মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি : সবুজ পাতার ফাঁকে রোদের ঝিলিমিলি আলোতে গাছে চকচক করছে কমলা। লালমনিরহাটের সদর উপজেলার হাড়িভাঙা এলাকার দার্জিলিং ও চায়না কমলা বাগানে দেখা মেলে এমনি উপভোগ্য দৃশ্য। বাগানটি করেছেন একরামুল হক নামের এক উদ্যোক্তা। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে প্রায় ৬২ একরের সমতল ভূমিতে কমলা ও মাল্টা বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
৩ বছরের মাথায় কমলা ও মাল্টা চাষে অভাবনীয় সাফল্যে প্রায় কোটি টাকার ফল উৎপাদনে ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে তার। এছাড়াও তিন জেলায় প্রায় ৭০ জন কর্মচারী কাজ করছেন তার বাগানে।
এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তেমনি স্বল্পমূল্যে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ ও ভিনদেশী এসব ফল হাতের নাগালে কিনতে পারছেন এখানকার মানুষ। এছাড়াও জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্নস্থানে কমলা ও মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
এ বছর জেলায় এসব ফলের ভালো ফলন হওয়ায় কমছে আমদানি নির্ভরতা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রংপুর বিভাগ ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব মাল্টা ও কমলা বিক্রি হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে ও বাজারে ভালো মূল্য পাওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করছেন কমলা ও মাল্টা বাগান মালিকরা।
স্থানীয়রা জানান, উদ্যোক্তা একরামুল হকের শুরুটা অনেক কষ্টের ছিল। তিনি কুড়িগ্রামে প্রথমে এই কমলা চাষ শুরু করেন। ওই সময় বেশকিছু গাছ নষ্ট হয়। কিন্তু তিনি হাল না ছেড়ে আবারও শুরু করেন কমলা বাগানের চাষ। এভাবেই চেষ্টার পর এখন তিনি সফল এক উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে কমলা ও মালটা চাষ শুরু করেছেন। তার চিন্তা রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় কৃষকদের কমলা চাষ করা শেখাবেন। এতে করে বিষবৃক্ষ তামাক চাষ ছেড়ে তারা ভিটামিন যুক্ত ফল চাষ করবেন বলে তার আশা।
স্থানীয় এক শিক্ষক মশিউর রহমান জানান, পরিত্যক্ত জমিতে কমলা চাষ করে সত্যিই একরামুল হক তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তরুণ সমাজকে নতুন কিছু শেখাবেন। বর্তমানে লালমনিরহাটে বিষবৃক্ষ তামাক চাষ বেশি হচ্ছে। এসব চাষ বাদ দিয়ে কমলাসহ বিভিন্ন ফলজ ও চারা চাষ করছেন। যেটি সত্যিই আমাদের জন্য আনন্দের।
নার্সারি ব্যবসায়ী একরামুল হক জানান, শুরুটা ছিল অনেক কষ্টের। যদিও প্রথমে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। তবুও তিনি থেমে যাননি। তিনি বলেন, গাছের প্রতি প্রেম থেকে নার্সারি ব্যবসা । একপর্যায়ে জমি লিজ নিয়ে ফল ফলাদির বাগান করতে শুরু করেছি। সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে এসব করেছি। লালমনিরহাটের ৪ একর জায়গা লিজ নিয়ে দুই হাজার মাল্টা ও ৫০০ কমলা গাছ লাগানোর সুযোগ হয়েছে। ৩ বছরের মাথায় গাছে ফল আসায় গত বছর ৭০ লাখেরও বেশি টাকা আয় করেছি। এছাড়া কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীর বিভিন্নস্থানে ৫৫ একর জায়গা জুড়ে ফল বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কয়েক প্রজাতির কমলা, মাল্টা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করা হয়।
একরামুলের মতো জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা, পাটগ্রামেও গড়ে উঠেছে মালটা ও কমলা বাগান। দৃষ্টিনন্দন বাগানগুলোতে ফুসরত পেলেই পরিবারসহ ঘুরতে আসছেন অনেকেই। ভিনদেশী উচ্চভিলাসী এসব ফলের সারি সারি গাছ ও গাছের রঙ্গিন ফল দেখে অভিভূত হচ্ছেন তারা। বাগানগুলোতে কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জেলায় মাল্টা ও কমলার নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। খুচরা ও পাইকারিভাবে বেচাকেনায় প্রতিবছর এসব বাগান থেকে কোটি টাকারও বেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। বাজার ভালো হওয়ায় ব্যবসার পরিধিও দিন দিন বেড়েই চলেছে।
মাল্টা বাগান ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষিকা সেতু বেগম জানান, সীমান্তের এই জেলায় এত সুন্দর কমলা ও মাল্টা চাষ হচ্ছে সত্যি ভাবাই যায় না। একরামুল হকের মতো আমাদের তামাক না চাষ করে বিভিন্ন ফল চাষ করা উচিৎ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, গত দুই বছর থেকে জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির কমলা ও মাল্টার বাগান থেকে ভালো উৎপাদন হচ্ছে। বাজারে ফলের চাহিদা বেশি থাকায় দিন দিন নতুন বাগান তৈরির উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। ফলে ব্যবসার পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা চেষ্টা করছি যেন আরও উদ্যোক্তা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩০:০৮ ৩৯৭ বার পঠিত