ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ’শিশু সমাবেশে’ বক্তাদের ক্ষোভ

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ’শিশু সমাবেশে’ বক্তাদের ক্ষোভ
বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪



ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ’শিশু সমাবেশে’ বক্তাদের ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১১ বছর পূর্তিতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও শিশু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে শহরের দেওভোগে শেখ রাসেল নগর পার্কে এই আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি লেখক ও গবেষক মফিদুল হক, শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা, শিল্পী অশোক কর্মকার, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম ও সদস্যসচিব হালিম আজাদ।

প্রায় এক যুগেও ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, হত্যাকারীরা চিহ্নিত হওয়ার পরও বিচার না হওয়া দুঃখজনক। এতে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ত্বকীসহ দেশের সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন তারা।

সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘১১ বছর হয়ে গেল আমরা ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করছি কিন্তু বিচার আমরা পাচ্ছি না। কেন বিচার পাচ্ছি না তা বাংলাদেশের সকলেই জানে। বিচার চাই, চাচ্ছি, এই কথা বলতে আর ভালো লাগে না। শিশু, কিশোর, নারী বা যেকোন হত্যাকাণ্ডের বিচার করা তো রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।’

ত্বকী হত্যার বিচার নিয়ে কারও সাথে কোন অবস্থাতেই আপোস করা হবে না, মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কখন, কোথায়, কীভাবে, কী কারণে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে; সবকিছুর প্রমাণ আপনাদের (প্রশাসন) কাছে আছে। আমি জানি না, কীভাবে এই বিচার হবে কিন্তু এই বিচার হবে, হতেই হবে।’

‘১১ বছর আগে যে বাচ্চার বয়স ছিল ছয় বা সাত বছর, তার বয়স এখন সতেরো বা আঠারো। কয়েক বছর পর তারা সবাই একত্রিত হয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে গর্জন দিয়ে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করবে। এইটা তারা চাইতেই পারে, এইটাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা চাই না, এইরকম কারও বুকের ধন কেড়ে নিবে আর লাশটা শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠবে।’

বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন আইভী। তিনি বলেন, ‘যখনই ত্বকীর কথা মনে পড়ে তখনই চোখের সামনে আমার ছেলের চেহারা ভেসে ওঠে। তখন কোন অবস্থাতেই নিজেকে সংযত রাখতে পারি না। আর তখন নিজেকে খুবই অপরাধী আর অসহায় মনে হয়। চোখের সামনে ত্বকীর ঘাতক ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু বলতে পারছি না।

মফিদুল হক বলেন, ‘আজকের দিনটি বেদনা এবং ক্ষোভের দিন। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে দৃর্বৃত্তদের দাপট এবং খুনিদের ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করছি। ত্বকীকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। অথচ তার সাথে কারও কোন বিবাদ ছিল। ত্বকীর পিতা রাজনৈতিক কারণে অনেকেরই উষ্মার কারণ হয়েছেন। কিন্তু সেই বিরোধীতাকে যে এমন নিষ্ঠুরতায় রূপান্তর করা হয় তা কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু সেই ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে সেই ঘটনার পরম্পরা প্রকাশিত হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন সাহসী সাংবাদিক সেখানে ভূমিকা পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জবাসী খুব ভালো করেই জানেন, কীভাবে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’

মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘যাকে হত্যা করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই ত্বকী কবরে যেতে অস্বীকার করছে। ত্বকীর মৃত্যু নেই, ত্বকী মৃত্যুহীন চোখে তাকিয়ে আছে। ত্বকীর সেই অবয়ব এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে যাচ্ছে। একাদশ বর্ষ বিস্মৃতির কোন বর্ষ নয়। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে আমাদের। এজন্য আইনের শাসন ও বিচারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেদিন বিচার হবে সেদিন ত্বকীর আত্মা শান্তি পাবে। সেই দিনটির অপেক্ষায় কেবল থাকবো না, সেই দিনটি সম্ভব করতে সকলে মিলে কাজ করবো।’

ত্বকীসহ দেশে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা বলেন, ‘খুনির পরিচয় তিনি কেবল খুনি, সে প্রভাবশালী কিনা তা বিবেচ্য নয়। ত্বকীকে হয়তো আমরা ফিরে পাবো না। কিন্তু এই হত্যার বিচার চাই এই কারণে যে, মানুষের আস্থা যাতে প্রশাসনের প্রতি হারিয়ে না যায়।’

সরকার ও প্রশাসনের উদ্দেশে শিল্পী অশোক কর্মকার বলেন, ‘ত্বকীর হত্যার বিচার চেয়ে আর যেন আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখান যে, বাংলাদেশে এই রকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়।’

রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আগামীর ভবিষ্যত শিশুরা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের শিশুদের খুব সুপরিকল্পিতভাবে ইতিহাসবিমুখ করে তোলা হচ্ছে, ইতিহাসবিস্মৃত জাতি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। যদিও ইতিহাসবিস্মৃত জাতি হিসেবে আমাদের দুর্নাম বা বদনাম রয়েছে। তারপরও সামনের অন্ধকার অতিক্রম করতে ইতিহাসের কাছে আমাদের ফিরে আসতে হয়।’

নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীনরা ইতিহাস বিকৃত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এক সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যে রাব্বি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সব মানুষ এত টিপসই না। আপনারা নারায়ণগঞ্জে কী করেছেন তা আমরা সব জানি। এত কথা বলেন, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কত লাশ ফেলেছেন, কত মায়ের বুক খালি করেছেন, কত কোটি টাকা চাঁদা তোলেন তা তো বলছেন না। এই কথাগুলো শিশু-কিশোর-তরুণ প্রজন্মের এই বিষয়গুলো জানা দরকার। এই দুর্বৃত্তরা নারায়ণগঞ্জে সবকিছু গ্রাস করার পরেও ইতিহাসও বিকৃত করে তাদের পক্ষে নিতে চায়।’

সমাবেশ শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সেরা ২৫ জন শিশুর মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:৫০   ২২৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


ধর্ম মত নির্বিশেষে সবাই আমরা এক পরিবারের সদস্য: প্রধান উপদেষ্টা
চা শ্রমিক ও মালিকদের দাবি পূরণে কাজ করছে সরকার : শ্রম উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন
মারা গেছেন চিত্রনায়িকা বনশ্রী
বিএসসি ছাড়া প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারে শাস্তির দাবি প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের
দুর্যোগ মোকাবেলার চেয়ে প্রশমন বেশি গুরুত্বপূর্ণ : ত্রাণ উপদেষ্টা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ৩ বাংলাদেশি আটক
আজ থেকে শুরু হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগ
জামায়াতের আমিরের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিলে রাজপথে নামার ঘোষণা রেজাউল করীমের

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ