
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ খবরের প্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি অপরিশোধিত তেলের দাম কমে গেছে।
নিউইয়ক থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য আগামী দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়ার পর বাজার কিছুটা চাঙা হলেও পরে ফের অস্থির হয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে ইউরোপীয় দেশগুলো এই সংঘাত বন্ধে সাহায্য করতে পারবে কিনা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইউরোপ এতে সাহায্য করতে পারবে না।’
একই দিনে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক সূচক নিম্নমুখীভাবে লেনদেন শেষ করে। বিশ্লেষকরা বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি সাধারণ উদ্বেগ কাজ করছে।
৫০ পার্ক ইনভেস্টমেন্টসের অ্যাডাম সারহান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এখনো মিসাইল নিক্ষেপ চলছে, কোনো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসেনি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এই আশঙ্কাই বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করছে।
তিনি আরও বলেন, ইরান সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এবং বাণিজ্যসহ অন্যান্য ইস্যুকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি কমাতে বিশেষ করে সপ্তাহান্তে ঝুঁকি এড়াতে শেয়ার বিক্রি করছেন।
ইউরোপের শেয়ারবাজারগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তবে এশিয়ার বাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম দুই শতাংশের বেশি কমে যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইসরাইলের অভিযানে সরাসরি যুক্ত হবে না, এই আশ্বাসে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দাম তুলনামূলক কম হ্রাস পায়। কারণ বৃহস্পতিবার দেশটির ছুটির কারণে লেনদেনের পরিমাণ ছিল কম।
ট্রেডিং ফার্ম এক্সটিবির বিশ্লেষক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বিলম্বিত করবেন, এই খবরে বাজারের মনোভাব ইতিবাচক হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা এখন সবচেয়ে খারাপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকে সরে আসছেন।
ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে তেলের দাম বেড়ে যায় এবং শেয়ারবাজার নিম্নমুখী হয়, কারণ বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করেছিলেন তেলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, সামনের সপ্তাহগুলোতে বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এজে বেলের বিনিয়োগ বিশ্লেষক ড্যান ক্যোাটসওয়ার্থ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইরানে হস্তক্ষেপ করবে না—এটি স্বস্তিদায়ক, তবে ট্রাম্পের ঘোষিত দুই সপ্তাহের সময়সীমা বাজারে এই ইস্যুকে এখনো জীবন্ত রেখেছে।’
মধ্যপ্রাচ্যের সংকট যতই খবরের শিরোনাম দখল করুক না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধও বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে। এপ্রিল ২ তারিখে ঘোষিত শুল্ক নীতির ৯০ দিনের বিরতি শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে।
মর্নিংস্টারের প্রধান মার্কিন বাজার কৌশলবিদ ডেভিড সেকেরা বলেন, ‘যদিও বড় ধরনের শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে, তবে এই সময়সীমা ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত নতুন কোনো চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে মনে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়কালে যেকোনো ধরনের বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি বা খবর বাজারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, সেটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেকোনো দিকেই হতে পারে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৬:২৫ ৯ বার পঠিত