
জয়পুরহাট জেলার কালাইয়ের সকালে টানা বৃষ্টির পর হঠাৎ করেই বদলে গেছে পরিবেশ। কুয়াশায় ঢাকা পথঘাট, শিশিরে ভেজা ধানক্ষেত ও ঘাস-সব মিলিয়ে যেন শরতের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে শীতের আগাম বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি। এই সময়ে প্রকৃতিতে দেখা যাচ্ছে শরতের রূপ আর শীতের প্রথম ছোঁয়া যেন একসঙ্গে মিশে গেছে। দিনে যদিও গরম থাকে, ভোর ও রাতে ঠাণ্ডা হাওয়া, শিশির আর কুয়াশার মিলনে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে বিশেষ অনুভূতি জাগাচ্ছে।
গত দুদিন ধরেই কালাই উপজেলায় ভোরে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত কালাই শহরসহ আশপাশের গ্রামীণ এলাকা কুয়াশায় ঢাকা ছিল। বিশেষ করে ফজরের সময়ে পুরো এলাকা যেন মেঘে ঢেকে থাকে। অক্টোবরের শুরুতেই এমন আবহাওয়া সচরাচর দেখা যায় না।
সাধারণত নভেম্বরের শুরু থেকে উত্তরের হাওয়া শীতের অনুভূতি নিয়ে আসে। তবে চলতি বছর তা আগেভাগেই দেখা যাচ্ছে, যা নিশ্চিত করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটে বর্তমানে দিনের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গতকাল সোমবার দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বদলগাছী আবহাওয়া কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, শরৎকালেও এবার ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সঙ্গে হালকা শৈত্যপ্রবাহের মতো হিমেল বাতাস বইছে। এ কারণে রাতের তাপমাত্রা দ্রুতই কমছে, আর ভোরে কুয়াশা জমছে। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী দিনগুলোতে শীত আরো বাড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও এই পরিবর্তনে অবাক।
কালাই পৌরসভার আঁওড়া মহল্লার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘অক্টোবর মাসের শুরু, এখনও শীত আসতে অনেক দেরি থাকার কথা। কিন্তু গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি আর হালকা ঝড় যেন শীতের আগমনী ঘণ্টা বাজিয়ে দিল। ভোরে উঠলে চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে, হালকা শীত অনুভব হয়। রাতে হালকা কাঁথা লাগে, আবার মাঝে মধ্যে ফ্যানও চালাতে হয়।’
প্রতিদিন ভোরের সময় ধানক্ষেত, সবজি বাগান, গাছপালা ও রাস্তার ধারে ঘাসে জমে থাকে শিশিরের ছোঁয়া। ফসলি মাঠে এর প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। কৃষকরা বলছেন, একদিকে শিশিরবিন্দু, অন্যদিকে মাটি ভেজা শীতকালীন ফসলের জন্য এটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।
স্থানীয়রা জানান, আগে এমন দৃশ্য অক্টোবরের শেষ দিকে বা নভেম্বরের শুরুতে দেখা যেত। তবে এবার প্রকৃতিই যেন আগেই শীতকে ডেকে এনেছে। কালাইয়ে শরতের শেষ প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া কুয়াশার চাদর মানুষকে শীতের আগমনী বার্তা দিয়ে প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য উপহার দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৫:৫৬ ১০৫ বার পঠিত