
সমন্বয়কদের আটকে রেখে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ানো হলেও তাতে বিভ্রান্ত হয়নি ছাত্র সমাজ। ৩১ জুলাই মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামেন তারা। পথে পথে পুলিশি বাধায় এদিন আবারও উত্তাল হয়ে উঠে গোটা দেশ। গণ-গ্রেফতার, হতাহতের বিচার, সমন্বয়কদের মুক্তিসহ ৯ দফা পূরণে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে সারাদেশকে একত্রিত করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বাকি সমন্বয়করা।
জুলাইয়ের শেষাংশে এসে আন্দোলন দমাতে গুম, খুন, গ্রেফতারসহ সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে হাসিনা সরকার। যার অংশ হিসেবে আন্দোলনের সম্মুখসারির সকলকে জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেয়ানো হয়। কিন্তু তাতে বিভ্রান্ত হননি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকারীরা। একের পর এক কঠোর কর্মসূচি পালন করে যান মুক্ত থাকা বাকি সমন্বয়করা।
জুলাই জুড়ে সহিংসতায় হতাহত, গণগ্রেফতারের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রক্তাক্ত জুলাইয়ের এইদিন, ৩১ জুলাই মার্চ ফর জাস্টিস পালনে দলে দলে রাজপথে নামে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিসোটা ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। কিন্তু হাজারো বাধা বিপত্তির মুখেও নুসরাতের মতো অনেকেই বুক পেতে দাঁড়ান পুলিশের প্রিজন ভ্যানের সামনে, যা পুরো জাতিকে করে উজ্জীবিত।
হাইকোর্ট চত্বরে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আইনজীবীদের একটি দল বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে অবস্থান কর্মসূচি করে, সব শিক্ষার্থীদের পুলিশ হেফাজত ও কারাগার থেকে মুক্ত না করলে এইচএসসি পরীক্ষা বর্জন করা হবে বলে ঘোষণা দেন কয়েকশ পরীক্ষার্থী কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যৌক্তিক আন্দোলনে পাশে দাঁড়ান বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্র সমাজের ওপর হামলা ও নারী ছাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়ায় তীব্র নিন্দা জানান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও ক্ষুব্ধ নারী সমাজ।
এদিকে কোটা আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে সহিংসতায় জড়িতদের শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি এবং সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা ছিল বলে জানায় শেখ হাসিনা। আর সরকার গণহত্যা চালিয়ে গণ শত্রুতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচির পর পহেলা আগষ্ট ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা জানান, এমন ভয়ানক অন্ধকার পরিস্থিতিতে সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে, জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্ত করে বিচারের দাবিতে এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পরদিন এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, মার্চ ফর জাস্টিসের মাধ্যমে আমরা সমাজে সর্বস্তরের মানুষকে কানেক্ট করার চেষ্টা করেছি। এর মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ জেগে উঠে। শেষ হাসিনার পতন চেয়ে রাস্তায় নামে।
৩১ জুলাই আন্দোলনের সময় সরাসরি গুলি না করা রিটের শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য থাকলেও এক বিচারপতি অসুস্থ থাকায় ঝুলে যায় রিটের শুনানি। এদিকে, সহিংসতায় শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করা হয় জুলাই এর ৩১ তারিখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫:০০ ১৩ বার পঠিত