শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গেলো মাসে ৩৯টি তৈরি পোশাক কারখানায় প্রায় ২০ দিন কাজ বন্ধ ছিল। এসব কারখানা যাতে শ্রমিক-কর্মচারীদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারে, সেজন্য সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
গত ৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টার কাছে লেখা এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। ওই চিঠির সঙ্গে সাভার-আশুলিয়া এলাকার ৩৯টি ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার একটি তালিকাও যুক্ত করে দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘সরকারের সার্বিক সহযোগিতার কারণে পোশাক শিল্পখাত দেশের সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী একটি খাতে পরিণত হয়েছে। এ খাত সরকারের প্রদত্ত বিভিন্ন সহযোগিতার কারণে আজও টিকে আছে। এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪.০ মিলিয়ন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছে এবং জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এ শিল্পের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সব সংকটকালীন সময়ে সরকারের সহযোগিতা মিলেছে।
‘২০১৯ সাল থেকে করোনা এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে পোশাক শিল্পখাত। বর্তমানে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে প্রতিযোগী বিদেশি রাষ্ট্র ও দেশের একদল স্বার্থলোভী জনগোষ্ঠী দেশের এ রফতানি বাণিজ্য খাতকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
‘এ কারণে পোশাক শিল্পখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ চলমান আছে। বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে কিছু স্বার্থান্বেষী বহিরাগত লোকজন স্থানীয়দের সহায়তায় ভাঙচুর ও লুটতরাজসহ হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালু করতে পারছে না।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলমান রফতানি আদেশগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ক্রেতার নির্ধারিত লিড টাইমের মধ্যে পণ্য রফতানি করতে না পারার কারণে রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আবার অনেক ক্রেতা ডিসকাউন্ট দাবি করছে। কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় স্থায়ী খরচ পরিশোধ করতে হয়।
‘এ অসন্তোষের ফলে ৩৯টি কারখানা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ৫৬ হাজার ৩৫১ শ্রমিক-কর্মচারীকে শুধুমাত্র বেতন ভাতা বাবদ ৫৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৭ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে এবং তাদের পক্ষে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেয়া একান্ত জরুরি।
‘এ অবস্থায় দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি খাতকে টিকিয়ে রাখতে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে অর্থ উপদেষ্টার কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৮:৪৬ ৪২ বার পঠিত