানায় পৃথক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে পুলিশের সেবা প্রদানের মান উন্নয়ন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক ও আত্মগোপনকারী আসামী ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড রায় কার্যকর করা হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফ-এর যৌথ প্রচেষ্টায় যশোরের

৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার সীমান্ত ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। অস্থায়ী ব্যাটালিয়ন আনসার এবং অঙ্গীভূত আনসার-সদস্যদের রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সম্মানি বৃদ্ধি করে সময়োপযোগী করা হয়েছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রথমবারের মতো সুনির্ধারিত পোষাক ও অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’কে আধুনিক ইনশোর ও অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল কমিশনিংসহ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে মাঠপ্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

৫৯। মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে ডোপ টেস্ট কার্যকর করা হয়েছে। পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মানোন্নয়নে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত ১টি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের অংশ হিসাবে এ পর্যন্ত ৪৫৬টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে। কারাবন্দিদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৩৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হচ্ছে এবং খাদ্যের মানোন্নয়নে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৬০। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’-এর আলোকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের ১৭টি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজিত হয়েছে। দু’টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসাবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে। গত ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি নৌবাহিনীতে ৩১টি জাহাজ, দুটি মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং দুটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে আধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, র‌্যাডার, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে ৩১ আগস্ট ২০২০ তারিখে প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করেছে। বর্তমানে ৭টি দেশের ৭টি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী এবং পুলিশের মোট ৬ হাজার ৮৬৫ জন শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

৬১। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। এ নীতির ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নাটকীয় সম্পর্ক, ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপ ও ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকটের মধ্যে সরকার বিশ্বের বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবিকার ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে পুনঃনিয়োগের ব্যবস্হা করে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার বাংলাদেশীর দেশে প্রত্যাবর্তনসহ বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রায় ৩০ হাজার বিদেশি নাগরিক নিজ দেশে সুষ্ঠুভাবে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৬২। বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন বিচারক নিয়োগ, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। অসহায় ও দুস্থদের আইনি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সংবিধান প্রদত্ত বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। মামলা ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনি কাঠামো সুসংহতকরণে ২০২০ সালে ১৮টি আইন, ৪টি অধ্যাদেশ, ২৭৩টি সংবিধিবদ্ধ প্রজ্ঞাপন এবং ৫৮টি চুক্তি নিরীক্ষা করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৬৩। দক্ষ, সেবামুখী, কল্যাণধর্মী ও দায়বদ্ধ জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ৩৯তম বিশেষ বিসিএস-এর মাধ্যমে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য জরুরি প্রয়োজনে নবসৃষ্ট সহকারী সার্জনের স্থায়ী ক্যাডার পদে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৪২তম বিশেষ বিসিএস-এর মাধ্যমে আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সিনিয়র সচিব থেকে সহকারী সচিব এবং গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৪ পর্যন্ত সর্বমোট

১ হাজার ২৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩৫ হাজার ৪০১টি পদ সৃজন এবং ৪ হাজার ৯টি পদ স্থায়ীকরণে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুবরণ অথবা গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতাজনিত মোট ১ হাজার ৪১১টি পরিবারের অনুকূলে ১০৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

৬৪। বাঙালি জাতির জীবনে শ্রেষ্ঠ গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংবলিত একটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে সম্মানি ভাতা প্রদান সহজতর হয়েছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে ১৪ হাজার গৃহ নির্মাণ করে বিনামূল্যে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন’-এর নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন শীর্ষক’ প্রকল্প এবং ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্যানোরমা নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

জনাব স্পিকার,

৬৫। বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র, ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মাননাসমূহ সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, ও দূরদর্শী দর্শন-চিন্তায় আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননাসমূহ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আবারও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

জনাব স্পিকার,

৬৬। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি অর্জন করে লাল-সবুজ পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ৭ই মার্চের ভাষণ, তাঁর জীবন ও দর্শন বাঙালিসহ বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনুসরণীয়। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক ও দূরদর্শী নের্তৃত্ব এবং গভীর দেশপ্রেম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। নতুন প্রজন্মের কাছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জাতির পিতার জীবন-দর্শন ও কর্ম বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য উদ্‌যাপিত হচ্ছে ‘মুজিববর্ষ’ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। ‘মুজিববর্ষ’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্‌যাপনের জন্য মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা স্ব-স্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

জনাব স্পিকার,

৬৭। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অভিন্ন সত্তা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কিংবদন্তি। আপসহীন নেতৃত্ব দৃঢ় মনোবল আর ত্যাগের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রধান নেতা। প্রতিটি বাঙালির কাছে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তির মূলমন্ত্র। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। মুজিববর্ষ উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় সরকার মুজিববর্ষের মেয়াদকাল ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। মুজিববর্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘মুজিববর্ষ’ পালনের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

জনাব স্পিকার,

৬৮। আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দারপ্রান্তে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদেরকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর মধ্য-আয়ের দেশ হিসাবে আমরা ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ পালন করবো। তবে, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হবো।

৬৯। জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। গণতন্ত্রায়ন, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

জনাব স্পিকার,

৭০। দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন, দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

আপনাদের সবাইকে আমি আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

জয় বাংলা

খোদা হাফেজ।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৫:৪৮   ১০৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ