৯০ দশকে ব্যান্ড সঙ্গীতের তুমুল জনপ্রিয়তা এই সময়ে আছে কি না তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। ব্যান্ড দল ফিডব্যাকের দুই সদস্য ফুয়াদ নাসের বাবু আর লাবু রহমান মানেন না, জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েছে।
কে ফিডব্যাকের দেয়া সাক্ষাৎকারের শেষে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে ব্যান্ড সঙ্গীত এখন দেশে কতটা জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে ৯০ সালের পরে ব্যান্ডের মুভমেন্ট আগের মত আর নেই, এমনটাই ব্যান্ড জগতের অনেক অগ্রজের অভিমত। আসলেই কি তাই?
ফুয়াদ নাসের বাবু: আমি এই কথাটাকে মানতে পারি না। তার কারণটা হলো, বিগত পাঁচ কিংবা ১০ বছরে ঢাকার বাহিরে যে পরিমাণ ব্যান্ডের কনসার্ট হয়েছে সেখানে শ্রোতার সংখ্যা মোটেও কম ছিল না। আর বতর্মানে যখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোন কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় তখন সেখানে শ্রোতাদের উপস্থিতি কেমন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চোঁখ বুলালেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমি তো কোথাও শ্রোতা কম দেখি না।
ফিডব্যাকের যারা ভক্ত ছিলেন তারা কি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ফিডব্যাককে পরিচিত করতে পেরেছেন?
লাবু রহমান: আমরা যখন গান করতাম তখন আমাদের কিছু ডাইহার্ট শ্রোতা ছিল। তারা আমাদের গান ছাড়া কিছু বোঝতেন না। সেই সময় কনসার্ট মানে সেই সময়ের হাতেগোনা কয়েকটা ব্যান্ড দল।
তখন আমাদের ব্যান্ডসহ পুরনো যে কয়েকটা ব্যান্ড ছিল, সেই ব্যান্ডগুলো যখন কোথায় শো করত, তখন তারা সেখানে গিয়ে পুরো শোয়ের সবগুলো গান উপভোগ করতেন। তারা যেভাবে আমাদের গানগুলো শুনে আনন্দ করতেন এবং সেই গানগুলো বুকে ধারণ করতেন।
সেই শ্রোতারাই যখন ৯০ দশকের পরে জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাদের সিংহভাগ যারা আমাদের ডাইহার্ট ফ্যান ছিলেন তারাই আমাদের গান শোনা বন্ধ করে দিলেন।
এরপরেও একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে, আমাদের ডাইহার্ট ফ্যানরা আর ফিরে আসেনি। যারা আমাদের গান গেয়ে প্রেম করত তারা তাদের সন্তানদের বলে যায়নি তোমরা এই গানগুলো (ফিডব্যাকের গান) শোনা। আমি মনে করি এখানেও একটা বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়েছে।
এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মকে পরম্পরা দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দূঃখজনত হলেও সত্য আমাদের যারা ডাইহ্রাট শ্রোতা বা ফ্যান ছিলেন তারাই এই চেইনটা ভেঙে ফেলেছেন।
এখনকার সময়ে ব্যান্ড এবং আধুনিক দুই ঘরানার ক্ষেত্রেই গানের লিরিকগুলোতে গল্পের অনুপস্থিতি প্রকট। কিন্তু আপনাদের সমসাময়িক ব্যান্ডের গানগুলোতে একটা গল্প থাকতো, এর নেপথ্যে কী কারণ ছিল?
লাবু রহমান: আমরা যখন কোন একটি গান করতাম, তখন সেই গানের পেছনে মাসের পর মাস সময় দিতাম।
এখানে একটা গল্প বলি, একবার আমাদের একটি হেভিমেটাল গান গিটারে বাজানোর জন্য আমি টানা ১৫ দিন হেভিমেটাল গান শুনেছি। আসলে আমাদের বেসিক খুবই মজবুত ছিল।
সেই প্রভাবটা আমাদের সব কাজেই পড়ত।
আমরা যখনই কোন গান করেছি তখন অনেক সময় নিয়ে শিখে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সেই গানটিকে পরিপক্ক অবস্থানে নিয়ে আসতাম।
কিন্তু এখনকার সময়ে হয়ত একটি গানের তৈরির ক্ষেত্রে গানের কম্পেজিশন, গানের কথা ইত্যাদির মধ্যে কোথাও যেন একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়।
তবে এটাও ঠিক, এখনকার সময়েও অনেক ভালো গান তৈরি হচ্ছে।
ফুয়াদ নাসের বাবু: সব গানই যে ভালো হচ্ছে তেমন নয়, তবে কিছু কিছু গান তো ভালো হচ্ছেই। গানের প্রতি মনোযোগ ও সময় দিলে অবশ্যই ভালো গান তৈরি হবে।
বর্তমানে অনেক মেধাবী ছেলেরা কাজ করছেন। তবে বর্তমানে যেই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি খারাপ, তা হচ্ছে- কোন জিনিসটা হিট হবে সেটাকে সবার আগে ভাবা হয়।
কেউ যদি ভালো গান করেন তাহলে এমনিতেই হিট হবে। আমরা কখনোই হিট করার চিন্তা করে গান করি নাই। প্রত্যেকের উচিত তার কাজের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বকীয়তার ছাপ রাখা।
তাহলে ফিডব্যাক কি কখনও তারকাখ্যাতির পেছনে ছুটেনি?
ফুয়াদ নাসের বাবু: মোটেই না। আমাদের সবসময় কাজের প্রতি প্যাশন ছিল। স্টারডাম ও গ্ল্যামার এইগুলো একেবারেই আজকালের বিষয়। আমরা এগুলো কখনোই ভাবিনি।
আমাদের অন্তরে শুধু মিউজিক ছিল। শুধুমাত্র মিউজিক করতে গিয়ে আমরা আমাদের জীবনে থেকে অনেক কিছু আত্নত্যাগ করেছি। সেই কথাগুলো না হয় তোলা থাক।
বতর্মান সময়ের নতুন ব্যান্ডদলগুলোর সম্পর্কে ফিডব্যাকের মূল্যায়ন কেমন?
লাবু রহমান: বতর্মানে যতগুলো ব্যান্ডদল কাজ করছেন তাদের পারফর্মেন্স খুবই ভালো। আমাদের সময় অনেকেই ছিল, যারা নিজের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে নিজের অবস্থার তৈরি করেছেন। তাই এখন যারা কাজ করছেন তাদের কাছ থেকেই আমি এখুনি তেমন কিছু প্রত্যাশা করছি না।
যদিও এখুনি অনেক ব্যান্ড যথেষ্ট ভালো ও ব্যতিক্রমর্ধী গান করছে। আমার বিশ্বাস ওরা ভবিষতে আরও অনেক ভালো গান করবে।
এ সময়ের ব্যস্ততা কেমন কাটছে?
লাবু রহমান: ফিডব্যাকের ব্যস্ততা সবসময়ই থাকে। নিয়মিত কনসার্ট ও নিজেদের মধ্যে অনুশীলন আমাদের সবসময় চলছে।
আরও পড়ুন: ‘মাকসুদের চলে যাওয়া মনোমালিন্যে নয়’
‘গানে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাব পড়ে’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০১:৪০ ৪২৫ বার পঠিত