
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুরে কুড়িয়ে পাওয়া এক ফুটফুটে নবজাতক কন্যাশিশুকে দত্তক নেওয়ার জন্য ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে নিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত সমাজসেবা অফিসে অন্তত ৪৫টি আবেদন জমা পড়েছে। আরও কয়েকজন আগ্রহীর আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বর্তমানে শিশুটি ইসলামপুর উপজেলার মোশারফগঞ্জ এলাকার শাহজালালের বাড়িতে অবস্থান করছে। তাকে এক নজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। তবে জটিলতা এড়াতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আগ্রহীদের জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।
গত ৮ ডিসেম্বর ইসলামপুর উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর সড়কের পাশে একটি ধানক্ষেত থেকে পরিচয়বিহীন এই নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, জন্মের পরপরই তাকে সেখানে ফেলে যাওয়া হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভোরে মোশারফগঞ্জ বাজার এলাকায় সড়কের পাশ থেকে নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয় শাহজালাল ও তার মা আমেনা বেগম শিশুটিকে দেখতে পান। তারা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী আনোয়ার দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান এবং শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
ফেসবুকে ফুটফুটে শিশুটির ছবি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। এরপর থেকেই শাহজালালের বাড়িতে শিশুটিকে দেখতে আসছেন অনেকে।
হাসপাতালে থাকাকালীনই অনেকে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জানান, তার কোনো সন্তান নেই। ফেসবুকে শিশুটিকে দেখে তিনি স্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠান। তিনি বলেন, “আমার খুব মায়া হয়েছে। ওকে কেউ না নিলে আমরা শিশুটি দত্তক নিতে চাই।”
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, “শিশুটির দায়িত্ব নিতে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন আবেদন করেছেন। আবেদনগুলো নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে শিশুটি মোশারফগঞ্জ শাহজালালের বাড়িতেই থাকবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. এ.এস.এম আবু তাহের নিশ্চিত করেছেন যে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে এবং সোমবারেই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুসাইন বলেন, “খবর পেয়ে আমরা দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করি। তার সুস্থতা ও নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতা এই শিশুটির নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে বলে আমরা আশা করি।”
উদ্ধার হওয়া এই কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এখন সবাই তাকিয়ে আছে জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভার সিদ্ধান্তের দিকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৮:৪৯ ৪ বার পঠিত