![]()
শিশুশ্রম প্রতিরোধে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, শিশুশ্রম নির্মূল প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে শিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতার ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় এনে সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালীকরণে প্রস্তাবিত নীতি’ শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।
এডুকো বাংলাদেশ ও চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্ম (ক্ল্যাপ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান।
অনুষ্ঠানে নীতি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেব আকন্দ, চাইল্ড লেবার মনিটরিং কাউন্সিলের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী, এডুকো বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম) আব্দুর রহিম, শিশু অধিকার ফোরামের সহসভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উত্থাপিত নীতি প্রস্তাবে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, আইন ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও লাখো শিশু অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমে নিয়োজিত।
প্রায় ৩৫ লাখ শিশু নানা ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকলেও এর মধ্যে ১৭ লাখ শিশুর তথ্য আছে। এরমধ্যে এক লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে আছে।
তিনি বলেন, নানা কাজের সুযোগ থাকার কারণে শহরে শিশুশ্রম বেশি, তবে গ্রামে শিশুশ্রম কম নয়। কৃষিখাতে ও মৌসুমি কাজে শিশুরা যুক্ত হচ্ছে।
শিশু শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিল্প-কারখানায়, ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ সেবা খাতে এবং ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। আর বিপজ্জনক শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ, সেবাখাতে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কৃষিতে সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে শ্রমে নিয়োজিত হওয়ার প্রবণতা কম। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে যেখানে এক শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত সেখানে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে রয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ ও ব্যবহার, শোষণ, পাচার এবং সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের পাশাপাশি শিশুশ্রমের অবসান ঘটানোর কথা উল্লেখ করেছে। সরকার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিশুশ্রম নিরসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বেশ কিছু উদ্যোগ, প্রকল্প ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি বছরে স্কুলগামী শিশুদের জন্য ৯টি কর্মসূচি ৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যা সামাজিক সুরক্ষা খাতের বাজেটের ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। এই বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেব আকন্দ বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে সর্বজনীন শিশু সুবিধাসহ পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষার পেছনে ব্যয় বাড়ানো এবং সকল শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে হবে। পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যথোপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা, কৃষিজ উন্নয়ন, পল্লী জনসেবা, অবকাঠামো ও জীবন-জীবিকার পেছনে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
শিশুদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী মানবাধিকার ও অর্থনীতিকে রক্ষা করে বলে জানান এডুকো পরিচালক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অতিমাত্রায় বিভক্ত। এ খাতের কর্মসূচিগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটির সাথে অপরটি সংযুক্ত নয়। এসব কর্মসূচির লক্ষ্যসমূহ একটির সঙ্গে অন্যটি মিলে যায়, এতে বাজেট কম এবং আওতাও অপ্রতুল। এক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে আফজাল কবির খান বলেন, শিশুশ্রম নির্মূলের জন্য শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পারিবারিক দারিদ্র্যের ঝুঁকি কমিয়ে অর্থনৈতিক বা স্বাস্থ্যগত ধাক্কা মোকাবিলায় সহায়তার মাধ্যমে শিশুশ্রম হ্রাস করে। একইসঙ্গে শিশুদের স্কুলে ভর্তিতে সহায়তা ও পড়াশোনার সুবিধা দেয়। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি শিশু শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি সহায়তা জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৫:২০ ১৪ বার পঠিত