
জামালপুর প্রতিনিধি : সরিষাবাড়ী এক সময় গ্রামের কৃষাণীরা রান্নার জ্বালানি হিসেবে ভুট্টার গাছ ব্যবহার করতেন। যা ছিল অবহেলিত ও নামমাত্র মূল্যের। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেই চিত্র বদলে গেছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে এখন ভুট্টার গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে গবাদি পশুর আধুনিক ও উন্নত মানের খাদ্য ‘সাইলেজ’ হিসেবে। স্বল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় উপজেলার কৃষকদের মাঝে এখন ভুট্টা চাষে নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর সরিষাবাড়ী এলাকায় শনিবার (২০ ডিসেম্বর) গিয়ে দেখা যায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ। কৃষকদের কষ্ট করে আর ফসল ঘরে তুলতে হচ্ছে না; জমি থেকেই সরাসরি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আস্ত ভুট্টার গাছ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকার বা ব্যাপারীরা জমি থেকেই ভুট্টাসহ গাছ কিনে নিচ্ছেন।
মাঠের ভেতরেই বসানো হয়েছে আধুনিক মেশিন। সেখানে ভুট্টাসহ আস্ত গাছটি মুহূর্তের মধ্যেই চূর্ণ করে তৈরি করা হচ্ছে সাইলেজ। এরপর সেই পশুখাদ্য প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের নামী-দামি বিভিন্ন ফিড কোম্পানি ও বড় বড় খামারে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগে ভুট্টা পাকলে তা মাড়াই করা এবং গাছ শুকানো ছিল অনেক কষ্টের কাজ। এখন ফলন আসার পরপরই কাঁচা অবস্থাতেই গাছ বিক্রি করে দেওয়া যাচ্ছে। এতে করে ফসল কাটা ও ঝাড়াই করার অতিরিক্ত শ্রম ও খরচ বেঁচে যাচ্ছে। টাকা একবারে হাতে পাওয়া যাচ্ছে। জমি দ্রুত খালি হওয়ায় পরবর্তী ফসল চাষের জন্য বাড়তি সময় পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, সাইলেজ হলো ভুট্টাসহ সবুজ গাছের বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন পশুখাদ্য। দুগ্ধ খামারিদের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, কারণ এটি গবাদি পশুর দুধ উৎপাদন বাড়াতে এবং শরীর গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপ সিংহ জানান, সরিষাবাড়ীর এই নতুন বাণিজ্য মডেল অন্য এলাকার কৃষকদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা থাকলে এই সাইলেজ উৎপাদন দেশের পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৮:১৭ ৪০ বার পঠিত