চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে গতকাল রোববার বিকেল তিনটার দিকে যখন নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল ব্যথিত নেতা-কর্মীদের। ঢাকার স্কয়ার হসপিটালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৭৪ বছর বয়সী মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে গতকাল সকাল থেকে শঙ্কিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের সুস্থতা কামনায় ফেসবুকে একের পর এক স্ট্যটাস দিতে থাকেন তারা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যুতে আন্দোলন করে আসা মহিউদ্দিনের গুরুতর অসুস্থতা হওয়ার খবরে অনেক সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন। নগরীর দুই নম্বর গেইট চশমা হিলের নিজ বাসায় শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠে সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে নগরীর মেহেদীবাগ এলাকার ম্যাক্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ১৫ মিনিট পর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সকালে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যেতে তার পরিবারকে পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর ঢাকায় নেওয়ার জন্য দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ম্যাক্স হসপিটাল থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে তাকে এখান থেকে হেলিকপ্টারে করে সরাসরি ঢাকায় স্কয়ার হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। হেলিকপ্টারে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যান তার ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন এবং ম্যাক্স হসপিটালের চিকিৎসক ডা. কাজল নাথ। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে স্কায়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ম্যাক্স হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লিয়াকত আলী খান জানান, ‘উনি মৃদু হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। উনার আগে থেকে হার্টে বাইপাস করা আছে। এছাড়া উনার কিডনির সমস্যাও আছে। ‘চট্টলবীর’ খ্যাত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অসুস্থতা নিয়ে গতকাল সকাল থেকে উৎকণ্ঠায় আছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেখতে ম্যাক্স হাসপাতালে ছুটে যান। মেয়র নাছির মহিউদ্দিন চৌধুরীর পাশে কিছুক্ষণ সময় কাটান এবং চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। মহিউদ্দিনকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যখন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নেয়া হয় সেখানেও ছুটে যান তিনি। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে তিনি হেলিকপ্টারে তুলে দেন। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে মহিউদ্দিনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে শত শত নেতা-কর্মী জমায়েত হন। মহিউদ্দিনকে যখন অ্যাম্বুলেন্স থেকে স্ট্রেচারে শুইয়ে নামানো হয়, তখন নেতা-কর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মেয়র নাছির, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কাউন্সিলর নীলু নাগ, নগর যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ অনেক নেতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
গতকাল সন্ধ্যায় স্কয়ার হসপিটালে মহিউদ্দিন দেখতে ছুটে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও সেখানে আছেন। নগরী থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাও ঢাকায় ছুটে গেছেন।
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার পিতার সুস্থতা কামনায় চট্টগ্রামবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন স্কয়ার হসপিটাল থেকে গতরাতে ফোনে বলেন, ‘চট্টগ্রামের জন্য মহিউদ্দিনকে বেঁচে থাকা দরকার। আমরা সকলে উদ্বিগ্ন। তিনি সুস্থ হয়ে যেন চট্টগ্রামবাসীর কাছে ফিরে যেতে পারেন, সেই কামনা করছি।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘সাধারণ মানুষ আসলেই মহিউদ্দিন ভাইকে চট্টগ্রামের অভিভাবক মনে করে। তাই তো স্টেডিয়ামে উনার জন্য নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষের চোখ থেকে পানি পড়েছে। এই চট্টলবীর আরও অনেক দিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুক।
স্কয়ার হসপিটালে ছুটে যাওয়া নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাইয়ের জন্য শুধু দলীয় নেতা-কর্মীরা নয়, পুরো চট্টগ্রামবাসী চিন্তিত। কারণ তিনি সারাটা জীবন জনগণের জন্য রাজনীতি করে এসেছেন। তাই কেউ তার অবর্তমান চিন্তা করতে পারছে না।
উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পরিবার। বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত রাতে প্রথম দফায় ডায়ালাইসিস সম্পন্ন হয়েছে। শারিরীক অবস্থার অগ্রগতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। সকালে এসব কথা বলেন তার ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেন, তার বাবার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে এবং ডাক্তার জানিয়েছেন তিনি আশঙ্কামুক্ত। প্রাথমিকভাবে শারিরীক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে হৃদরোগ জনিত সমস্যায় তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা। এখন প্রাথমিকভাবে শারিরীক অবস্থার অগ্রগতির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। সবার সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি ।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ইতোপূর্বে সিঙ্গাপুরে ডাক্তার দেখানো হলেও এবার ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার ওয়াহাবসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বলেও জানান মহিবুল হাসান চৌধুরী।
এদিকে তিনি রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা তাকে দেখতে আসেন। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে দেখতে আসেন। এসময় তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতেও সংশ্লিষ্টদের বলেন। এদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন তাকে দেখতে আসেন।
এছাড়া সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নজরুল ইসলাম বাবু, মঈনুদ্দিন খান বাদল, দিদারুল আলম, এবিএম ফজলে করিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা হাসপাতালে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৭:৫৮ ৭৪৯ বার পঠিত