রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩

সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত
রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩



সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত

সংসদ ভবন, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ : একাদশ জাতীয় সংসদের ২৭৬ লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ, কে, এম, শাহজাহান কামাল, ১১১ পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য,সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়া, ২৪৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞার মৃত্যুতে আজ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। শোক প্রস্তাবে সংসদ সদস্যবৃন্দ ও সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
এ, কে, এম, শাহজাহান কামাল ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
এ, কে, এম, শাহজাহান কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে ও ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গণআন্দোলনে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলায় নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া, ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ, কে, এম, শাহজাহান কামাল ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন নোয়াখালী-১১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে লক্ষ্মীপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
সংসদে শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, একাদশ জাতীয় সংসদের ২৭৬ লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ, কে, এম, শাহজাহান কামাল-এর মৃত্যুতে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
মো. শাহজাহান মিয়া ১৯৪০ সালের ১৭ জানুয়ারি তদানীন্তন বরিশাল জেলার পটুয়াখালী মহকুমার কালিকাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
মো. শাহজাহান মিয়া বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রলীগ, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ শাখার একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকার কারণে ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) থেকে গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৬৭ সালে তিনি পটুয়াখালী সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মো. শাহজাহান মিয়া সপ্তম, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
সংসদে শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, একাদশ জাতীয় সংসদের ১১১ পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’
মো. আবদুস সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
মো. আবদুস সাত্তার ভূঞা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। মো. আবদুস সাত্তার ভুঞা ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তিনি টেকনোক্র্যাট কোটায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মো. আবদুস সাত্তার ভূঞা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার সরাইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সাত্তার ভূঞা-এর মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু.খ প্রকাশ, রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’
সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ি সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল, শাহজাহান মিয়া ও মো. আবদুস সাত্তার ভূঞা-এর স্মরণে সংসদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
শোক প্রস্তাবে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তিনি তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন- সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমীর হোসেন আমু, আ স ম ফিরোজ, কাজী কানিজ সুলতানা, মহিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন খান, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা ও পীর ফজলুর রহমান।
শোক প্রস্তাবে স্পিকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, একজন সাবেক উপমন্ত্রী ও একজন সাবেক সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। তারা হলেন- প্রথম ও তৃতীয় জাতীয় সংসদে নোয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান, তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদের কুমিল্লা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক অর্থ উপমন্ত্রী এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী এবং চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদে মৌলভীবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী। তাদের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে।
স্পিকার বলেন, একুশে পদক প্রাপ্ত কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও আবৃত্তিকার আসাদ চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি’র মেজো বোন ফেরদৌস আরা পাখি, গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের মাতা মহান মুক্তিযুদ্ধে পৃষ্ঠপোষকতাকারী আক্তার নেসা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) মো. হারুন-উর-রশীদের মৃত্যুতে মহান সংসদ গভীর শোক ও দু.খ প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্থানে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় নিহত নারী-শিশু ও হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
স্পিকার বলেন, মরক্কো ও আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা, ভারতের সিকিমে ভারী বর্ষণ ও বন্যা এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহিত হয়। পরে মৃত্যুবরণকারীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
এরপর সংসদের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে দিনের অন্যসব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। তবে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৯:১৫   ১২৬ বার পঠিত