রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরেই টানাপোড়েন চলছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। এ নিয়ে দফায় দফায় চলে চিঠি চালাচালি, সাক্ষাৎ-বৈঠক। কিন্তু এখনো দুপক্ষই অনড় নিজ অবস্থানে।
গত জুনে নিবন্ধন আবেদনের সময় শাপলার পাশাপাশি কলম ও মোবাইল ফোন চেয়েছিল এনসিপি। পরবর্তীতে সে দুই প্রতীক থেকে সরে এসে কেবল শাপলাতেই জোর দেয় দলটি।
একদিকে শাপলার বাইরে যেতে নারাজ এনসিপি, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপির আবেদন বারবারই নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সবশেষ গত ৭ অক্টোবর আবারো শাপলা চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রতীকের সাতটি নমুনাচিত্র পাঠায় এনসিপি। তবে এটিও আমলে নিচ্ছে না ইসি। পাল্টা চিঠি দিয়ে কমিশনের সাফ বক্তব্য, বিধিমালার তালিকা থেকেই কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে প্রতীক হিসেবে। রোববারের মধ্যে জবাব না পেলে নিজেদের সিদ্ধান্তেই প্রতীক বরাদ্দ দেবে কমিশন। তবে কমিশন থেকে এমন কড়া বার্তা এলেও এখনো আগের অবস্থানেই অটল এনসিপি।
১৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছিলেন, বিধিমালায় না থাকায় এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেয়ার সুযোগ নেই। রোববারের মধ্যে ইসির তফসিলের মধ্যে থাকা প্রতীক বেছে নিতে হবে এনসিপিকে। তা না হলে কমিশন নিজ বিবেচনায় এনসিপিকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দেবে।’
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যাখ্যা না দিয়ে নিজের মতো আমাদের ওপর প্রতীক চাপিয়ে দেয়ার যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন, সেটা তাদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ। কমিশন কোনো সংস্থা বা রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রভাবিত কি না, সেই বিষয়গুলো এখন খুঁজে দেখার সময় এসেছে।’
শাপলার বাইরে বিকল্প খুঁজতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শাপলার অনেকগুলো নমুনা আমরা ইসিকে পাঠিয়েছি। বিকল্প যা কিছু রয়েছে, তার সবকিছু আমরা শাপলার মধ্যেই খুঁজতে চাই। শাপলা ছাড়া অন্য কোনে প্রতীক দেয়ার সিদ্ধান্তে গেলে, অবশ্যই আমরা তা গ্রহণ করবো না। এর আইনগত দিক রয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে এনসিপির পক্ষে আনা যায়, সেই পদক্ষেপগুলো আমরা নিবো।’
শাপলা ইস্যুতে আরেক বিতর্ক হচ্ছে, এনসিপির আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল এই প্রতীক, কিন্তু সে আবেদনও খারিজ করে দিয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় এলেও ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন এনসিপির সদস্য সচিব।
তিনি বলেন, ‘নাগরিক ঐক্য শাপলার জন্য সর্বোচ্চ ফাইট করেনি। তবে দলটিকে শাপলা প্রতীক দেবে না বলে কমিশন বক্তব্য দেয়। এরপর বক্তব্যটা কেন যৌক্তিক নয়, সে বিষয়ে নাগরিক ঐক্য কমিশনের কাছে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে কিংবা চায়নি। দলটি অন্য একটা প্রতীকে নিজেদের সন্তুষ্ট রেখেছে। বরং কারা শাপলা প্রতীক নিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে সেটা কমিশনের বিবেচনার প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪১:৩৩ ২২ বার পঠিত