
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুর শহরের অলিতে গলিতে শীতকালীন পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই হালকা শীত নামতে শুরু করায় পিঠা প্রেমীদের আনাগোনা বাড়ে ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে। কর্মব্যস্ততার কারণে শহরের বাসাবাড়িতে এখন আর আগের মতো পিঠা তৈরির সুযোগ না হওয়ায়, পিঠার স্বাদ নিতে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত শহরবাসী এবং দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন রীতিমতো এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন।
সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবছর শীতের সময় এক শ্রেণির মানুষ ৪ থেকে ৫ হাজার বা সামান্য কম-বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে পিঠা বানিয়ে বিক্রি করছেন। বিকাল হলেই ফুটপাতে মাটির চুলা জ্বালিয়ে তার ওপর ছোট মাটির পাতিল, লোহার কড়াই বা হাঁড়ি বসিয়ে গরম গরম চিতই পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। প্লেটে নানা ধরনের সুস্বাদু ভর্তা সাজিয়ে তা ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চিতই পিঠা প্রতি পিস ৫-১০ টাকা এবং ভাপা পিঠা মানভেদে ১০-২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একেকজন পিঠাবিক্রেতার দিনে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। শহরের থানা মোড়, দেনুয়া মোড়, কলেজ মোড়, স্টেশন বাজার মোড়, বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এই পিঠা বিক্রি হচ্ছে।
থানা মোড় এলাকার পিঠা বিক্রেতা রমিছা বেগম জানান, শীত এলে তাদের ব্যবসা ভালো হয়। বছরের অন্যান্য সময় পিঠা বিক্রি না হলেও শীতে দোকান খোলার পরই ক্রেতাদের ভিড় পড়ে যায়। তিনি জানান, দিনের চেয়ে রাতে বিক্রি বেশি হয় এবং শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রেতাদের সিরিয়ালে পিঠা বিক্রি করতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ কেজি চালের গুঁড়োর পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে যা লাভ হয়, তা দিয়েই তার সংসার খুব ভালোই চলছে।
দেনুয়া মোড় এলাকার পিঠা বিক্রেতা জরিনা বেগম বলেন, তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি চালের চিতই পিঠা বিক্রি করেন। তিনি দুধ চিতই পিঠাও বিক্রি করেন, যার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা এক-দুই দিন আগে থেকেই অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। তিনি সন্ধ্যার পরেই দোকান খোলেন এবং এই শীতকালে পিঠা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে খুব সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছেন।
পিঠা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকে ঘরে পিঠা বানানোর সুযোগ পান না। ক্রেতারা জানান, ভ্রাম্যমাণ পিঠা ব্যবসায়ীরা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে পিঠা তৈরি ও বিক্রি করেন। একজন ক্রেতা বলেন, “কালের বিবর্তনে অনেক ঐতিহ্য যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ফুটপাতে গিয়ে পিঠা খেয়ে আসি। ফুটপাতে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।”
ভ্রাম্যমাণ এই পিঠার দোকানগুলো শীতকালে শুধু ব্যবসার মাধ্যম নয়, বরং শহরের ব্যস্ত জীবনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার স্বাদ ধরে রাখার এক প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৬:১১ ৫ বার পঠিত