গাঁধার সঙ্গে তুলনার পাশাপাশি সুশীল সমাজের কড়া সমালোচনা করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাঝে মাঝে সুশীলদের আচরণ দেখে গাধার কথা মনে পড়ে যায়। তারা আমাদের দেশের জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। ভোটে রাজনীতি করতে হলে জনগণের ভোট পেতে হয়। ভোট পেয়ে এই সংসদে বসতে হয় ও সরকার গঠন করতে হয়। কিন্তু এই একটা শ্রেনী আছে তারা কিন্তু জনগণের কাছে যেতে চায় না। তারা ক্ষমতার বাকা পথ খুঁজে।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে তিনি আরো বলেন, কিছু লোক সব সময় থাকে যদি অবৈধভাবে বা মার্শাল ‘ল’ জারির মাধ্যমে কোনো পক্ষ ক্ষমতায় আসে আর সেই সুযোগে যদি তাদের গুরুত্ব বাড়ে। আর ক্ষমতাধররা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য কিছু লোককে খুঁজে নেয়। আর কিছু লোক আছে নিজেদেরকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করতে প্রস্তুত থাকেন। তারা গায়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে বসে থাকেন ’ইউজ মি’ অর্থাৎ আমাকে ব্যবহার কর। এটা খুবই লজ্জার।
সরকারী দল আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি গাঁধার গল্প শোনান। গল্পে তিনি বলেন,একটা সার্কাস পার্টিতে অনেক কিছু থাকে। সার্কাস পার্টিতে একটা মেয়েকে দঁড়ি ধরে ঝুঁলিয়ে সার্কাস দেখায়। ওই মেয়েটাকে কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে কিছুতেই পারছে না। যখন কিছুতেই করতে পারছে না, তার শিক্ষক বা তার মালিক ক্ষেপে গেছে। ক্ষেপে গিয়ে বলল, তুমি যদি এরপর না পার, ওই যে সার্কাস পার্টিতে একটা গাঁধা বসে আছে, ওই গাঁধার সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দেব। ওই কথা শোনার পর গাঁধা খুব আশায় বসে থাকে। সেই দঁড়ির দিকে তাকিয়েই থাকে। তার আশা, ওই মেয়েটা কখন ছিঁড়ে পড়বে, আর ওই গাঁধার সঙ্গে তার বিয়ে হবে। গাঁধা সেই আশা নিয়ে সার্কাস পার্টিতে বসে আছে। এভাবে দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে। গাঁধাটা একসময় অথর্ব হয়ে গেছে। কিন্তু সে বসেই আছে, সে আর কোথাও যায় না। ওই সার্কাস পার্টিতে বসে থাকে দঁড়ি কবে ছিঁড়বে, আর তার একটা ভাল সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে হবে। সেই দঁড়িও ছিড়ে না, গাঁধার বিয়েও আর হয় না। তবে আমি কাউকে গাঁধা বলছি না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ সবাই জ্ঞানী,গুণী শিক্ষিত, অনেক শিক্ষিত বিএসসি উচ্চডিগ্রিধারী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন। আন্তর্জাতিক অনেক কাজ তারা করেন তাদের আমি গাঁধা বলছি না, তবে তাদের আচারণ দেখে খুব স্বাভাবিকভাবে ওই গাঁধার কথা মনে পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের জন্য দুর্ভাগ্য। কিছু লোক আছে চোখে দেখেও দেখে না, কানেও শোনে না। যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তারা সরকারের কোনো উন্নয়নই দেখতে পায় না। গানেই তো আছে হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। তাদের ব্যপারে কোন কথা বলে লাভ নেই। আমাদের লক্ষ্য একটাই মানুষ ভাল আছে কি না? তিনি বলেন, আমি জানি না সুশীলের ব্যাখাটা কি, অর্থ কি বা কিভাবে কোন তত্বের ভিত্তিতে তারা সুশীল, সেটা তখন দেখা দেয় যখন তারা কোন কিছু দেখেনও না শোনেনও না, বোঝেনও না। তারা সুশীল না অসুশীল তা আমি জানি না। তিনি আরো বলেন, একটা শ্রেণী আছে তাদের খুব আকাংখা ক্ষমতায় যাবার। তাদের আকাংখা একটা পতাকা পাবার। তবে তারা জনগণের কাছে যেতে চান না। যদি আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করতে চাই, গণতন্ত্রকে আমরা গুরুত্ব দেই, গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শুরু হয়। তা এখনো অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, সুশীলরা সবসময় একটা আশায় বসে থাকে এধরনের অসাংবিধানিক পথে যদি কোনো ক্ষমতাধর আসে বা ইমারজেন্সি দিয়ে অধবা মার্শাল ‘ল’ দিয়ে যদি কেউ ক্ষমতা দখল করে তখন তাদের একটা গুরুত্ব বাড়বে। তারা তখন একটা পতাকা পাবে এবং ক্ষমতায় যেতে পারবে। তাদের এই যে না দেখাটা এটাও কিন্তু ওই ধরনের একটা অসুস্থতা তারা যেন তাদের দৃষ্টি রয়ে গেছে অবৈধ ক্ষমতা দখলের ভেতরে।
অপর এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিয়েই চলতে চাই। তবে একটা কথা আছে। কবি বলেছেন ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল একলা চলরে….একবার নয় বারবার বলেছেন একলা চল, একলা চল, একলা চলরে। তবে একজনকে তো হাল ধরতে হবে। তিনি বলেন, গাড়ি একজনই চালায়, তবে সঠিকভাবে চালাতে হবে। নৌকা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য একজন মাঝি লাগে। সেই মাঝি যদি সঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে চায় বা পারে তাহলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে। আর যদি সঠিকভাবে না চালাতে পারে তাহলে কিন্তু মাঝখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো আর কেউ এককভাবে করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, একজনকে তো উদ্যোগ নিয়ে, ভালো-মন্দ সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েই চলতে হয়। তিনি আরো বলেন, এই দেশটা আমাদের, দেশের সমষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া যেন প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছায়। তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছাক সেটাই আমরা চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আজকের এই অর্জন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। আমরা সবাই মিলে কাজ করেছি বলে সম্ভব হয়েছে।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদল গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছে, আলোচনা করছে। অন্তত বিএনপি থাকতে যখন বিরোধী দলে ছিল তখন যে খিস্তি-খাউর ছিল, হতো যেসব আলাপ-আলোচনা হতো কান পেতে শোনা যেত না। এখন সেসব নেই। অত্যন্ত গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনা করছে বিরোধীদল। সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছ থেকে সর্বতভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি। উন্নয়নের ফসল গ্রাম পর্যায়ে পাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেই সংবিধানে মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা বলা আছে, সেগুলো যেন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেই কাজই করছি।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে কারিগরি শিক্ষা ও কম্পিউটার শিক্ষার বিস্তার, শিল্পায়ন ও জনশক্তি রপ্তানি এবং ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশে বিশাল জনসংখ্যা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। তবে এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে চান তারা। এই জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৫:৪৫ ৪৩৭ বার পঠিত