আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ, বিএনপি নেতাদের এমন দাবি করা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার সাবেক ছাত্রদল নেতা গ্রেফতারকৃত আবু হানিফ টিটু নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেফতার হয়েছেন। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।
এর আগে রোববার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহামসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে টিটুকে রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয।
গ্রেফতারকৃত আবু হানিফ টিটু নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার একাব্বরপুর এলাকার মৃত নূরুল আমিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি একই থানার চার নম্বর আলীপুর ইউনিয়নের যুবদল নেতা। গত ৬ মাস ধরে টিটু হায়দার নিখোঁজ ছিল।
তার বিরুদ্ধে সেখানকার থানায় বিভিন্ন অভিযোগে সাত থেকে আটটি মামলা রয়েছে এবং প্রত্যেকটি মামলায় তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত বছরের ২০ জুলাই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছিলেন, গত ৮ জুলাই টিটুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। অবিলম্বে টিটুকে জনসম্মুখে হাজির করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্স এর কর্মকর্তা সার্জেন্ট যুবায়ের বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের ওয়াক্তের সময় মহাসড়কে আমিসহ আমার টীম দায়িত্ব পালন করছিলাম।
এসময় এক যুবক আমাদের দেখে আচমকা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন আমার তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। নাম ঠিকানা একেকবার একেক কথা বলেছে। নিজেকে হানিফ নামে পরিচয় দেয়।
নোয়াখালির বেগমগঞ্জে বাড়ি বলেও জানায়। তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অবগত করি। থানার ওসিকেও বিষয়টি জানানো হয়।
পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে সাদ্দাম হোসেন নামের একজন এস আই আমার কাছে আসলে আমরা তার কাছে ওই যুবককে হস্তান্তর করি। এস আই সাদ্দাম হোসেন তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সাদ্দাম হোসেন বলেন, রাতে আমি ডিউটি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ডিউটি করছিলাম। পরে জানতে পারি শিমরাইল পুলিশ বক্সে সার্জেন্ট যুবায়ের স্যারসহ একটি টীম টিটু নামে বেগমগঞ্জে থানার অনেকগুলোর মামলার পলাতক আসামিকে আটক করেছেন।
পরে ওসি স্যারের নির্দেশে আমি তাকে থানায় নিয়ে আসি। রাতেই তার বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানয় যতো মামলা আছে তার সকল নথিপত্র থানা থেকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়। সকালে আমরা তাকে আদালতে পাঠাই। শুনেছি নারায়ণগঞ্জের আদালত তাকে নোয়াখালি জেলা আদালতে পাঠাবেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
টিটুর স্ত্রী নুসরাত জাহান মনি বলেন, আমার স্বামী টিটু রাজধানীর ডেমরার হাজীনগরে তার খালাতো বোনের বাসায় থাকতো। একটি প্রতিপক্ষ আমার স্বামীকে দীর্ঘ দিন ধরেই মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। তাই ভয়ে তিনি এলাকায় থাকতেন না।
টিটুর মা ফাতেমা বেগম জানান, আমার ছেলে টিটুর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সে কোনো অপরাধে জড়িত না।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, আবু হানিফ টিটু টিটুকে আটকের পর বেগমগঞ্জ থানা থেকে আমাদেরকে জানানো হয় তার বিরুদ্ধে সাত/আটটি মামলা রয়েছে এবং সে এসব মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।
তবে সে ছাত্রদল বা যুবদল নেতা কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। রাতে আটকের পর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে সকালে নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করা হয়।
পরে আদালতের মাধ্যমে বেগমগঞ্জ থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সেখানকার আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুর হয়। তাকে নিয়ে যেতে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ এখানে আসবে বলে আমাদেরকে জানানো হয়।
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আবু হানিফ টিটু গত চার মাস ধরে এলাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। রবিবার তিনি পালিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করে।
টিুট কোন গাড়িতে চড়ে রওনা হয়েছে সেটিও স্পষ্টভাবে বলা হয। এরই ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জের শিররাইল এলাকা থেকে টিটুকে আটক করে সার্জেন্ট যুবায়েরসহ ট্রাফিক পুলিশের একটি দল।
পরে আটকের বিষয়টি বেগমগঞ্জ থানায় নিশ্চিত করা হলে সেখানকার পুলিশ তাকে বুঝে নিতে রাতেই নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০১:৪০ ৫৯ বার পঠিত