
করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত ব্যক্তির দাফন ও জানাজার সময় ‘করোনা (ঈঙঠওউ ১৯) রোগে মৃত ব্যক্তির মৃতদেহ নিরাপদভাবে দাফন বা সৎকার ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেজিওর’ অনুসরণ করার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইতিবাচক মত প্রদান করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের সাথে মতবিনিময় করে উক্ত নির্দেশনার বিষয়ে শরীয়তের বিধানও অনুসরণ করা হয়েছে।
শুধু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি নন, আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগে মৃত ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা ধোয়ার সময় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার প্রতি সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা সন্দেহভাজন কেউ মারা গেলে মৃতদেহ সরানো, সৎকার বা দাফন শুরুর আগে অবশ্যই সরকারের রোগতত্ত¦, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) কে জানাতে হবে। চার সদস্যের একটি দল সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ সৎকার বা দাফনের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। কোথায় কবর দেওয়া হবে, সেটিও ঠিক করে রাখতে হবে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মরদেহ গোসল করানো যাবে না উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিবারের অনুরোধ থাকলে মরদেহ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড়ের জন্য অনুরোধ থাকলে সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেওয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন, তাঁদের অবশ্যই সুরক্ষা পোশাক পরে থাকতে হবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, মৃতদেহ সৎকারের জন্য মৃতদেহের সব ছিদ্রপথ (নাক, কান, পায়ুপথ ইত্যাদি) তুলা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো তরল গড়িয়ে না পড়ে। এরপর সংক্ষিপ্ত রুটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মৃতদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যেতে হবে।
পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যাত্রাকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মৃতদেহটি দাফন পরিচালনাকারী দলের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়িতে দু’টি অংশ থাকতে হবে, যাতে চালক ও পরিবহন কামরার মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক কাচ বা প্লাস্টিকের আবরণ থাকে। পরিবহনের পর ব্যবহৃত বাহনটি জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এ সময় জীবাণুমুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে। দাফনের সময় মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগটি কখনোই খোলা যাবে না।
দাফনের পর কবর বা সমাধিস্থানটি ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি দাফন করা স্থানের আশপাশ উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন, সেই স্থানটিও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মৃতদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনায় সন্দেহভাজন কারও মৃত্যু হলেও সমান সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ কখনোই ময়নাতদন্ত করা যাবে না। আর মৃতদেহ পোড়ালে দেহাবশেষ বা ছাই থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না।
এ বিষয়ে জনমনে কোনো বিভ্রান্তি, গুজব বা শঙ্কা যাতে না ছড়াতে পারে সেজন্য সঠিকভাবে সকলের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মীবৃন্দ, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকবৃন্দ-সহ সকল মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনগণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৮:২৩ ২৫৪ বার পঠিত