বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

এক মৌসুমেই বদলে যাওয়া নিউক্যাসল

প্রথম পাতা » খেলাধুলা » এক মৌসুমেই বদলে যাওয়া নিউক্যাসল
বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩



এক মৌসুমেই বদলে যাওয়া নিউক্যাসল

ইউরোপের অনেক ক্লাবেরই স্বপ্ন থাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার। সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার জন্য অনেক খেলোয়াড়ই প্রিয় ক্লাব ত্যাগ করে অন্য ক্লাবে যোগ দেয়। ফলে কোনো একটি দল দীর্ঘদিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে উঠলে তাদের আনন্দটা আরও বেড়ে যায়। যেমনটা হয়েছে চলতি মৌসুমে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সঙ্গে। দীর্ঘ ২০ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সুযোগ হয়েছে তাদের। তবে এক মৌসুমেই বদলে যাওয়া দলটি ইউরোপে কতটুকু সফলতা পাবে?

২০২১ সালের অক্টোবরে নিউক্যাসলের ৮০ শতাংশ মালিকানা কিনে নেয় সৌদি রাজপরিবার। সে সময় দলটি ছিল পয়েন্ট তালিকার ১৯ নম্বরে। পরের মাসেই কোচ হিসেবে তারা নিয়ে আসে এডি হাউকে। এরপরেই বদলে যাওয়া শুরু। আগের মৌসুমে অবনমনের শঙ্কায় থাকা দলটিই এবার শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করা নিশ্চিত করেছে। যার ফলে পেয়ে গেছে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট।

গত সোমবার (২২ মে) ঘরের মাঠে লেস্টার সিটির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা নিশ্চিত করতে সেই এক পয়েন্টেরই দরকার ছিল ম্যাগপাইসদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিশ্চিত করে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে পুরো দল। আর হবেই-বা-না কেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সুযোগ যে এসেছে দীর্ঘ ২০ বছরের অপেক্ষার পর। তবে যে দলটা গত মৌসুমে অবনমন থেকে কীভাবে বাঁচবে তার জন্য লড়ছিল, তারা কীভাবে এক মৌসুমেই বদলে গেল!

সৌদি রাজপরিবারের ভূমিকা
এটা মানতেই হবে, নিউক্যাসলের বদলে যাওয়ার মূল কারিগর সৌদি রাজপরিবার। ২০২১ সালের অক্টোবরে নিউক্যাসলের ৮০ শতাংশ মালিকানা কিনে নেয় সৌদি যুবরাজের মালিকানাধীন কনসোর্টিয়াম। যার ফলে শুধু ইউরোপেই নয়, পুরো বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্লাবে পরিণত হয় ইংল্যান্ডের এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। তারপর ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির দিকে আগ্রহ বাড়তে থাকে সবার। সমর্থকদের পাশাপাশি খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের মাঝেও একটা বিশ্বাস চলে আসে, এবার বদলে যাবে নিউক্যাসল।

একসময় ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর একটি বর্তমানে আবারও তাদের সেই সম্মান ফিরে পাচ্ছে। লিভারপুল-ম্যান ইউনাইটেডের রাজত্বে থাকা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চারবার শিরোপা জিতেছে নিউক্যাসল। তবে ইউরোপে তাদের রেকর্ডটা তেমন ভালো নয়। কিন্তু সবার বিশ্বাস, সৌদি রাজপরিবারের ছোঁয়ায় ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর একটিতে পরিণত হবে ম্যাগপাইসরা।

পরিকল্পিত খেলোয়াড় কেনা
যখন নিউক্যাসল পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ক্লাবে পরিণত হয়, তখন থেকেই ফুটবল-পণ্ডিতরা ধারণা করেন ইউরোপের সেরা ফুটবলারদের কিনে নেবে তারা। ইউরোপীয় গণমাধ্যম তখন বেশকিছু রিউমারও ছড়ায় যে, ইউরোপের সেরা কিছু ফুটবলারকে দলে নিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে নিউক্যাসল। তাদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে রিয়াল মাদ্রিদের ওয়েলস তারকা বেল, বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কুতিনিয়ো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি, পিএসজির আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার ইকার্দি ও কোস্টারিকান গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে নিয়ে।

তবে শেষ পর্যন্ত এই ফুটবলারদের একজনকেও দলে নেয়নি নিউক্যাসল। চলতি মৌসুমের শুরুতে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারির উইন্টার ট্রান্সফারে বেশকিছু ভালো এবং তরুণ খেলোয়াড় সাইন করিয়েছে নিউক্যাসল। তাদের টার্গেট ছিল এমনসব খেলোয়াড়, যারা ক্লাবের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। যার জন্য তারা চুক্তি করায় তরুণ কিছু ফুটবলারকে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ফরাসি ক্লাব লিওঁর মিডফিল্ডার গুইমারেস, লিলের ডিফেন্ডার স্টিভ বোটম্যান, রিয়াল সোসিয়েদাদের স্ট্রাইকার আলেকজান্ডার ইসাক।
Alexander Isak: Sweden striker edging towards full fitness just in time to boost Newcastle’s top-four chase | Football News | Sky Sports
আলেকজান্ডার ইসাক। ছবি: স্কাই স্পোর্টস

এ ছাড়াও ইংলিশ বেশকিছু ক্লাবের ফুটবলারদেরও চুক্তি করায় নিউক্যাসল। তাদের মধ্যে চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন গোলরক্ষক নিক পোপ, ম্যাট টার্গেটসহ অনেকে। ফলে চড়া দামে নামিদামি খেলোয়াড়দের দিকে নজর না দিয়ে যারা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে, তাদেরই দলে ভিড়িয়েছে তারা। যার ফলে এই সাফল্য পেয়েছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড।

আগামী মৌসুমের পরিকল্পনা
পরিকল্পিতভাবে কাজ করেই আজ নিউক্যাসল এ অবস্থায় পৌঁছেছে। মাত্র ১৮ মাস আগে দলের দায়িত্ব নেয়ার সময় এডি হাউয়ে বলেছিলেন, ‘আমি এখানে (নিউক্যাসল) টিকে থাকতে আসিনি। আমি এই দলকে বদলে দিতে এসেছি।’ সেই বদলে যাওয়া তার হাত ধরেই হয়েছে। তবে এখন দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেয়ার পর আরও বদল আনতে চান হাউয়ে। তিনি আগামী মৌসুমে লিগ শিরোপার জন্য লড়তে চান। যার জন্য এখন থেকেই বড় বড় খেলোয়াড়ের দিকে চোখ তার।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আগামী মৌসুমে নেইমারকে দলে টানতে চাচ্ছে নিউক্যাসল। তার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে ইংলিশ ক্লাবটি। পাশাপাশি গত মৌসুমে বার্সেলোনায় যোগ দেয়া ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনহা, চেলসির কলিন গ্যালাগার, আয়াক্সের কুদ্দস ও ক্রিস্টাল প্যালেসের এবেরেচি এজে-কে দলে টানতে যাচ্ছে তারা। তবে এবারও তারা ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় নয়, বরং এমনসব খেলোয়াড়ের দিকে নজর দিচ্ছে যারা দলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো টুর্নামেন্টে খেলতে হলে এমন কিছু খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে হবে, যাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যার জন্যই এবার বড় কিছু খেলোয়াড়ও কিনতে পারে নিউক্যাসল। পাশাপাশি ম্যাগপাইসদের আগামী মৌসুমে লক্ষ্য লিগ শিরোপা; ফলে ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল, লিভারপুলদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে দলে বড় খেলোয়াড়ের প্রয়োজন।

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই সফলতা কি ধরে রাখতে পারবে নিউক্যাসল? কারণ, ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাময় লিগ হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। আর এই লিগে এক মৌসুমে একটি দল ভালো করলে পরের মৌসুমে সেই সফলতা ধরে রাখতে পারে না–এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে ব্ল্যাকবার্ন রোভার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছিল। তবে ১৯৯৯-০০ মৌসুমে তারা দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়। এরপর প্রথম বিভাগে উঠলেও সেই সফলতা ধরে রাখতে পারেনি।

অপরদিকে লেস্টার সিটির কথাই বলা যাক। ২০১৫-১৬ মৌসুমে সবাইকে চমকে দিয়ে লিগ শিরোপা জেতা লেস্টার চলতি মৌসুমে অবনমন থেকে বাঁচতে লড়ছে। আর এই নিউক্যাসল ২০১৬-১৭ মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গিয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৯:৫১   ১০০ বার পঠিত