নিয়মেই মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২০১৯ সাল। আর নতুনের আশায় মানুষ বরণ করে নিয়েছে ২০২০ সালকে। কালের বিবর্তনে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে পড়া ২০১৯ সালে কক্সবাজার জেলায় সংঘটিত হয়েছে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল সারাদেশের জন্য আলোচিত। বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশের পর মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১০২ ইয়াবাকারবারির আত্মসপর্মণ ছিল বেশ আলোচিত। তবে ইয়াবাকারবারিদের তালিকায় উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নাম থাকলেও অবশেষে তার আত্মসমপর্ণ না করার বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
এদিকে ২০১৯ সালে কক্সবাজারের সবচেয়ে আলোচিত কয়েকটি ঘটনার মধ্যে মরণ নেশা ইয়াবা, জলদস্যু, সমুদ্রসৈকত এলাকায় বেপরোয়া দখল ও পাহাড় কাটা। এই অপকর্মগুলোর মধ্যে ইয়াবা ও জলদস্যু দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাণপণ প্রচেষ্টা দেখা গেছে। যে কারণে মাদক নির্মূলে এই বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা গেছে ১৬৭ জন।
পাশাপাশি জেলার পুলিশের তালিকাভুক্ত ১১৫১ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে টেকনাফ পাইলট স্কুল মাঠে সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা ও ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে ২৪ গডফাদারসহ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী।
তৎমধ্যে ছিল উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাইসহ ঘনিষ্ঠ আট আত্মীয়। এসবের পাশাপাশি এ বছর উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ধাওয়া খেয়ে দেশ ছেড়েছে অন্তত কয়েক শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী।
সূত্রমতে, তুলনামূলক মরণ নেশা ইয়াবার প্রভাব কমলেও এখনও পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়তই আসছে ইয়াবা, যা পুরোপুরি দমনে ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জলদস্যু ২০১৯ সালে বঙ্গপোসাগরের কক্সবাজার জোনসহ পার্শ্ববর্তী স্থানে বেপরোয়াভাবে বেড়ে যায় জলদস্যুদের তাণ্ডব। প্রতিদিন ঘটে ডাকাতি, খুনসহ নানা অঘটন। পরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নানা মিডিয়ার লোকজন।
একপর্যায়ে সফলতাও অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ১২ জলদস্যু বাহিনীর ৯৬ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে কক্সবাজার জেলা পুলিশ এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সৈকত এলাকায় দখল
বিগত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় চলে বেপরোয়া দখল। সরকারি কোটি কোটি টাকার সম্পদ দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি করে দখলবাজরা। গেল বছরের শুরুতে বর্তমান সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর দখলবাজি আরও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সারা বছর সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ও লাবনী পয়েন্ট চলে দখলবাজি। প্রশাসন সকালে উচ্ছেদ করলে রাতে পুনরায় চলে দখলের মহোৎসব।
এ ছাড়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে চারবার উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েও উচ্ছেদ কার্যকর করতে পারেনি সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের কয়েকশ অবৈধ স্থাপনা।
পাহাড় কাটা
কক্সবাজার ও সদর উপজেলায় সারা বছর আলোচনায় ছিল পাহাড় কাটা ও পরিবেশ বিপর্যয়। কিন্তু বছরের শেষ সময় এসেও তা দমন করা যায়নি। শহরের কলাতলী, বৃহত্তর পাহাড়তলী, চন্দ্রিমাসহ আশপাশ এলাকায় এবং সদর উপজেলার খুরুশকুল ও পিএমখালীতে চলে পাহাড় কাটার মহোৎসব। সূত্রমতে, পরিবেশ অধিদফতরের অবহেলা ও অব্যবস্থপনার কারণে দমন করা যায়নি পাহাড় খেকোদের।
এদিকে সারা বছর ছোটখাটো অনেক বিষয় ও ঘটনা আলোচনা এবং সমালোচনায় থাকলেও সব কিছুর শীর্ষে ছিল মাদক আর জলদস্যুতা।
মাদক আর জলদস্যু দমনে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম জানান, ২০১৯ সালে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান ছিল, যা এই বছরও থাকবে।
রুটিনমাফিক কাজের মাধ্যমে মাদক আর জলদস্যুতা দমন করা হবে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা বেঁচে গেছে। আর যারা আত্মসর্মপণ না করে এখনও গা ঢাকা দিয়ে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের রক্ষা হবে না। বেঁচে থাকলে আইনের আওতায় আসতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মতে, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও জলদস্যুদের কোনো নিস্তার নেই। আত্মসমর্পণ করে ভালো হয়ে যেতে হবে। নয়তো আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মহেশখালীর জলদস্যুদের মতো দেশের অন্যসব এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী ও জলদস্যুদেরও আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হবে। যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, শুধু টেকনাফ-মহেশখালী ও কক্সবাজার নয়, গোটা দেশকে শিগগিরই ইয়াবা ও জলদস্যুমুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৫:২১ ১৯৮ বার পঠিত
