আজ পবিত্র শবে কদর

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » আজ পবিত্র শবে কদর
শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪



আজ পবিত্র শবে কদর

“লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত ” - শুধু রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতই নয় শেষ দশকের সবগুলি বিজোড় রাতেই তার তালাশ করা উচিত । মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলমানদের করণীয় ।( ঈমান ও আমল - ১৭ )।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমাদের মাঝে এসেছে মাহে রমজান এবং দেখতে দেখতে রমজান চলে এসেছে তার শেষ দশকে বা মাগফেরাতের দিন সমুহে। যারা মর্যাদার মাস রমজান পেলো অথচ নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না তাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই,নবী করীম (সাঃ) সেসব ব্যক্তি ও রোজাদারদের জন্য অভিশাপ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে, ” হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, যার জীবনে রামজান মাস এলো, অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না”। (তিরমিজি শরীফ)। পবিত্র এই মাস ইবাদতের মাস , ক্ষমার মাস । নবী (সাঃ) বলেছেন,”তোমরা রমজানের শেষ দশকের বে-জোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো” (বুখারি শরীফ)। এই মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যদিও অনেক মনে করেন ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে শবে কদর তবে তা স্থির কোন বিষয় নয় বরং শেষ দশকের যে কোন বিজোড় রাতেই তা হতে পারে । আর তাই আমাদেরকে সবগুলি বিজোড় রাতেই ইবাদতের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে।

শবে কদর রমজানের মধ্যেই এবং শেষ দশদিনের বিজোড় রাতে এতে কোন সন্দেহ নেই। রাসুলে করিম (সাঃ) বলেছেন,”তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান করো। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। মনে রাখতে হবে, আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। আল্লাহপাক এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের কর্তব্য হলো বেশি বেশি নিজের জন্য আত্মীয় স্বজনদের জন্য দোয়া করা। হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং - ৩৪)।

মুহাক্কিকগণ বলেন, আরবিতে “লাইলাতুল কদর” শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ বা আরবি বর্ণ রয়েছে। আর সুরা কদরে “লাইলাতুল কদর” শব্দদ্বয় তিনবার রয়েছে। নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়, তাই তাদের মতে ২৭ (সাতাশে) রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। (তাফসিরে মাযহারি)।

মহান আল্লাহপাক আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতদের ইবাদতের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । যে সব রাতের ইবাদতে অশেষ সওয়াব লাভ করা যায়। ইবাদতের এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো ১। জুমার রাত ২। ঈদুল ফিতরের রাত ৩। ঈদুল আযহার রাত ৪। শবে বরাত বা মুক্তির রাত তথা নিসফ শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত ৫। শবে কদর বা কদরের রাত অর্থাৎ মর্যাদাপূর্ণ রজনী।

” শবে কদর ” ফারসি শব্দ। “শব” মানে রাত বা রজনী আর “কদর” মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন। তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা পর্যন্ত”। ( সুরা আল কদর , আয়াত - ১ - ৫)। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি “শবে কদর” নামেই সমধিক পরিচিত।

রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। শবে কদর কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,” রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর”। (সুরা আল বাকারা, আয়াত - ১৮৫)।

কোরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আসমানি একশ সহিফা, চারখানা কিতাবসহ মোট একশ চারটি কিতাবের মধ্যে কোরআনই সেরা। কারণ, এই কিতাব নাজিল হয়েছে আখেরি নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, নবীগণের ইমাম, রাসুলদের সরদার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি। এই কোরআনের স্পর্শ বড়ই সৌভাগ্যের। হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এই কোরআন বহন করেই ফেরেশতাদের সরদার হওয়ার গৌরব লাভ করেছেন। মরুর দেশ ‘জজিরাতুল আরব’ এই কোরআনের স্পর্শেই পবিত্র আরব ভূমির সম্মান লাভ করেছে। অলক্ষুনে ও দুর্ভোগময় খ্যাত ‘ইয়াসরিব’ এই কোরআনের বরকতেই পুণ্য ভূমি ‘মদিনা মুনাওয়ারা’র সম্মানে ধন্য হয়েছে। তাগুতের আখড়া পাপের আকর শিরক ও কুফরের শীর্ষ তীর্থস্থান ‘বাক্কা’ এই কোরআনের তাজাল্লিতে পবিত্র মক্কা নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে।সর্বোপরি কোরআনের সংস্পর্শে একটি সাধারণ রাত “লাইলাতুল কদর” বা “শবে কদর” রজনীর সম্মানে বিভূষিত হয়েছে। কোরআনের সঙ্গে যার যতটুকু সম্পর্ক ও সংস্পর্শ থাকবে, তিনি ততটুকু সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন।

লাইলাতুল কদর উপলক্ষে আমাদের করণীয় -

১। এ রাতে ইবাদাতের পূর্বে গোসল করে নেয়া উত্তম। কদরের ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু নফল ইবাদত করা, নফল নামাজ আদায় করা। কোরআন তেলাওয়াত করা, তাছবীহ তাহলীল পাঠ করা কর্তব্য। দুই দুই রাকআত করে নফলের নিয়ত করে যেকোনো সূরাই সূরা ফাতেহার সঙ্গে মিলিয়ে নামাজ পড়া যাবে। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। উত্তম হলো নফল নামাজ ধীরে সুস্থে লম্বা লম্বা ক্বেরাত দিয়ে পড়া এবং ধীরস্থিরে রুকু-সিজদা আদায় করা।

২। লাইলাতুল কদর হলো বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতের শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ক্ষমা চাওয়ার দোয়া। এ রাতে মহানবী (সাঃ) ক্ষমা চাওয়ার দোয়া শিক্ষা দিলেন যে, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও, ক্ষমা পাওয়ার জন্য দোয়া করো।হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ),আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজাহ)।

কেউ যদি জীবনে অনেক কিছু পায় কিন্তু আল্লাহর ক্ষমা না পায়, তাহলে তার জীবন ব্যর্থ। তাই এ রাতে অন্তরকে নরম করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে খাঁটি দিলে তওবা ইস্তেগফার করতে হয়।

খাঁটি তওবার চারটি শর্ত

১। পূর্বের গুনাহ থেকে ফিরে আসা বা গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে।
২। গুনাহর জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হতে হবে যে, আমি বড়ই অন্যায় করেছি ।
৩। ভবিষ্যতে ওই গুনাহ আর করবো না বলে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে ।
৪। বান্দাহর কোনো হক নষ্ট করে থাকলে যথাসাধ্য সে হক আদায় করে দিতে হবে।

শবে কদরের রাতের আমল -

বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, উমরী কাজা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দুরূদসহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।

শবে কদরের নামাজ -

প্রকৃত অর্থে শবে কদরের আলাদা নামাজ বলে কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন।

শবে কদরের নফল নামাজের নিয়ম -

১। এ রাতে প্রথমেই পড়া যায় দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামায - দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামাজের নিয়ম - প্রতি রাকাতে আলহামদুলিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ ( সূরা এখলাছ) মিলিয়ে পড়া যায়।

২। দুই রাকাত,দুই রাকাত করে নফল নামায শবে কদরের নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এই ভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে।

এছাড়া এভাবে ও করা যায়, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলত - রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখশিস পাওয়া যাবে।

তাছাড়া এ রাতের নিয়মিত নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে - বাদ মাগরিব ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ।

৩।আওয়াবীন নামাজ - মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। আল্লামা মাওয়ার্দি এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মুগনির মুহতাজ - ১/৩৪৩)। তবে কেউ কেউ ‘দুহা’ নামাজকেই আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। নাম নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও এই সময় নামাজ আদায়ের গুরুত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় বারো বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে”। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস - ১১৬৭) ।

হজরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন”। (তিরমিজি, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদিস - ৪৪৯-৪৫০)।

তাছাড়া, এ রাতের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। এ প্রসংগে মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “এবং ভোর রাত্রির কিছু অংশ কুরআন তিলাওয়াত আর নামায কায়েম করার মধ্য দিয়ে জাগ্রত থাকো। এটা তোমার জন্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে ‘প্রশংসিত স্থানে’ প্রতিষ্ঠিত করবেন”।( সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ৭৯)।

৪। তাহাজ্জুদ নামাজ - ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবেহ সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।শেষ রাতের এ নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ নামাজ সুন্নত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন।প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যেকোনো সূরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।তাই প্রতি বার ২ রাকাত ২ রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়াই ভালো।সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজও আদায় করা যায়। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম।

এ ছাড়া এ রাতে সালাতুস তাসবিহ এবং অন্যান্য নফল নামাজ ও আদায় করা যায়।

৫।সালাতুত তাজবীহ - সালাতুত তাসবীহ “তাসবীহের নামাজ” নামেও পরিচিত। নবী মোহাম্মদ (সাঃ) তার অনুসারীদেরকে এ নামাজ পালনে উৎসাহিত করছেন। জীবনে একবার হলেও মুসলমানরা যেনো এ নামাজ পড়ে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।সালাতুত তাসবীহ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে “সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার” তাসবীহগুলো ৭৫ বার পড়তে হয়। চার রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয়।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত - আরবীতে

“নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্‌রি নফ্‌লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর”।

বাংলায় নিয়ত “আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম - আল্লাহু আকবর”।

নামাজ শেষে নিচের দোয়াটি কমপক্ষে একশত বার পড়া উত্তম - “ সুব্‌হানাল্লাহি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, লা হা’ওলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল্‌ আলীয়্যিল আযীম ”।

কোরআন পড়া,জিকির ও দোয়া - এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে । কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে এবং কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার ও চলার শপথ করতে হবে।এ রাতে (১)কোরআন শরিফের সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা ইয়া-সিন, সুরা ত-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা, (২) বেশী বেশী দুরুদ শরিফ পড়া, (৩) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা, (৪) দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা,(৫) কবর জিয়ারত করা (৬) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা। হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বার বার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে ।

মুনাজাত - মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দার বন্দেগি ও আল্লাহর রবুবিয়াতের প্রকাশ ঘটে,বান্দাহ তার প্রভূর কাছে চায়। প্রভূ এতে ভীষণ খুশি হন। মহান আল্লাহ তার বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তার কাছে না চাইলে অসস্তুষ্ট হন।হাদীসে বলা আছে, ” যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন “- (তিরমিযি) এবং ” দোয়া ইবাদতের মূল”- (আল হাদিস)।” যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে ” (তিরমিযি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করব, ক্ষমা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ রাতে তার রহমত-বরকত-মাগফেরাত নসীব করুন এবং বেশী বেশী আমল করার তওফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১১:০৬:৪৪   ৪৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
দুর্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিতে নীতিমালা করা হবে: শিক্ষামন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় মানুষের পাশে থাকেন : কৃষিমন্ত্রী
জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সাথে ভারতের পেনশন সচিবের সাক্ষাৎ
‘পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি’র ৯ম বৈঠক অনুষ্ঠিত
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ : সালমান এফ রহমান
সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বুনিয়াদ ঠিক রেখে সর্বোচ্চ আনুগত্য নিয়ে কাজ করতে হবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সাথে চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো অপারেশন এজেন্সির চেয়ারম্যানের বৈঠক অনুষ্ঠিত

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ