নিউজ২নারায়ণগঞ্জঃ পবিত্র রমজান আসতে এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি। তারপরেও রমজানের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। রোজা শুররু আগে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেড়েছে। বেড়েছে মুরগির দামও। বিশেষ করে দেশি ও পাকিস্তানি বলে খ্যাত মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাত তুলে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সবজির দামও। বেশ কয়েকটি সবজির দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। করলা, পটল, বরবটি, ঢেড়শের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩৮ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি পড়ছে ২৮ টাকা। ঠিক এক সপ্তাহ আগে কারওয়ান বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ছিল ৩৪ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ২৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকায় উঠেছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা রসুনের দামও কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এবারো বলা হয়েছে রমজানে পণ্যের মূল্য বাড়বে না। এ ধরনের কথা প্রতি বছরই বলা হয়। কিন্তু রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের মানসিকতা একই। ফলে বাজারে আগুন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, পণ্যমূল্য সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে- এই ধরনের সংবাদ নতুন কোনো বিষয় নয়। এসব বাংলাদেশের মানুষের গা সওয়া হয়ে গেছে।
বিস্ময়কর হলো, গত বছর পেঁয়াজ ও মরিচের দামও বেশ চড়া ছিল। ১৩০ টাকা কেজি দরের নিচে নামেনি কাঁচামরিচ। দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ ছিল বেশ। পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার ওপরে। এবারও যে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? এক দোকান থেকে আরেক দোকানে গেলেই দাম বাড়তি। সরবরাহ সংকটের অজুহাত তুলে বাড়িয়ে দেয়া হয় দাম। আসলে বাজারে পণ্যের কোনো সংকট নেই এবং ব্যবসায়ীদের অজুহাতেরও যেন শেষ নেই। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই। এই চিত্র বদলেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে বাজার আগের মতোই রয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন। তারপরেও বলব, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো জিনিসের দাম কমেছে, এমন খবর ক্রেতাসাধারণ খুব কমই পেয়েছে।
যারা নিয়মিত বাজার করেন অথবা খোঁজখবর রাখেন বাজারের, তাদের পক্ষে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। ভেজাল খাদ্যপণ্যই যে কেবল জীবন বিনষ্টের উল্লেখযোগ্য কারণ তা নয়, দেশের অতি উচ্চমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আনলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মূল্য পরিস্থিতির কারণেও গৃহকর্তার জীবনঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যে উচ্চস্তরে উঠেছে সে তুলনায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে কিনা। যে জিনিসের দাম এক লাফে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে তা বর্তমানে ২ টাকা কমালে প্রকৃত অর্থে কি দাম কমল?
এর জবাব কে দেবে? মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে চলছে অরাজকতা আর খামখেয়ালিপনা। জনগণকে বারবার দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বে ফেলে দেয়া কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ নয়। তবে বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। যতদিন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানদারদের মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন বাজার নিয়ন্ত্রণহীন থাকবেই। আর এর শিকার হবে দেশের অসহায় জনগণ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫:২৫ ৬৫৩ বার পঠিত