রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ৭ জুন ঐতিহাসিক ৬-দফা উপলক্ষে
বাণী প্রদান করেছেন :
“বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬-দফা একটি অন্যতম
মাইলফলক। ঐতিহাসিক এ দিনে আমি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতার
প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ৬-দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য যাঁরা জীবন
দিয়েছেন আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
বাঙালির স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। ১৯৪৮ সালে বাংলাভাষার
দাবিতে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ’৫২-এর ভাষা
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। রচিত হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। এরপর ১৯৫৪
সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২
সালে শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বায়ত্বশাসনের লক্ষ্যে
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে লাহোরে সর্বদলীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ৬-দফা প্রস্তাব
পেশ করেন। শাসনতান্ত্রিক কাঠামো, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা, মুদ্রানীতি,
রাজস্ব ও করনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাহিনী গঠন এই ৬-দফার
মধ্যেই তিনি পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক স্বার্থকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন, যার মধ্যে নিহিত ছিল বাঙালির
স্বাধিকার ও স্বায়ত্বশাসনের রূপরেখা।
ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণার পর শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বারবার
গ্রেফতার করে এবং তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। তা সত্তে¦ও তিনি ৬-
দফার দাবি থেকে পিছপা হননি। তাঁর নেতৃত্বে দাবি আদায়ের আন্দোলন
বেগবান হয় এবং তা অল্পসময়ের মধ্যে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। শাসকগোষ্ঠী
৬-দফার আন্দোলন স্তিমিত করতে গ্রেফতার, নির্যাতনসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ
করে। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬-দফা দাবির সমর্থনে আওয়ামী লীগের আহ্বানে
প্রদেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট চলাকালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মদদে
পুলিশের গুলিতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১১ ব্যক্তি নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন
অনেকে।
ঐতিহাসিক ৬-দফা কেবল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারা বিশ্বের
নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণারও উৎস। তরুণ
প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ৬-দফার দাবি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে বলে
আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত
সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে তথা সুখী-সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়তে আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৫:১৬ ৪২৫ বার পঠিত