নাগরিকত্ব না দিলে মিয়ানমারে ফিরবে না রোহিঙ্গারা

প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » নাগরিকত্ব না দিলে মিয়ানমারে ফিরবে না রোহিঙ্গারা
শনিবার, ৬ মে ২০২৩



নাগরিকত্ব না দিলে মিয়ানমারে ফিরবে না রোহিঙ্গারা

নিজ দেশে নাগরিকত্ব দেয়া না হলে স্বদেশে ফিরে যাবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিয়ানমারের ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি’ দেখে ফিরে এসে এ কথা জানান তারা।

নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরার স্বপ্নে কেটে গেছে ছয় বছর। দুবার দিনক্ষণও ঠিক হলেও মিয়ানমারের ছলচাতুরীতে একজন রোহিঙ্গারও প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি। সম্প্রতি নিজ দেশের নাগরিকদের যাচাই-বাছাইয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসলে নতুন করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশে ফেরার স্বপ্ন নিয়ে মিয়ানমারে ‘পরিবেশ ও পরিস্থিতি’ দেখতে টেকনাফ জেটি ঘাটে জড়ো হন ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা। যাদের রয়েছে ১৭ জন ও ৩ জন নারী।

সেখানকার (মিয়ানমার) ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি’ দেখে এসে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলছেন, নাগরিকত্ব না দিলে তারা স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাখাইন রাজ্যে ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা স্বাধীনভাবে বসবাস করছে। এখন দুপক্ষকে ছাড় দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে।

এর আগে শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৯টায় টেকনাফ থেকে মিয়ানমারের মংডু যান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বেলা ১১টার দিকে প্রতিনিধি দলটি রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে পৌঁছায়। পরে মংডু শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও বসতি পরিদর্শন করেন তারা।

এ সময় দলটির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো ঘুরে দেখেন।

তারপর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও তাদের সহযোগিতা করতে যাওয়া সাত সদস্যের সরকারি কর্মকর্তা শুক্রবার পৌনে ৬টায় মিয়ানমার থেকে টেকনাফে এসে পৌঁছায়।

রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্য আবু সুফিয়ান বলেন, মংডু শহরের আশপাশে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন তারা। সেখানে তার গ্রামের কোনো অস্তিত্ব নেই। সব কিছু পাল্টে গেছে। ক্যাম্প তৈরি করেছে। এসব ক্যাম্পেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার।

মোহাম্মদ সেলিম নামের প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি নিজেই কথা বলেছেন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার দাবি জানালেও তাকে জানানো হয়েছে আপাতত নাগরিকত্ব দেয়া হবে না। এনভিসি কার্ডে তাদের ক্যাম্পে থাকতে হবে। মিয়ানমারের এমন শর্তে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন না সেলিম।

রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলকে রাখাইনের বেশকিছু গ্রাম, পুনর্বাসন কেন্দ্র, ট্রানজিট কেন্দ্রসহ নানা অবকাঠামো দেখানো হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের মংডু শহরও দেখিয়েছেন। মংডু শহরে প্রচুর রোহিঙ্গা আছে। তারা সেখানে অবাধে চলাফেরাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। যতটুকু জেনেছি, সেখানে (মংডুতে) ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা মুসলমান থাকেন। এসব রোহিঙ্গা স্বাধীনভাবে বসবাস করছে।

জন্মভূমিতে পুনর্বাসন করা না হলে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরবেন না, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের কয়েকজন সদস্যদের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ রকম কথা বললে সমস্যার সমাধান হবে না। দুই পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। সন্তুষ্টির বিষয়টা আপেক্ষিক। যে সমস্যা ৬০-৭০ বছর ধরে সমাধান হচ্ছে না, তা এক-দুদিনে কীভাবে সম্ভব। আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। প্রত্যাবাসন যেন টেকসই হয়, সে নিরিখে কাজ হচ্ছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী এবং প্রত্যাবাসন কখন শুরু হবে, জানতে চাইলে মো. মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখানে (বাংলাদেশ) আসবেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। সবকিছু করা হচ্ছে আস্থা অর্জনের জন্য। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে আসার পর জানা যাবে প্রত্যাবাসন কখন শুরু হবে।

এর আগে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে গত ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রিত ৪৮০ জন রোহিঙ্গা তালিকা যাচাই-বাছাই করেন।

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য আট লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকায় দিয়েছিল। সে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৯ সালে অগাস্টে চীনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেয়া হয়।

কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাননি। এখন আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের পক্ষ থেকে এই তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেয়া হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৫:৫৫   ২১৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চট্টগ্রাম’র আরও খবর


সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে যে যার ধর্ম পালন করছে : ধর্ম উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান রাজনৈতিক দলগুলোর
রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে প্রস্তুত: খলিলুর রহমান
ফেব্রুয়ারিতে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
ওয়াকফ সম্পত্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকার কাজ করছে - ধর্ম উপদেষ্টা
রাজনীতি ত্যাগের জন্য, পকেট ভরার জন্য নয়: এ্যানি
পিআরের উদ্দেশ্য হলো ‘যদি কিছু পায়’: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক উদ্বোধন করলেন সুপ্রদীপ চাকমা
দেশপ্রেম ও মানবকল্যাণে উৎসাহিত হওয়ার আহ্বান উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার
বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করতে হলে মতপার্থক্য দূর করতে হবে: এ্যানি

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ