মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চলছেই। আজ শুক্রবার একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে ১২৫ রোহিঙ্গা ভিড়েছে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের রুপপতি উপকূলীয় এলাকায়। তারা বলছে ‘বাঙালি’ লেখা এনভিসি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার শুরু থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী তাদের ‘বাঙালি’ বলে ঘোষণা দিয়ে হত্যা-নির্যাতন করে আসছে। এরপর সেনারা রোহিঙ্গাদের হাতে ‘বাঙালি’ লেখা কার্ড ধরিয়ে দিতে থাকে। সেই আতঙ্ক এখনো চলছে সেখানে অবসস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের মধ্যে। গত সাড়ে তিন মাসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এ হিসাব উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়াদের। এ ছাড়া প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অনেক রোহিঙ্গা নৌ ও সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনে অত্যাচার-উৎপীড়ন সহ্য করে যারা এখনো রয়ে গেছে তাদের জোর করে বাঙালি লেখা ভেরিফিকেশন কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা এসব কার্ড নিচ্ছে না তাদের সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব কারণে অনেক রোহিঙ্গা জীবন বাজি রেখে সাগরপথে পাড়ি জমাতে শুরু করেছে।
গত দু-তিন দিন নৌকা না পেয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা বাঁশের বেলায় করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আজ শুক্রবার উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের রুপপতি উপকূলীয় এলাকায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২৫ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ উপকূলে ভেড়ে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী রুপপতি গ্রামের মোহাম্মদ মোস্তাক বলেন, ‘শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে রুপপতি এলাকায় রোহিঙ্গা বোঝাই একটি মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে ভিড়তে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে ইনানী পুলিশকে খবর দিই। ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বিবেক আনন্দ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নৌকা থেকে ১২৫ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন, নারী ৪০ জন এবং শিশু ৬৭ জন।
এসআই বিবেক আনন্দ বলেন, রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারের মাঝি উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামের বাডু মাঝির ছেলে আবদুল মাজেদকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার পরপর উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা ও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চাইলাউ মারমা বলেন, উখিয়ার উপকূল রুপপতি থেকে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সহায়তা দেয়া হয় বলে জানান জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুর আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০৫:১২ ৩৫৩ বার পঠিত